জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না: মৎস্যমন্ত্রী

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম

এবছর ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে বলে জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘ইলিশ বিনাশ হয় না, ও শিফট হয়।’ তিনি বলেন, এবার জলবায়ুর পরিবর্তন ও অন্যান্য অনেক কারণে কিছু কিছু নদী এলাকায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য জায়গায় কিন্তু ইলিশের সংখ্যা অনেক, ব্যাপক আকারে ইলিশ ধরা পড়ছে। সুতরাং বাসা বা আবাসস্থল পরিবর্তন করলেও ইলিশ কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২১ উপলক্ষে শনিবার (২৮ আগস্ট) মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। এসময় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা প্রজাতির মাছের নিজস্ব একটা চরত্রি আছে। কোনো মাছ আছে গভীর জলে না থাকলে সে মাছ বিকশিত হয় না। কোনো মাছ আছে একটু গভীরে গেলে ভেসে উপরে উঠতে পারে না। ইলিশের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে।

তিনি বলেন, কোনো কোনো জায়গায় নদীর খনন বা নদীর ভাঙনে স্রোতের গতি প্রকৃতি এতোটাই পরিবর্তিত হয় ইলিশ সেখানে কম্ফোর্ট ফিল (আরামদায়ক) করে না। আমাদের ড্রেজিং, নদী ভাঙন আবার নদীতে কখনো কখনো রাসায়নিক দ্রব্য দেওয়ার কারণে অনেক সময় আবাসস্থল পরিবর্তন করে। এসময় উদাহারণ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছিলেন কোনো কোনো ইলিশ মাছ ৩-৪ লাখ ডিম দেয়। ওই ডিম যেখানে গিয়ে ঠিকিয়ে থাকে ওই জায়গায় যদি কোনো লঞ্চ থেকে পোড়া মবিল যায় তাহলে মবিলের একটা ফোটা ওখানে বিস্তৃতি হয়ে যায়, ইলিশের ডিমটা এতো সেনসেটিভ ওই কয়েক লাখ ডিম কিন্তু ওখানেই বিনাশ হয়ে যায়। কাজেই নদী ব্যবস্থাপনার সাথে ইলিশ খুবই সম্পৃক্ত।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী বলেন, ইলিশ খরস্রোতা জায়গা বা তার জন্য উপযুক্ত জায়গা না হলে ইলিশ বিনাশ হয় না, শিফট হয়। পাখিকে বাড়ি থেকে উড়িয়ে দিলে পাখি বিনাশ হবে না ও যেখানে নিরাপদ আশ্রয় পাবে সেখানে যাবে। এবার জলবায়ুর পরিবর্তন বা অন্যান্য অনেক কারণে কিছু কিছু নদী এলাকায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য জায়গায় কিন্তু ইলিশের পরিমাণ ব্যাপক আকারে ধরা পড়ছে। বাসা পরিবর্তন করলেও ইলিশ কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে।

নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে। তারা গবেষণা করে দেখবে কেন কি কারণে ইলিশ স্থান পরিবর্তন করছে। গবেষণা লব্ধ নির্দেশনা দেবে নদী খননে যারা জড়িত অথবা যেখানে আমরা অভয়াশ্রম করেছি সেখানে ডিস্ট্রাব হলো কি না অথবা অন্য কোন কারণে ডিস্ট্রাব হলো কি না সবগুলো বিশ্লেষণ করে আমাদের কাছে দিলে আমরা কাজ করব। তবে আমরা চাই মিষ্টি পানির ভেতরে ইলিশ ফিরে আসুক। তবে এর কিন্তু একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে, যেখানে নিরাপদ আশ্রয় পাবে সেখানে থাকে।

ইলিশ রফতানি করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ রফতানি একেবারেই বন্ধ রয়েছে, তা কিন্তু না। ইলিশ বিভিন্ন উৎসবে রফতানি হয়। তবে ব্যাপক হারে ইলিশ রফতানি সুখকর হবে না।

তিনি বলেন, ইলিশ হচ্ছে বাঙালির নিজস্ব স্বাদের শ্রেষ্ঠ স্বাদের মাছ। আমি চাই প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি মানুষ ইলিশের স্বাদ পাক। সেজন্য আমরা ইলিশকে নীতিগতভাবে ওইভাবে রফতানির পক্ষে না। কিন্তু অনেক সময় রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান বিভিন্ন রাষ্ট্রে সৌজন্যমূলক পাঠানো এভাবে ইলিশ যায়। আমি যদি সর্বোচ্চ বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রফতানিতে উদ্ভুদ্ধ করি তাহলে কিন্তু অনেকে ইলিশ পাবেন না, গ্রামের মানুষ ইলিশ পাবে না। এই জায়গায় নিজের স্বাদটা নিজেরা একটু ভালো করে নিতে চাই। সেই লক্ষ্যে ব্যাপক হারে ইলিশ রফতানি করতে চাই না। আবার যদি দেখা যায় ব্যাপক ইলিশ উৎপাদন হয়েছে আমাদের চাহিদা মেটানোর পর ভালো হলে রফতানি করতে পারব।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোল বোস মনি ও মো. তৌফিকুল আরিফ, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ, বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দফতরের উপপরিচালক শেফাউল করিম, নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।