তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি-ফসলি জমি

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় নদীর ১৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। মাঠ, রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ পাকা রোপা আমনের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় গো-চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে ভুগছে গবাদি পশুপাখিও।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সূত্র জানায়, যমুনা নদীর ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, পোড়াবাড়ী, মথুরা ও আরিচা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। এ ছাড়া ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে, ব্রহ্মপুত্র চিলমারীতে, আত্রাই বাঘাবাড়ীতে, ধলেশ্বরী এলাসিনে ও পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মায় পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই তিন নদীর পানিই বাড়তে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মেঘনা অববাহিকার মনু ও খোয়াই ছাড়া প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর, বাসাইলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।

বিজ্ঞাপন

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। নিমজ্জিত হচ্ছে ফসলি জমি। বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে গেছে শিশুয়া-বাগমারা সেতুর ২০ মিটার সংযোগ সড়ক। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা।

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নে যমুনা নদীর কূল উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব দিকের লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাট ও পাশের সিদ্দিক কাজীরপাড়া গ্রাম এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে স্থানীয় জামে মসজিদসহ আট পরিবারের বসতভিটা।

ভারি বর্ষণ আর দফায় দফায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বাড়া-কমার সঙ্গে নদীভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তাপারের মানুষ। অব্যাহত ভাঙনে তিস্তা পাল্টে দিয়েছে গঙ্গাচড়ার বিনবিনা চরের মানচিত্র। ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি চার হাজার পরিবার।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার বিভিন্ন এলাকার নিচু জমিতে পানি জমে আউশ, আমন ধান ও সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নীলফামারীতে তিস্তার বাঁধ ভেঙে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নে চার গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অব্যাহত ভাঙনের কবলে ওই ইউনিয়নের কুটিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হুমকির মুখে রয়েছে। গতকাল শতাধিক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে।

সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ১২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি স্থিতিশীল ছিল। গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলায় আবারও বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৯টি উপজেলার ২৩০টি নদী সংলগ্ন চর ও গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ। তিস্তা, দুধকুমর, গঙ্গাধরসহ জেলার সবকটি নদীর পানিও বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানিবন্দি মানুষের অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। বিছিন্ন হয়ে পড়েছে চরগুলোর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।