ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুবলীগ কর্মী গ্রেফতার, প্রতিমন্ত্রীর ক্ষোভ
জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফেসবুকে নির্মলেন্দু গুণের কবিতার লাইন পোস্ট করে নিজ দলের নেতার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সেলিম মিয়া নামে এক যুবলীগ কর্মী।
যাচাই ছাড়াই মামলা নিয়ে নিজ দলের কর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
যে কাব্যাংশ লেখার কারণে যুবলীগ কর্মী মামলার শিকার হয়ে কারা ভোগ করছেন সেটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবি নির্মলেন্দু গুণের মুজিব কাব্যের ‘আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো ’ নামক কবিতার শেষ লাইন।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রৌমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি মামলার বাদী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সাংবাদিকদেরও একহাত নেন প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্রাহাম লিংকন, রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান, রৌমারী থানা পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা লিখে পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিজ দলের কর্মীকে গ্রেফতারের সমালোচনা করে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা প্রশাসন আমার দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব লাগায় দিচ্ছেন। আমার ছেলেকে চালান করে দিলেন আমাকে বললেন না। কী লিখেছে ছেলেটা, আপনারা কী লেখাপড়া করে এসেছেন? আপনার এসপিকে বলেন!’
মাদক ব্যবসায় বিরোধিতা করায় পুলিশ ওই যুবলীগ কর্মীর (সেলিম মিয়া) বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওসি সাহেবদের লাগছিল। তাকে (যুবলীগ কর্মী) মামলায় ফাঁসায় দিছে। কেন? সেতো লিগ্যাল আপনি দেখবেন না!’
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানে মাদকের জন্য যদি বলি ওকে ধরেন, তখন বলেন স্যার প্রমাণ পাবো কই স্যার? যদি বলি ওকে ধরেন, ওই বিএনপির নেতাটাকে- তখন প্রমাণ খোঁজেন!’
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যার যেখানে যে কাজ আছে সেটা যদি না পাই তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। যতটা ভদ্র, অতটা অশান্ত।’
মামলার বাদী ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দাঁতভাঙার এক ছেলে নির্মলেন্দু গুণের কবিতার একটা লাইন (পোস্ট) দিছে। আমার আর এক যুবলীগের ছেলে (মামলার বাদী) অশিক্ষিত! সে যে মামলা দিছে আমাকে বলে নাই।’
কবিতার লাইন লেখার অপরাধে যুবলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেফতার করার ঘটনায় মামলার বাদী নিজ দলের কর্মী ও পুলিশকে একহাত নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এগুলো লেখেন না। সাংবাদিকরা সাবধান হয়ে যাবেন। খালি লেখালেখি করেন ভ্রান্ত। ভালো লেখার অভ্যাস করুন না হলে আপনাদেরও দেখবো আমি।’
ব্র্হ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুণর্ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী জানান, সব জায়গায় যোগাযোগ করে এ বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক চীনের সহায়তায় সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। এছাড়াও করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ও সফলতারও প্রশংসা করেন এই সংসদ সদস্য।
উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজ ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন রৌমারী উপজেলার যুবলীগ কর্মী সেলিম মিয়া। তার সেই পোস্টকে বিকৃত করে ‘বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা’ করার অভিযোগ এনে সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রৌমারী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাইদুল ইসলাম মিনু। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কুড়িগ্রাম কারাগারে রয়েছেন যুবলীগ কর্মী সেলিম।
সেলিম মিয়া উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের খেতারচর গ্রামের মৃত আবুল হাসেম সরকারের ছেলে। তার বাবা প্রয়াত আবুল হাসেম সরকার ১২ বছর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।