চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মানদীর চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরিভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন থামেনি। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের আলীপুর, খারিজাগাতি ও নিমতলা গ্রামের পাড় ভাঙছেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সবশেষ ১৯৯৬ সালের দিকে এই এলাকায় এমন ভাঙন হয়েছিল। এরপর প্রতিবছর ভরা মৌসুমে একহাত-দুইহাত ভাঙত। ২৫ বছর পর এবার ইতোমধ্যে ১০০ থেকে ২০০ ফুট পর্যন্ত ভেঙে নদীতে পরিণত হয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা গ্রাস করেছে এলাকার অন্তত ১০টি বাড়ি। হুমকির মুখে আছে নদীকোলের আরও অন্তত ১৫টি বাড়ি ও স্কুল।
শুক্রবার সকালে খারিজাগাতি ও নিমতলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের বাসিন্দারা নদীপাড়ের গাছ কেটে নিতে ব্যস্ত। খারিজাগাতি গ্রামের গোলাম রসুল নামের এক ব্যক্তি ব্যস্ত তাঁর পাকাবাড়ির দরজা-জানালা খুলতে। গোলাম রসুলের বাড়ি থেকে দুই হাত দূরে এসে গেছে ভাঙন।
নিমতলা গ্রামের গৃহবধূ আইরিন খাতুনের বাড়িও ভাঙনের মুখে। তিনি বললেন, ‘নদীকে এখন তিনভাগ করলে আগে দুইভাগই ছিল আমবাগান। এবার আমবাগানের পুরোটাই নদীতে হারিয়ে গেছে। বাগানের ভেতর ভেতর ১০টি বাড়ি ছিল। চোখের পলকে বাড়িগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে।’
আইরিন খাতুনের শ্বাশুড়ি আশরাফুন্নেসা বেগম বলেন, ‘২৫ বছর পর এই ভাঙন ঘুরেছে। ভাঙনের চাপের ওপর বাড়ি। যে কোন সময় নেমে যেতে পারে। তিনি বলেন, আর ভিটামাটি কিছু নাই। এইটুকুই জমি। এটা ভেঙে গেলে কোথায় যাব, কে জায়গা দিবে, সেই চিন্তায় আছি।’
আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীচরণ মণ্ডল জানান, এখনকার নদীর মাঝখানটিও ২৫ বছর আগে গ্রাম ছিল। গ্রামের মাঝ দিয়ে ছিল একটি রাস্তাও। ১৯৯৬ সালে সব ভেঙে যায়। এরপর তেমন ভাঙেনি। এবারই তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ভয়ে চার কিলোমিটার এলাকার মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার বলেন, এবার পদ্মায় পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙতে শুরু করে। তখন তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শনে যান। ইউএনও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পাউবোকে একটা চিঠি দেন। এর পরদিন পাউবো কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনের পর বালুর বস্তা ফেলতে শুরু করেন।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ বলছে ৫ হাজার, কেউ বলছে ১০ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। আসলেই কত ফেলা হয়েছে তা আমি জানি না। তবে যা ফেলা হয়েছে তা অপর্যাপ্ত। এখনও ভাঙছে। আমরা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু পাউবো কর্মকর্তারা হতাশার সুরে বলেছেন, প্রকল্পের প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানোর পর তদবির করার লোক নেই। সে কারণে তাঁরা এগোতে পারবেন কি না জানেন না। আমরা চাই, এলাকাটিকে বাঁচাতে যেন স্থায়ী বাঁধ করা হয়।’
রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘এখনও ভাঙন অব্যাহত আছে। আমরা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তবে কত বস্তা বালু ফেলা হচ্ছে তা কাগজপত্র না দেখে বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। শফিকুল ইসলাম জানান, গোদাগাড়ীর ওই চার কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছেন। তবে সেখান থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।