ভোগান্তি সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ছে টিসিবির পণ্যে
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও স্পটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে মানুষ। এমনকি ভোগান্তি শেষে পণ্য না পেয়েও পরের দিন ঠিক আগের মতই পণ্য কিনতে আসছেন তারা। হঠাৎ চলতি পথে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা ট্রাক দেখেই যাত্রা বিরতি করে সিরিয়ালে দাঁড়াচ্ছেন পণ্য কেনার জন্য অনেকে।
সরেজমিনে শনিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর নির্ধারিত বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই ক্রেতারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন । হঠাৎ বৃষ্টিতে শরীর ভিজে গেলেও জায়গা হারানোর ভয়ে লাইন থেকে সরছেন না তারা। অথচ পণ্য নিয়ে দুপুর গড়িয়ে সেই ট্রাক আসে সন্ধ্যার একটু আগে। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রচন্ড গরমে অনেকে লাইনের ঠেলাঠেলিতে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। ট্রাকে চাহিদার চেয়ে পণ্য কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা যায়।
তেজগাঁও এলাকার ছাপড়া মসজিদের সামনে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনার আশায় লাইনে দাঁড়ানো ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম বলেন, দুপুর ২টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি পণ্য কেনার আশায়। এখন ৪টার বেশি বাজে, কিন্তু ট্রাক আসার খবর নেই। কখন আসবে তাও জানি না। আসরের পর আসে। আছিতো দাঁড়িয়ে, দেখি পণ্য নিতে পারি কিনা।
তবে ট্রাকে চাহিদার তুলনায় পণ্য অনেক কম থাকে। এজন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে পণ্য কিনতে পারে না বলে জানান তিনি।
দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আশরাফুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, জানেই তো হ্যামরা ম্যালা মানুষ আসমু সস্তা বুইঝ্যা, হেরা মাল আনতে পারে না। দাঁড়াইয়া রাখবো আবার হঠাৎ কইবো শেষ যান গা।
হুড়োহুড়ি করে লাইনে এসে পণ্য কিনতে পেরে আনন্দিত রফিক নামে এক যুবক বলেন, দেখছেন তো কেমন, ওই ভাবে না গেলে পেতাম না। কি পরিমাণ পণ্য বরাদ্দ থাকে, আর কি আনে। আসার আগেই বেইচ্যা ফেলাইলে কে ধরবো। পাইছি লইছি।
তবে ট্রাকের ওপর পণ্য মেপে দেওয়ার কর্মচারী রাসেল বলেন, আমরা আমাদের টাইমে আসি। পর্যাপ্ত পণ্য না পেলে আমরা কিভাবে দিব। চাহিদা আছে প্রতিদিন আরও এই পরিমাণ পণ্য হলেও মানুষ বেশি হবে। অনেকে ঝামেলা করে সব আইটেম নিতে চায় না।
বাজারে বর্তমানে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। টিসিবির ট্রাকে সে তেল মিলছে ১০০ টাকা লিটার। এতে ২ লিটার তেলে প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা সাশ্রয় হয়। ডাল বাজারে মানভেদে ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি। টিসিবির ট্রাকে ডাল পাওয়া যায় ৫৫ টাকা কেজি। চিনি বাজারে ৭৬ থেকে ৮০ টাকা কেজি। টিসিবির ট্রাকে ৫৫ টাকা কেজি। জনপ্রতি টিসিবির ট্রাক থেকে ২ লিটার তেল ২ কেজি ডাল ও ২ কেজি চিনি কিনতে পারেন। এতে অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা সাশ্রয় হয়।
দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখনো অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় টিসিবির পণ্য কিনতে ছুটছে মানুষ।
টিসিবি সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীসহ সারাদেশে টিসিবি নিত্যপণ্য সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি ও পেঁয়াজ অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এ কার্যক্রম চলছে। টিসিবির ট্রাক সেলে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি, মসুর ডাল ৫৫, পেঁয়াজ ৩০ টাকা এবং ১০০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার নিতে পারছেন।