লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণ নারীদের তৈরি বাহারী টুপির কদর বিদেশে

  • মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

কাপড় আর সুইসুতা দিয়ে গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি হচ্ছে বাহারী টুপি। তাদের নিপুন হাতে সেটি পায় দারুণ শিল্পরূপ। কাপড়ের এসব টুপি নারীরা তৈরি করছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। লক্ষ্মীপুরের সদর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নারীদের হাতে বুনন করা এ টুপি যাচ্ছে ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে।

এতে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কয়েক শত নারী। টুপি বুনে আয় করা অর্থ দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানোসহ যোগান দিচ্ছেন সংসারেও। তবে সরকারি বা কোন দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় আরো বহু নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনরা ।

বিজ্ঞাপন

ওমান, সৌদিআরবসহ যেসব দেশে লক্ষ্মীপুরের গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি বাহারী টুপি যাচ্ছে সেসব দেশ কোথায়, কেমন, কত দূরে-এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই তাদের।

জেলার রামগতি পৌরসভার সাহাপাড়া, চরহাছান হোসেন ও পন্ডিত পাড়াতে এ কাজের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রায় শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী এসব না ভেবেই প্রতিদিন বুনে চলছে বাহারী টুপি।

বিজ্ঞাপন

তাদের হাতে কাজ করা টুপির খুবই কদর ওইসব দেশে। জানা যায়, নির্দিষ্ট নকশার ওপর নানা রঙের সুতায় তাঁরা যে টুপি বুনে চলেছেন, এই টুপি ওমানে ‘কুপিয়া’ নামে পরিচিত। সাধারণত ‘কেন্দুয়া’র (পাঞ্জাবির মতো পোশাক) সঙ্গে কুপিয়া পরেন সেখানকার পুরুষেরা।

সদর উপজেলার মিয়ারবেড়ী, পূর্ব চরমনসা ও কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ও চরফলকনের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সংসারের কাজের ফাঁকে মহিলারা ও লেখা-পড়ার পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা টুপি বুনে ব্যস্ত সময় পার করছে। একই চিত্র রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ও। এসব এলাকায় এ টুপিকে ওমানি টুপি বলা হয়।

কথা হয় কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট এলাকায় ইয়াসমিনের সাথে। তিনি জানান, জীবনের খুব অল্প বয়স থেকে মায়ের কাছ থেকে শিখে টুপি বুননের কাজ শুরু করেন। তার অধীনে এখন ৫-৭’শ মহিলা টুপি বুনের কাজ করেন। তিনি আলেকজান্ডার বাজারের মহাজন ফরিদ ও আশরাফের কাছ থেকে সুতা-কাপড় এনে দেন এসব মহিলাদের। বুনন শেষে প্রতি মাসে ৪০-৫০টি টুপি মহাজনের কাছে বুঝিয়ে দেন তিনি। প্রতিটি টুপি থেকে পান ২০-৩০ টাকা।

সদর উপজেলার পূর্ব চরমনসা গ্রামের আলমগীর ব্যাপারী বাড়িতে দীর্ঘ দিন থেকে টুপি নকশীর কাজ করছে সুমী, পান্না, পাখি, নুপুর, জোৎসনাসহ অনেকে। তারা বলেন, নিজেদের উদ্যোগে টুপি বুনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। একটি টুপি বুনতে সময় লাগে কারো তিন সপ্তাহ কারো চার সপ্তাহ। আর একটি টুপি বুনে পান ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তাদের অভিযোগ, যে দাম নির্ধারণ করে তাদের টুপির কাজ দেয় শেষে সে দাম দেয়া হয়না।

একই এলাকার মারজাহান, পারুল ও সুরমা জানান, এ এলাকায় ২০০ নারী টুপি তৈরির কাজ করেন। পার্শ্ববর্তী মিয়ারবেড়ী এলাকায় একই ধরনের টুপি বানানোর কাজে যুক্ত আরও প্রায় ২০০ নারী। টুপির নকশা, কাপড় ও সুতা-সবকিছুই সরবরাহ করা হয় তাদের।

নকশা অনুযায়ী হাতের কাজ করা একেকটি টুপির জন্য গ্রামের একেকজন নারীকে দেওয়া হয় ৭’শ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে হাতের কাজ অতি সূক্ষ্মভাবে করতে হয় বলে একজনের পক্ষে মাসে ১টি বা ২টির বেশি টুপি তৈরি করা সম্ভব হয় না। পারিশ্রমিকের তারতম্য হয় কাজের গুণ ও মান অনুযায়ী।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, টুপি তৈরির কাজে যুক্ত হওয়ায় মেয়েরা সংসারে কিছুটা হলেও আর্থিক সাহায্য করতে পারছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে এটা অনেক বড় ব্যাপার। এতে সংসারে নারীর মর্যাদা বাড়ছে। এ ধরনের কাজের ফলে পরিবার, সমাজ এমনকি দেশও উপকৃত হচ্ছে।

সচেতন মহল বলছেন, এ অঞ্চলের প্রায় সব বাড়িতেই টুপি বুননের কাজ করেন নারীরা। এতে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের আর্থিক সাহায্য করতে পারছেন তারা। তবে এসব নারীদের সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতায় এগিয়ে এলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তারা।

তাদের দাবি, সরকারি বা কোন দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় আরো বহু মহিলার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আরো প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব ।