রাজধানীতে শীতের আমেজ, জমে উঠছে হকার্স
শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। শীতের সাথে নিবিড় সম্পর্ক হলো শীতের পোশাকের সাথে। আর এই সময়টাতে রাজধানীর নিউমার্কেটসহ পুরো ঢাকা যেন থাকে শীতের পোশাকের দখলে। নতুন-পুরানো শীতের পোশাকের জন্য ভীড় জমে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু সব শ্রেণীর লোকদের।
রাজধানীর নিউমার্কেট, হকার্সসহ সব জায়গা ধীরে ধীরে দখলে যাচ্ছে শীতের পোশাকের। গতবারে করোনায় হওয়া লস কাটিয়ে উঠতে এবার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই একটু আগেই শুরু করেছেন শীতের বেচা কেনা। হকার্স ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্যও বাহারি ডিজাইনের সোয়েটার, জ্যাকেট ও চাদর তুলে সাজিয়েছেন দোকান। ক্রেতাও বাড়ছেন ধীরে ধীরে। জমে উঠছে শীতের বাজার।
সরেজমিন ঘুরে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অগ্রীম শুরু করেছেন এবার শীতের বেচা-কেনা। গতবছরের করোনার লস কাটিয়ে উঠতে আগে থেকেই শুরু করেছেন শীতের পোশাক বিক্রি। তবে গত করোনাপূর্ব শীতকালের তুলনায় ক্রেতা চোখে পড়েনি তেমন। পুরোদমে শীত আসার আগেই মুখোরিত হয়ে থাকবে এই এলাকা,এমনটি প্রত্যাশা করছেন শীতবস্ত্র খুচরা এবং পাইকারি বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের শীতের মৌসুমের ব্যবসাটা একটু অন্যরকম। আমাদের জন্য এবার বড় চ্যালেঞ্জ গত বছরের লস কাটিয়ে উঠা। গতবছরের অনেক শীতবস্ত্র আমাদের এখনও রয়ে গেছে, সেগুলো দিয়ে আমাদের অনেকে এবার ব্যবসা শুরু করেছি। ক্রেতা বাড়লে আশা করি আমরা আমাদের গত বছরের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
গাউছিয়া মার্কেট এলাকার ব্লেজার দোকানদার শাহীন বলেন, আমরা সপ্তাহখানেক আগ থেকে শীতের ব্লেজার বিক্রি শুরু করলাম। এখনও তেমন কাস্টমার পাচ্ছি না। শীততো মাত্র শুরু হলো। তবে সেই তুলনায় কাস্টমার অনেক। আমাদের শো রুমে ১৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকার ব্লেজার আছে। শীতের পুরোদম আসলে আমাদের জমজমাট বেচা-কেনা হবে আশা করি।
হকার্স মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় সব বয়সের রেডিমেইড ব্লেজার ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা আবার মানভেদে ৪ হাজার টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন পায়ের মোজা যেন না হলে চলেই না। হকার্স মার্কেটে ছোট-বড় সব ধরনের শীতের মোজা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে। ১-৩ বছরের বাচ্চার সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা করে। ১৫-২০ বছর বয়সের মেয়েদের সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে।
এছাড়া হকার্স মার্কেটে শীতের জিন্স সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ টাকা করে। আবার ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের শীতের পায়জামা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা করে। মেয়েদের শীতের ট্রাউজার বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে।
শীতবস্ত্র কিনতে আসা জাকির হোসেন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমি আমার জন্য এবং আমার বাচ্চার কিছু শীতবস্ত্র কিনলাম। প্রতিবছরই আমি কিনতে আসি এখানে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছরও তেমন কোন পরিবর্তন নাই। দাম আমার কাছে একই মনে হচ্ছে। তবে ক্রেতা এখনও খুব কম। আমরা একটু আগেই শীতবস্ত্র কিনি। পরে দাম বেড়ে যায়। শীত যত বাড়বে নিউ মার্কেট হকার্স এলাকা তত মানুষে ভরপুর হয়ে যাবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি থাকবে জমজমাট।
নিউ সুপার মার্কেটের আইডিয়া শো রুমের জাকির হোসেন বলেন, আমরা এখানে অনেকেই সিজনালী ব্যবসা করি। যেমন, ঈদ আসলে আমরা সব রেখে ঈদের পোশাক বিক্রি করি, গরমকাল আসলে গরমের কাপড় বিক্রি করি। আবার এখন শীত আসছে, আমরা শীতের কাপড় তুললাম। মোটামুটি কাস্টমারও আছে। যেহেতু শীত মাত্র শুরু হলো, আস্তে আস্তে কাস্টমারও বাড়বে। আমরা শীতকালে কখনও লস করি না। মোটামটি আমাদের পুষিয়ে যায়। এবার ভালো লাভ হবে আশা করি।
জাকির বলেন, দ্রব্যমূল্যের সাথে মূলত এসব বাড়তি কমতির সম্পর্ক। দ্রব্যমূল্যের দাম কমলে মানুষ বাড়তি টাকা দিয়ে মার্কেট করে। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লে আর বাড়তি মার্কেট করা সম্ভব হয় না। তাই দ্রব্যমূল্য যত নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমাদের ক্রেতাও তত বাড়বে বলে জানান জাকির।
সাদ্দাম হোসন নামক একজন শো-রুম ব্যবসায়ী বলেন, শীত এখনও পুরোদমে শুরু না হওয়াতে কাস্টমার কম। তবে এবার একটু প্রথম দিকেই আমরা শুরু করেছি। আশা করি এবার ভালো কিছু করার মাধ্যমে আমরা গতবারের লস কাটিয়ে উঠতে পারবো।
বাচ্চাদের শীতের জুতা বিক্রেতা মানিক বলেন, শীত শুরু না হলেও গত বছরের তুলনায় এবার ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে পুলিশের বাঁধার কারণে ঠিকমত বসতে পারছি না। যদি ঠিকমত এবার বিক্রি করতে পারি তাহলে গতবারের লস কাটিয়ে উঠতে পারবো। গতবার করোনার কারণে অনেক লস হয়েছে, বেকার ছিলাম। শীততো মাত্র শুরু হলো, তবুও ক্রেতা আছে। শীত পড়লে আরও বাড়বে।
শীতের পোশাক কিনতে আসা আলাউদ্দিন বলেন, এবার এখনও জম জমাট হয়ে উঠেনি শীতের বাজারের মার্কেটগুলো। তবে যে হারে শীত পড়ছে খুব শিগগিরই শীতের পোশাক কিনাতে ধুম বেজে উঠবে। আমি এক দাম একশ টাকা করে বিক্রি করা শীতের পোশাক কিনলাম ৫টা। যা আরও কয়েকদিন পর দাম বেড়েও যেতে পারে।
এবার হকার্স মার্কেট এলাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় ফুটপাতে দোকান খুব কম। যা বসে তাও পুলিশের চক্ষু আড়ালে। পুলিশ আসলে সরে যায়, আবার গেলে বসে। যখন বসে তখন পুরো রাস্তা জ্যাম হয়ে যায় এদের কারণে। বিশেষ করে ওভারব্রিজের চিত্র যেন খুব ভয়ানক। মানুষের পারাপার যেন অস্বস্তির ছায়া। গা ঘেঁসে পার হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। পুলিশ যখন থাকেনা, তখন পুরো ওভারব্রিজ দখল করে সরু পথ রাখে হকাররা। যার কারণে রাস্তার এপাশ-ওপাশে যাওয়া লোকেরা পড়ে দারুণ ভীড়ে।
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন ব্যবাসায়ী বলেন, ফুটওভার ব্রিজ পুরোটা হকাররা দখল করে রাখে। তাদের জন্য আমরা ব্যবসা করতে পারি না। এদের ভীড় ঠেলে কাস্টমার রাস্তা পার হয়ে মার্কেটে আসতে চাই না। এরা যতক্ষণ পুলিশ থাকে ততক্ষণ সরে থাকে, পুলিশ গেলেই আবার পুরো ব্রিজ দখল করে রাখে। এদের সংঘবদ্ধতা অনেক বড়। এদের বিরুদ্ধে কিছু বললে এরা এক সাথে তেঁড়ে আসে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নিউ মার্কেট হকার্স অ্যাসোসিয়েশন সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত হকারদের রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করছি। তবে এরা আমাদের কথা শুনে না। এদের ভিন্ন একটা শক্তি আছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা তেমন কিছু বলতে পারি না। তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে প্রশাসন চাইলে সব সম্ভব।