নওগাঁয় গাছিদের ব্যস্ততা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সাধারণত গ্রামীন জনপদে মৌসুমি খেজুরের রস দিয়েই শুরু হয় শীতের আমেজ। শীতকালে নতুন ধানের চাল দিয়ে বিভিন্ন রকমের পিঠা পায়েস তৈরিতে খেজুরের রস ও গুড়ের কোন জুড়ি নেই। যাকে বলা হয় নবান্ন উৎসব। আর শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে নওগাঁর প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।

শীত মৌসুমে ৪ মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। যত বেশি শীত পড়ে, গাছ থেকে তত বেশি রস সংগ্রহ করা যায়। যারা খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে গাছ কাটায় পারদর্শী স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে গাছি বলা হয়। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন। এরপর খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন, আর মাত্র কয়েক দিন পরই পুরো দমে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও ঝোলা গুড়। অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর এখন অনেক বেশি। কয়েক বছর আগেও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য খেজুর গাছ চোখে পড়ত। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ।

নওগাঁ সদর উপজেলার দরিয়াপুর গ্রামের গাছি মিন্টু মোল্লা বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি করেও বাজারে বিক্রি করি। এক কেজি খেজুরের পাটালির দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’

বিজ্ঞাপন

দিঘিরপাড় গ্রামের গাছি আকামত আলী বলেন, ‘আমি আগে বছরে এক থেকে দেড়শ গাছ কাটতাম। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০টিতে। বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সবার উচিত তাল গাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো।’

বক্তারপুর গ্রামের গাছি আবুল কালাম বলেন, “আমরা পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরই খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে চার মাসের জন্য গাছ ইজারা নিই। গাছ ভেদে পাঁচ থেকে সাত কেজি করে খেজুরের গুড় দিয়ে দেই মালিকদের। তবে চাহিদা মতো খেজুর গাছ না পাওয়ায় রস কম হচ্ছে। এতে আশানুরূপ গুড় তৈরি করতে পারি না। তারপরও এ বছর প্রায় দুইশ’টির বেশি খেজুর গাছের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশা ধরে রেখেছি। তবে যেভাবে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে তাতে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় আর আমাদের ব্যবসা হবে না।”