ইন্দোনেশিয়ার না, মালয়েশিয়ার পাম বাগানে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা!
ঢাকা: গৃহশ্রমিক এবং পাম বাগানে শ্রমিকদের নির্যাতনের ঘটনায় এবং তদন্তের প্রেক্ষিতে আপাতত ইন্দোনেশিয়া থেকে শ্রমিক নিতে পারছে না মালয়েশিয়া। এই প্রেক্ষিতে পাম তেলের বাজারের অর্থনৈতিক ধ্বস ঠেকাতে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার চুক্তি সম্পন্ন করেছে মালয়েশিয়া। এই চুক্তির আওতায় বেতন কাঠামো এবং অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।
গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর ২০২১) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান। মালয়েশিয়ার স্খানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মানবসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই চুক্তির কথা জানানো হয়েছে।
যেখানে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বলেছেন, সম্প্রতি মন্ত্রীসভায় বিশেষ প্রক্রিয়ায় ৩২ হাজার বিদেশি শ্রমিক আনার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় জরুরী ভিত্তিতে বনায়নসহ (পাম বাগানের শ্রম) অন্যান্য খাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে।
তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, যেহেতু পাম বাগানের কাজের জন্য ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকদের আপাতত আনা যাচ্ছে না। তাই এই চুক্তি করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ান ডোমেস্টিক সারভেন্ট (পিডিআই) এর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বনায়নের জন্য শ্রমিক পাঠাচ্ছে না দেশটি।
ইন্দোনেশিয়ার স্থাণীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত ৭ ডিসেম্বর ২০২১ মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ান মন্ত্রী ইদা ফাউজির বৈঠক হয়। সেখানে ওয়ান মেইড ওয়ান টাস্ক ধারনার প্রবর্তন নিয়ে কথা হয়। এছাড়াও কোন বাসায় ৬ জনের বেশি লোক থাকলে ইন্দোনেশিয়ান গৃহশ্রমিকরা কাজ করবেন না বলেও জানানো হয়।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলেই শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া থেকে বনায়নের (পাম বাগানের শ্রম) শ্রমিক নেয়া সম্ভব হবে বলে জানান দাতুক সারাভানানভ। তবে সহসা এই চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই জানা গেছে।
এই চুক্তির বিষয়টি ছাড়াও বিশ্ব শ্রম সংস্থ্যা (আইএলও) এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থ্যা এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার পাম বাগানে বিদেশি শ্রমিক, বিশেষত ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়। সেখানে অধিক শ্রম, শ্রমিকদের পাসপোর্টসহ জরুরী কাগজপত্র আটকে রাখা, নিম্মমানের আবাসন, নিম্ন মজুরী, নিয়োগকর্তা কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের বিষয়গুলো সামনে উঠে আসে। এর ফলে পাম বাগানের কাজে শ্রমিক পাঠাতে হলে তার সঙ্গে নতুন কিছু শর্ত এবং শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে ইন্দোনেশিয়া। একই সঙ্গে চলতি বছরে এক নারী গৃহশ্রমিকের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে উষ্ণ সর্ম্পক চলছে দেশটির।
গত ৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রীসভায় ৩২ হাজার শ্রমিক জরুরী ভিত্তিতে নেয়ার প্রস্তাব পাশ হয়। এর পর থেকে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সরকারি পর্যয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন সারাভানানভ। তবে সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় আপাতত পাম বাগানে কাজ করতে নিজ দেশের শ্রমিকদের পাঠাচ্ছে না ইন্দোনেশিয়া, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এই চুক্তিকে বরাবরের মতোই বিজয় হিসেবে দেখছে। মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে স্থগিতাদেশ আরোপ করে এবং পুনরায় কর্মী নিয়োগ শুরু করার লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুরের নিরলস পরিশ্রম ও অবিরাম কুটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে মালয়েশিয়া সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রদান করে।