জারুলের শুধু সৌন্দর্য নয় আছে ঔষধি গুণও

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে গাছের কাণ্ড ও পাতার ধুলোপড়া বিবর্ণ রূপেরও পরিবর্তন হয়েছে। সূর্যের আলোয় প্রকৃতি অনেকটাই সতেজ। বৃক্ষরাজি গুলোও যেন সেজেছে নতুন রূপে।

চলতি পথে মহাসড়কের ধারে হঠাৎ চোখে পড়লো জারুলগাছে ফোঁটা নীল রঙের থোকা থোকা ফুল। ফুলগুলোও যেন চোখ ধাঁধিয়ে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পথের ধারে জারুল ফুলের নীল রংয়ের সৌন্দর্য দেখে মনটাও প্রাণবন্ত হয়ে যায় পথচারী এবং সৌন্দর্য পিপাসুদের।

বিজ্ঞাপন

জারুলের এই অপূর্ব শোভা এবং রূপ আকর্ষণ করে ফেলে নিমেষেই। জারুল ফুল দেখেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তবে ক্রমশ এই গাছগুলো কমছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে জারুলের তিনটি প্রজাতি আছে। এগুলো হলো জারুল, বিলেতি জারুল ও ছোট জারুল। নীলাভ ও গোলাপি দু’রঙের জারুল ফুল বাংলাদেশে থাকলেও বেশিরভাগ জায়গায় নীল রঙের ফুলের গাছটিই দেখতে পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃক্ষ জাতীয় জারুল ফুলের আদি নিবাস শ্রীলংকা হলেও বাংলাদেশে এই গাছটি এসেছে ভারত থেকে। পাতাঝরা এই বৃক্ষটি শীতকালে পত্রশূন্য থাকে। বসন্তে নতুন গাঢ় সবুজ পাতা গজায়। গাছ সাধারণত ১০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।

গাছের পাতা সবুজ এবং পুরু ও বেশ প্রশস্ত ধরনের । গাছের শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড শক্ত। শাখা প্রশাখার অগ্রভাগে দণ্ড বোঁটায় অসংখ্য ফুল ফোটে। বোঁটার নিচ থেকে প্রথম ফুল ফোটা শুরু হয়ে বোঁটার সামনের দিকে ধীরে ধীরে ফুল ফোটে।ফুলটির ইংরেজি নাম Giant crape-myrtle. এটি Lythraceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia speciosa।

এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ফুল আসে। ফুল ঝরে পরার পর ফল পরিপক্ব হতে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগে। গাছ ফুলে ছেঁয়ে গেলেও চারপাশে তেমন সুগন্ধি ছড়ায় না তবে এর দৃষ্টিনন্দন রং ও রূপের শোভায় সবারই চোখ আটকে যায়। এর পাপড়ির নমনীয় ও কমলতা হৃদয় ছুঁয়ে যায় প্রকৃতিপ্রেমীদের। ফুল ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার চওড়া হয় এবং হালকা সোনালি পুংকেশর থাকে। ফল ডিম্বাকার, শক্ত ও বিদারি। বীজ ১ সেন্টিমিটার চওড়া, পাতলা বাদামি রঙের। বীজে থেকেই এর বংশবৃদ্ধি হয়।

জারুল গাছ থেকে কাঠ করতে চাইলে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে। এর কাঠের রং লালচে ধরনের। কাঠগুলো বেশ শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। জমি চাষের লাঙল, ঘর নির্মাণ, নৌকা ও আসবাবপত্র তৈরীতে এই কাঠ ব্যবহার করা যায়।

রাজীবপুর উপজেলায় সবুজবাগ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলহাজ্ব ইউনুস আলী বলেন, জারুল গাছের বিভিন্ন অংশের রয়েছে ভেষজ গুণ।

বাত রোগের ব্যাথা দূর করতে জারুল গাছের পাতা বেটে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।

কাশি হলে এই গাছের শিকড় সিদ্ধ করে সেই পানি মধুর সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে কাশি ভালো হয়ে যায়।

অনিদ্রা রোগে জারুল গাছের মূল চূর্ণ করে গরম পানির সাথে রাতের বেলা নিয়মিত খেলে অনিদ্রা কেটে যায় এবং ভালো ঘুম হয়।

জ্বর ভালো করে জারুল গাছের শিকড় সিদ্ধ করে সেই পানি সকাল ও বিকেলে সেবন করলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।