চাকরি পেতে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মামলা, নেপথ্যে শ্রমিকনেতা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চাকরি পেতে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মামলা

চাকরি পেতে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মামলা

সড়ক ও জনপথ বিভাগের লক্ষ্মীপুর অফিসে নিয়োগ পেতে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মো. ইউসুফ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। তিনি ওই অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ির ড্রাইভার মো. নুরুল আমিনের ছেলে। ওই নিয়োগ প্রচেষ্টায় প্রভাবশালী শ্রমিকলীগ নেতা নুরুল আমিন নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়ি চালক নুরুল আমিনের ছেলে মো. ইউসুফ ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে শ্যামলী আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা পাস করেন। এরপর তিনি ২-৩ বছর ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের লক্ষ্মীপুর উপ-বিভাগে দৈনিক ভিত্তিতে কাজে যোগদান করেন। লোকবলের পর্যাপ্ততা থাকলেও শুধুমাত্র চালকের ছেলে এমন প্রভাবে তাকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসএসসি পাস করেই তিনি এইচএসসি পাসের যোগ্যতার পদে নিয়োগ পাওয়ায় বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

২০২২ সালে কাজ নেই মজরি নেই ভিত্তিতে মো. ইউসুফকে অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ২০১৪ সাল থেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দাবি করে চাকরি স্থায়ীকরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণ করতে সারা দেশের ২৯৫ জন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন করেছেন (নং-৭৮৬৪/২০১৭)। ওই পিটিশনে ১০৪ নম্বর ক্রমিকে মো. ইউসুফকে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মরত দেখানো হয়েছে। ইউসুফ কর্মরত না থাকলেও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাবার প্রভাবে ওই মামলায় তার নামটিও দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে তাকে কম্পিউটার টেবিলে বসে কাজ করতে দেখো গেছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০১২ সালে নৈশপ্রহরী হিসেবে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ পান নুরুল আমিনের চাচাতো ভাই আব্দুল খালেকের ছেলে জহিরুল ইসলাম। তিনি নৈশ প্রহরী (নাইটগার্ড) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তিনি সেই দায়িত্ব পালন না করে বড় বাবুর চেয়ারে বসেন। সেখানে বসে তিনি অফিসের ফাইলপত্র ব্যবস্থাপনার কাজ করেন।

২০১৪ সালে মাস্টার রোলে (দৈনিক ভিত্তিতে) অস্থায়ী নিয়োগ পান আব্দুল জলিল। তিনি ড্রাইভার নুরুল আমিনের শ্যালক। তাকে রোড শ্রমিক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২১ সালে একইভাবে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেওয়া হয় তার ভাইয়ের ছেলে (ভাতিজা) সহোদর ইছাক রানা ও মো. আল আমিনকে। এর মধ্যে ইছাক চালক ও আল আমিন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত গাড়ি চালক আজাদ হোসেনকে বসিয়ে রেখে সেই কাজ দেওয়া হয় ইসহাককে। পরবর্তীতে এ নিয়ে সমালোচনা হলে আজাদকে রাস্তায় পানি দেওয়ার ট্রাকের চালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রয়োজন না থাকলেও ইসহাককে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শরীফুল ইসলাম বাপ্পীকে। তিনি চালক নুরুল আমিনের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত নিহত গৃহবধূ মমতাজ বেগমের ছেলে।

রিটে সারাদেশের ২৯৫ জন কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর নাম উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ৯৯ হতে ১০৪ পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নিয়োগপ্রাপ্ত ৬ জন। এছাড়া আরো নিয়োগ প্রাপ্ত আছে যাদের নাম রিট পিটিশনে দেওয়া হয়নি। ৬ জনের মধ্যে ১০২ হতে ১০৪ পর্যন্ত ৩ জনের নিয়োগ দিয়েছেন নির্বাহী প্রেকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম। এদেরকে ২০২২ সালে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ রিট পিটিশনে দেখানো হয়েছে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ওই সন থেকে ২০২২ পর্যন্ত কোনো বেতন-ভাতা শিটে এদের কারো নাম দেখা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে মো. ইউসুফ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এ বিষয়ে অফিসের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা যা বলেছেন, তাই সঠিক।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ও নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ির চালক মো. নুরুল আমিন বলেন, আমরা যেহেতু এখানে চাকরি করি, সেহেতু আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও সন্তানরা অগ্রাধিকার পাবেন এটাই স্বাভাবিক। মিথ্যা বলেও যদি একজন শিক্ষিত যুবক সরকারি চাকরি পায়, তাতে বিরোধিতা করা উচিত না।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে মামলা করেছেন তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত। দৈনিক ভিত্তিক কাজ করা শ্রমিকদের নিয়মিত টাকা পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকে আমাদের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পোষ্য বা আত্মীয় হওয়ায় কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন বলে অনেকের সহ্য হচ্ছে না। তারাই এটা নিয়ে নানান প্রচারণা চালাচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মো. ইউসুফ ২০১৪ সাল থেকে এখানে কাজ করেছেন এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। কয়েক মাস থেকে তিনি এখানে দৈনিক ভিত্তিক কাজ করেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ আদালতকে বিভ্রান্ত করলে তার দায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে।