ফিলিপাইনের ‘কালো আখে’ স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর চাষিরা
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ছানা। নিজ গ্রামেই ১৫ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে এলাকায় ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। চলতি বছরে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এই জাতের আখ চাষ করেন। তিনি এবার আখ বিক্রি না করে তার অন্যান্য জমিতে রোপণ করবেন। এছাড়া তাকে দেখে অনেকে এ আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বীজ অর্ডার দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখের উচ্চতা ১৫-২০ ফুট হয়। এ আখ স্বল্প খরচ বেশি লাভ হয়। প্রতিটা চারার গোড়া থেকে ১০-১৫টি চারা গজায়। সার ও পানি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। স্বল্প খরচে এ আখ চাষ করা যায়। একবার চারা রোপণ করলে ৩ বছর আর নতুন করে রোপণ করার প্রয়োজন হয় না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকে নতুন করে আখের চারা গজায়। পরবর্তী বছরে বেশি ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি আখ থেকে প্রায় ৩ কেজি রস পাওয়া যায়।
আখ চাষিরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস আখের রস তৃপ্তি আনে। ফলে গরমের সময় আখের চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে যায়। চিনির জন্য আখের চাহিদা থাকলেও রসে রয়েছে ঔষধি গুণ। এ দিক থেকে দেশীয় আখ চাষে লাভ কম হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে নরম প্রজাতির ‘ফিলিপাইন ব্ল্যাক’ জাতের আখ চাষ। অনেকেই এই আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
তারা বলেন, রাজশাহী সুগার মিলকে সচল রাখতে এক সময় বাঘায় ব্যাপক আকারে আখ চাষ হয়েছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী ফসল হওয়ায় আখের আবাদ অনেকাংশে কমে গেছে। কিন্তু বর্তমানে নতুন জাতের ফিলিপাইন ব্ল্যাক আখ চাষ লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেকেই নতুন করে আগ্রহী হচ্ছেন। ফিলিপাইনের কালো রঙের এ আখের সুগার শুধু গরমে তৃপ্তিই নয়, এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। ফলে বিভিন্ন বাজার এবং মোড় এলাকায় এখন এই আখ বিক্রি করা হয়।
তরুণ উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, গত বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ১৫ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করেছি। এই আখ এবার বিক্রি না করে পুনরায় অন্যান্য জমিতে লাগাবো । আমাকে দেখে অনেকেই এ আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি অন্য যেকোনো আখের চেয়ে লাভজনক। বিশেষ করে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো জাতের আখ হলো এই ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ। এ আখের অনেক বেশি মিষ্টি ও নরম থাকায় শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা এটি চিবিয়ে খেতে পারে। এর খোসা হাতের আঙুল দিয়েও ছাড়ানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই বাঘার অনেক কৃষক ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের আখচাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, বাজারে দেশীয় যে আখগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ ১০ ফুট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখের উচ্চতা প্রায় দ্বিগুণ হয় অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট। এ আখের নানা গুণের পাশাপাশি রয়েছে স্বল্প খরচ ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটা চারার গোড়া থেকে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫টি চারা গজায় এবং প্রতিটি গাছ লম্বা হয় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ফুট। সার-পানি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। একবার এ চারা রোপণ করলে পরবর্তী ৩ বছর আর নতুন করে রোপণ করার প্রয়োজন হয়না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে আখের চারা গজিয়ে উঠে এবং তার থেকে পরবর্তী বছরে আবারও ফলন পাওয়া যায়।এছাড়াও প্রতিটি আখ থেকে প্রায় ৩ কেজি রস বের করা যায়। যা দেশীয় আখ থেকে সম্ভব নয়।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সব থেকে ভালো জাতের আখ হলো ফিলিপাইন আখ। এটি চাষ করে বিঘা প্রতি ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বাজারে যে সকল আখ পাওয়া যায় সেগুলো শক্ত, মিষ্টি কম এবং অনেক সময় রস কম থাকে। কিন্তু চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সব থেকে ভালো জাতের আখ হলো ফিলিপাইন আখ। ভারতের উত্তর প্রদেশে এই আখের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি চাষ করে বিঘা প্রতি ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ভারতের উত্তর প্রদেশে এই প্রজাতির আখের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে পরিপক্ব হওয়ায় এবং রসালো ও প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এ আখ চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।