বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা ও এর আশেপাশের উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ স্বাদু পানির সংকট দীর্ঘ দিনের। সাম্প্রতিক সময়ে এসব অঞ্চলে নিরাপদ পানির প্রধান উৎস গভীর নলকূপ থেকেও চাহিদামত পানি পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সুপেয় পানির অন্য উৎসগুলোয় লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা।
বর্ষা মৌসুমে নানা উপায়ে বাড়িতে বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা গেলেও সম্প্রতি শীতের আগমনে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এসব রিজার্ভ ট্যাংকে সংগৃহীত পানিও ফুরিয়ে এসেছে। এছাড়া পুকুরের পানিও তলানিতে ঠেকেছে। এমতাবস্থায় সুপেয় স্বাদু পানির অভাবে হাহাকার দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরায়। কলসি নিয়ে মাইলের পর মাইল হেটেও পানি পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সাধারণত শীতের মৌসুম থেকে বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত একটা লম্বা সময় এই দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় উপকূলের সাধারণ মানুষকে।
বিজ্ঞাপন
সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি করে আসছেন উপকূলবাসী। নিরাপদ পানির বিকল্প উৎস খোঁজতে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) সকালে নিরাপদ ও সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকা হরিশখালিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় কলস নিয়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
বিজ্ঞাপন
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের হরিশখালিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, স্থানীয় সরকার, যুব সংগঠন কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম (এসএসএসটি) ও উপকূলীয় শিক্ষা বৈচিত্র্য উন্নয়ন সংস্থা (সিডিও) জলবায়ু সংকটে উপকূলীয় কলসবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্যামনগর এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মোকাবিলা করে টিকে থাকে। এর মধ্যে বর্ষা মৌসুমের পরবর্তীকালীন সময়ে শুরু হয়ে যায় স্বাদু পানির চরম সংকট। দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার চারদিক লবণ পানি দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় পান করার উপযোগী না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকে মৃদু লবণ পানি পান করে থাকে। ভূ-পৃষ্ঠের সুপেয় পানির উৎসগুলো বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে পুকুর খননসহ এ অঞ্চলের সমস্যা সমাধান করা জরুরি।
স্থানীয় নারীরা জানান, অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। দস্তার কলসে দূর থেকে এই পানি সংগ্রহ করার ফলে আমরা কোমরে ব্যথা, মাজার হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যাসহ অনেক রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকি। বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি পান করায় আমাদের আমাদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। অতি লবণাক্ত পানির ব্যবহারের ফলে শিশু ও নারীদের চর্মরোগ, স্ক্রীন কালো হওয়া, গর্ভপাত, অপরিপক্ক সন্তান জন্ম, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম, জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যাসহ ক্যান্সারেরমত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তারা বলেন, পানি কোন পণ্য নয় এটি আমাদের ন্যায্য অধিকার। নারীদের গোসল থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেচরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নিরাপদ পানি আমাদের প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। তবে আমরা কেন এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। আমরা এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।
মানববন্ধনে মনন্ঞ্জয় মণ্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মহিলা ইউপি সদস্য ফরিদা খাতুন, আজমুননাহার বেগম, উপকূলীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুদা মালি, কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের রাইসুল ইসলাম, সিডিও ইয়থ টিমের সদস্য শাহিন হোসেন, এসএসএসটি যুব টিমের মো. সাইদুল ইসলাম, বারসিক এর বরষা গাইন, লিপিকা গাইন, মুকুন্দ ঘোষ প্রমুখ।
পিরোজপুর ডিবি পুলিশের অভিযানে ওমর ফারুক খান নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৪ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা বাজার এলাকার সড়ক থেকে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার ওমর ফারুক খান(২৭) পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদারমল্লিক ইউনিয়নের জুজখোলা গ্রামের হাবিবুর রহমান খানের পুত্র।
পিরোজপুরের ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধারের বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা বাজার এলাকার সড়ক থেকে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ওমর ফারুক খানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার গাঁজার বাজার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম এন্ড অপস) মুকিত হাসান খান জানান, পিরোজপুর জেলাকে মাদকমুক্ত করতে জেলা পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের দিকনির্দেশনায় পিরোজপুর জেলাকে মাদকমুক্ত করতে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া অভিযানে গ্রেফতার ওমর ফারুক খানের নামে নাজিরপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল হালিম মিয়া প্রকাশ মিয়া সওদাগর (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বারৈয়ারহাটের দক্ষিণ পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল হালিম মিয়া উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের একখুলিয়া গ্রামের মৃত আবুল কালামের পুত্র। তিনি নাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানায়, নাজিরহাট থেকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে সড়কের দাঁড়িয়ে থাকা পাথরবোঝায় ট্রাকের সাথে স্বজোড়ে ধাক্কা লেগে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে পথচারীরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে দায়িত্বরত চিকিৎস তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন।
রাজশাহীতে ক্রমেই বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা। এতে শহরের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গ্যাংগুলোর সক্রিয়তা বৃদ্ধি ও তাদের কর্মকাণ্ডে পুলিশের কার্যকারিতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কিশোর গ্যাংগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কিশোর গ্যাং চক্র ধরতে ডাটাবেজ তৈরি করেছিল। সেই ডাটাবেজ থেকে সন্দেহভাজন কিশোরদের আটক করা হতো। পরে তাদের মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হতো। এছাড়া সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করত পুলিশ।
তবে ৫ আগস্ট গণভ্যূত্থানে রাজশাহীর সিএন্ডবি এলাকায় আরএমপি হেডকোয়ার্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। এর ফলে সেই কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ হারিয়ে যায়।
সাম্প্রতিক রাজশাহীতে একের পর এক খুন, ছিনতাই, চুরি, ইভটিজিং ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জনসাধারণ চরম আতঙ্কে রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের ‘আশকারায়’ কিশোর গ্যাং চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আসামিদের তথ্য দিলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং ‘ব্যস্ততা’ দেখিয়ে দায় এড়াচ্ছে।
নগরীর ভদ্রা মোড়, সিএন্ডবি, লক্ষিপুর, টিকাপাড়া, কেদুর মোড়, হোসনিগঞ্জ বেতপট্টি, পাঠানপাড়া, কলাবাগান, অলোকার মোড়, হেতম খা, নিউ মার্কেট, তালাইমারি, বিমান বন্দর সড়ক, গ্রেটার রোড, রেলওয়ে স্টেশন, শিরোইল কাঁচা বাজার এলাকা এবং সিটি বাইপাসসহ প্রায় ১৫-২০টি স্থানে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে।
এই গ্যাং সদস্যরা পথচারী ও অটোরিকশাযাত্রীদের টার্গেট করে। তারা প্রকাশ্যে টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে।
নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা বিভিন্ন কিশোর গ্যাং আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের নজরদারির অভাবে নতুন নতুন গ্রুপও তৈরি হচ্ছে। ছিনতাই ও ছুরিকাঘাত যেন নিত্যদিনের ঘটনা। মোটরসাইকেল নিয়ে হচ্ছে বেশিরভাগ ছিনতাই। সর্বশেষ কয়েকদিনে ডজনখানেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসবের বেশিরভাগই বোয়ালিয়া থানা এলাকায়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছেন ট্রান্সপরেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল বাংলাদেশের সদস্য প্রকৌশলী রাবেয়া বারি। তাৎক্ষণিকভাবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি। তবে থানায় অভিযোগ করার সময় একটি ফোন কলে জানানো হয় ব্যক্তি পাওয়া গেছে কিন্তু ব্যাগের ফোন টাকা পয়সা এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।
রাবেয়া বারি বলেন, ভাঙড়িপট্টির সামনে মোটরইসাইকেলে করে এসে আমার ব্যাগ ছিনতাই করে দুজন ব্যক্তি। ব্যাগে দুটি এন্ড্রয়েড মোবাইল, ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। পরে থানায় অভিযোগ করতে গেলে একটি ফোন কলে জানানো হয়, ব্যাগটি একটি জায়গায় পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে ব্যাগ পাই। কিন্তু ফোন, টাকাপয়সা আর পাইনি।
তার স্বামী আরিফুর রহমান বলেন, একই জায়গায় দুজন কোরিয়ান নাগরিকের মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ড্রাইভার সজল উদ্দিনের স্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করা হয়। পরে তারা থানায় অভিযোগ দেন। কিন্তু এখনো ছিনতাই হওয়া জিনিস উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সজল বলেন, আমার স্ত্রী ও ছোটবোন দুই সন্তানকে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে দাওয়াত খেয়ে আসছিলেন। রেলগেটে বাস থেকে নামার পর রিকশায় ওঠেন। গয়না ও মোবাইল পার্টস ব্যাগে রেখেছিলেন। ভদ্রার অদূরে রেশম অফিসের বিপরীত দিকে ভাঙড়িপট্টির সামনে মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে ব্যাগটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
ড্রাইভার সজলের অভিযোগ, মোবাইল উদ্ধার হওয়ার পর আসামিকে আমি চিহ্নিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলী আকবরকে জানাই। তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে আসামি ধরছেন না, আমার ছিনতাই হওয়া জিনিসও উদ্ধার করছেন না।
এছাড়া গত বছর ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় কচুয়াতৈল এলাকায় পল্লী চিকিৎসক এরশাদ হত্যা এবং একই রাতে বর্ণালী এলাকায় ডা. কাজেম আলীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ডা. কাজেম খুনের ঘটনায় পুলিশের উচ্চপদস্থ দুই কর্মকর্তা সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হেমাটলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা বলেন, আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল কুমারকে ধরলেই খুনের সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
তথ্য বলছে, কিশোর গ্যাং চক্রের নেতাদের প্রত্যেকের রয়েছে দেড়-দুই লাখ টাকা দামের আইফোন। দামি দামি গাড়ি প্রায়ই পরিবর্তন করেন তারা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় আইনের আওতায় আসেন না তারা। তাদের সাথে পুলিশের সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই আলী আকবর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অলিখিতি ‘বডিগার্ড’ হিসেবে কাজ করতেন। ডাবলু সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও দুজন ছাত্রকে হত্যার মামলায় আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসআই আলী আকবরকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বদলির আদেশের ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো বোয়ালিয়া থানায় রয়েছেন। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এএসআই রানা কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে নানা অপরাধে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশের স্বভাব পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অপরাধ কমবে না। রাজশাহী নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে থানার ওসিদের সখ্যতা রয়েছে। তারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, এসব ঘটনা আমরা কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করেছি। এগুলো রীতিমতো আশঙ্কাজনক ও আতঙ্কজনক। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজ কারোই তেমন ভূমিকা দেখিনি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মাসুদুর রহমান মুক্তা জানান, নগরীর বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা আরও ভালো অবস্থার প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু তা আসেনি। সমাজে অপরাধের এই উত্থান অত্যন্ত হতাশাজনক।
তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি আরও সচেতন হন এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেন, তাহলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দিতে হবে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসন, অভিভাবক এবং সমাজের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি।
এসব বিষয়ে আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) অনির্বান চাকমা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমাদের এডিসি মিডিয়া একজন আছেন, আপনি তার সাথে কথা বলেন।
এসব ব্যাপারে আরএমপির মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। পুরনো সব ডাটাবেজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা আগের তালিকা নিয়ে কাজ করতে পারছি না। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু সুফিয়ান জানান, কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যে কোনো অপরাধের তথ্য পাওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তার মেয়ে আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এই তিন জনের ছত্রছায়ায় কিশোরগ্যাং তাদের কার্যক্রম পরিচালনা হতো।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) অভিযানে হামলা চালিয়েছে মাদক কারবারীরা। এ সময় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন আভিযানিক দলের দুই সদস্য।
আহতরা হলেন- সিপাই মো. সায়েদুল ও এসআই আব্দুস সাত্তার।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকাল শোয়া ৯টার দিকে কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের ৭ নম্বর রোডের একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ডিএনসির উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ধানমন্ডি সার্কেল পরিদর্শক শাহজালাল খানসহ ৫ জন ফোর্স কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে একটি বাসা ঘেরাও করে। পরিদর্শক শাহজালাল ভবনটির কেয়ার টেকার রিপন মিয়া ও বাড়ির আরেক ভাড়াটিয়া হেলাল মিয়ার উপস্থিতিতে তল্লাশি করে ঘরের মধ্যে থেকে মোট ১ কেজি গাঁজা এবং মাদক বিক্রির ২৬ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করেন।
তিনি আরও বলেন, সে সময় মাদক কারবারী মো. রুবেলকে গ্রেফতারের উদ্যোগী হলে স্থানীয় সন্ত্রাসী মাদক কারবারী রুবেলের ছোট ভাই সবুজ, মো. হাসান, কালা ওরফে শাওন, শাকিল ওরফে চিকু শাকিলসহ আরও ১০/১২ জন সন্ত্রাসী দেশিয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে আকস্মিকভাবে পরিদর্শক শাহজালাল খানসহ ৫ জন ফোর্সের ওপর হামলা করে সিপাই মো. সায়েদুল ও এসআই আব্দুস সাত্তারকে গুরুতর আহত করে।
অভিযানে যাওয়া দলটিকে উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পরিদর্শক শাহজালাল খান মোবাইল ফোনে মোহাম্মদপুর থানার ওসি এবং বসিলা ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর অধিনায়ককে জানিয়ে সহযোগিতা কামনা করেন।
বসিলা ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন তাহসিনের নের্তৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল, মোহাম্মদপুর থানার এসআই নাছিমের নেতৃত্বে একটি দল এবং ডিএনসির রমনা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর সার্কেলের ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সিপাই সায়েদুল বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং এসআই আব্দুস সাত্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিশ্রামে আছেন।
সরকারি কাজে বাধাদান ও হত্যা চেষ্টায় চিহ্নিত ৬ জনসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় ফৌজদারি মামলা এবং উদ্ধার করা মাদকের বিষয়ে মাদক কারবারী রুবেল ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে মামলা এজাহার এখনো দায়ের করেনি। এজাহার দায়ের করলেও মামলা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।