মর্গে পড়ে ছিল প্রবাসীর লাশ, ৫ মাস পর দেশে

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পরিবারে ও নিজের ভাগ্য বদলাতে মাত্র ৮ মাস আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মোতালেবের ছেলে মোঃ হানিফ (৩৩)। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় প্রবাসে গিয়ে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে হতে হয় নির্যাতিত। দালাল চক্রের নির্যাতনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণই হারাতে হয় হানিফের। হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল মরদেহ। নানা চেষ্টা করেও ফেরত আনা যাচ্ছিল না নিষ্প্রাণ দেহটি। অবশেষে মৃত্যুর ৫ মাস পর বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং ব্র‍্যাকের সহযোগিতায় দেশে ফিরেছে প্রবাসী মোঃ হানিফের মৃতদেহ।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

বিজ্ঞাপন

জিয়াউল হক বলেন, ব্র্যাক ও এপিবিএনের যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দীর্ঘ ৫ মাস পর দেশে ফেরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মোতালেবের ছেলে মোঃ হানিফের (৩৩) মরদেহ। সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণ করেন হানিফের স্ত্রী আফিয়া খাতুন এবং তার ভাই। এসময় সেখানে আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক আরও বলেন, 'রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি গিয়ে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, লাশ দেশে আনার আকুতি' শিরোনামে চলতি বছরের ৩ জুলাই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে বিষয়টি এপিবিএনের নজরে আসে। সংবাদের সূত্রধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্র্যাক ও এপিবিএন। মৃত হানিফের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয় পরিবারকে।

জীবিকার সন্ধানে রিক্রুটিং এজেন্সি অপশন ম্যানপাওয়ার ওভারাসীজের মাধ্যমে সৌদি আরবের আভা শহরে গিয়ে প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে হানিফের মৃত্যু হয়। গত ১৬ জুন রিয়াদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর সেখানে বসবাসকারী নিকটাত্মীয়রা লাশ দেশে আনার বিষয়ে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

মৃত হানিফের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা হানিফ অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকে নির্মাণ শ্রমিকের (রাজমিস্ত্রি) কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের আশায় চলতি বছরের ১২ মার্চ সৌদি আরবে যান হানিফ।

দেশটিতে যাওয়ার পর তাকে রাজমিস্ত্রির কাজ না দিয়ে আভা শহরে ভেড়া চরানোর চাকরি দেওয়া হয়। যে মালিকের অধীন তাকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল ওই ব্যক্তি তাকে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন করতো। বিষয়টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জানানোর পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সেখানে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৬ জুন রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হানিফকে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একইদিন স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় হানিফ মারা যান।

এপিবিএন এ বিষয়ে সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলে গত ৩ ডিসেম্বর ৫ মাস পর তার মৃতদেহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরত আসে।