সাগর তীরে শীতকালীন তরমুজ

  • মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাগর তীরে শীতকালীন তরমুজ। ছবি: বার্তা২৪.কম

সাগর তীরে শীতকালীন তরমুজ। ছবি: বার্তা২৪.কম

একপাশে সাগর, অন্যপাশে পাহাড়। সাগর আর পাহাড়ের মিতালীর মাঝে পিচঢালা দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সড়কের পাশে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের তীরে এই শীত মৌসুমে নজর কাটছে রসালো ফল তরমুজ। সাগরতীরে চোখ জুড়ানো তরমুজের বাগানে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে আসা ভ্রমণকারীরা ।

অসময়ে শীত মৌসুমের তরমুজ কিনে বালিয়াড়িতে (বালু) বসেই খাচ্ছে অনেকেই। কলাতলীর দরিয়ানগর থেকে পেঁচারদ্বীপের বিশাল অংশের বালিয়াড়ির কিনার ঘেঁষে কয়েকদিন ধরেই বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। তবে অসময়ের ফল হওয়ায় দাম একটু চড়া।

বিজ্ঞাপন

তরমুজ প্রধানত গ্রীষ্মকালীন ফল। তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশপাশে হিমছড়ি, বড়ছড়া, প্যাঁচারদিয়া, দরিয়ানগর এলাকায় এখন শীতকালেও চাষ হচ্ছে ফলটি। সাগরতীরের বালিয়াড়ি থেকে তুলে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশেই বিক্রি হচ্ছে এগুলো।

জানা যায়, স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন, ছৈয়দ হোসেন, আয়ুব, জমির হোসেন ও হোসেন আহম্মদসহ অনেকেই অসময়ে এই তরমুজ চাষ করেছেন। আর তরমুজের বাম্পার ফলনও হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তরমুজ চাষি দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, শুধুমাত্র বালিয়াড়িতে (বালু) তরমুজেরই চাষ হয়। শীতকালীন কিছু তরমুজের বীজ রয়েছে। তিনি এবার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে প্রায় ১৮ গন্ডা জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। চাষের আড়াই মাসের মাথায় এখন তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। গত কয়েকদিনে প্রায় ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। বাগান থেকে আরও একমাস বিক্রি করা যাবে। তার সব মিলে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১৮ গন্ডা জমিতে সব মিলে খরচ পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আগামী একমাসের মধ্যে প্রায় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

হিমছড়ি এলাকার কৃষক আবদুল খালেক জানান, গত বছরও তিনি দরিয়ানগর ও হিমছড়ি পর্যটনকেন্দ্রের সামনে ৮০ শতক জমিতে তরমুজের চাষ করেছিলেন। কিন্তু পোকার আক্রমণের কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার বিশেষ যত্ন ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। রাতের কুয়াশাতে তরমুজ বাগান ভালো থাকে। তবে বালিয়াড়ির গরম ও রোদের কারণে অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শীতকালীন তরমুজগুলো সব সময় ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হয়।

চাষি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি তরমুজ ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন দুই থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত হয়।

চাষি জমির হোসেন জানান, টেকনাফ, উখিয়া, সদর ও চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবে তরমুজের চাষ হচ্ছে। সৈকত তীরে এ তরমুজ আগাম পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে এসব ক্ষেত থেকে তরমুজ পুরোদমে বাজারে আসবে।

মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে তরমুজ খাচ্ছিলেন সাদ্দাম হোসেন ও কাইফ নামে দুই বন্ধু। তারা বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সড়কে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে দেখি সড়কের পাশে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। তরতাজা ফল দেখে ১৫০ টাকা দিয়ে একটি কিনে খাচ্ছি। এই তরমুজ খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু।’

সানাউল্লাহ নামে এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, সাগরতীরে এই অসময়ে তরমুজ অবাক হওয়ার মতো। একই সঙ্গে তরমুজের স্বাদও অনেক ভালো। তবে দাম একটু বেশি।

কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার বার্তা২৪.কমকে জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে সৈকত তীরে বেশ কিছু এলাকায় কয়েকশ একর জমিতে তরমুজের আগাম চাষ হয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ হওয়ায় এবারো বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছে চাষিরা।