নেটিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ, সাফল্যে খুশি কৃষক
প্রতিদিনই বেগুনের ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে করে যেমন কৃষকের খরচ বেড়ে থাকে পাশাপাশি নিরাপদ সবজি থেকেও বঞ্চিত হতে হয় ভোক্তাদের। তবে আশার কথা হলো, বেগুন চাষের নতুন এই নেটিং পদ্ধতি চালু করে বেগুনের আবাদ করছে কৃষকরা। এতে করে মানুষ নিশ্চিন্তে বিষমুক্ত বেগুন খেতে পারছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের করিমপুর ব্লকের মাধপুর গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ তার বাড়ির পাশে ১০ শতক জমিতে নেটিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমির চারপাশ ও ওপরে নেট দিয়ে ঘিরে বেগুন চাষ হচ্ছে। দরজার আকৃতি নেটের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো সারি সারি বেগুন গাছ। ঝুলে থাকা বেগুনের পাশাপাশি বেগুনের ফুলও চোখে পড়লো। কৃষক হারুন অর রশীদ বেগুন ক্ষেতে পরিচর্য়ায় ব্যস্ত। কথা শুরু হতেই তিনি হাসির ঝিলিক দিয়ে বলে উঠলেন এক বছর ধরে চাষ করে আসা এই বেগুন ক্ষেতে কোন বিষপ্রয়োগ করতে হয়নি। অথচ বিষের (কীটনাশক) প্রয়োগ বেশি করতে হয় বলে বেগুন চাষ ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে বিষ প্রয়োগ না করে আমার এই বেগুনে ক্ষেতে কোনোক্রমেই পোকার আক্রমণ হয়নি। এখন থেকে নেট পদ্ধতিতে বেগুনের আবাদ আরও বেশি করে করবো বলেও জানান তিনি।
কৃষক হারুন অর রশীদ বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং প্রায় ৩০ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তা (বাঁশ, নেট, তার) প্রদান করেছে।
একবছর আগে লাল তীর পার্থিব জাতের বেগুন চাষ করেছি। এই এক বছরে এ বেগুন ক্ষেত থেকে এ যাবত দেড়লাখ টাকার বেগুন সংগ্রহ করেছি। এখনও ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি হবে বলে আশা করছি। নেটিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করার ফলে খরচ নেই। আবার এই নেটিং দিয়ে কয়েক বছর আবাদ করা যাবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, আদর্শ বীজতলা তৈরি করে তাকে বেগুন চাষের পরামর্শ দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে আমরা কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছি। আমি নিজে নিয়েমিত তদারকি করেছি বিষমুক্ত বেগুন চাষে। তার সাফল্য দেখে এখন আশেপাশের অনেকে কৃষকই এগিয়ে আসছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, নেটিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষে কৃষকের লাভের পাশপাাশ বিষমুক্ত বেগুন ভোক্তা পর্যায়ে পৌছানো সহজ হবে। তিনি বলেন, নেট দিয়ে ঘেরার কারনে আলো-বাতাস যাওয়া-আসায় কোনো অসুবিধা হবে না। ফলে নেট ঘেরা বেগুন ক্ষেতে কোনোভাবেই পোকার আক্রমণ হবে না। চারা রোপণের শুরু থেকে ক্ষেতের বেগুন তোলা পর্যন্ত কখনোই কোনো ধরনের বিষ প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। বেগুন হবে পুরোপুরি বিষমুক্ত। বিষের ব্যবহার না থাকায় কৃষকের খরচ কমবে। ক্ষেতে ব্যবহৃত নেট কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। এজন্য নেট ব্যবহারের খরচও খুব বেশি পড়বে না। আশা করা যায়, এ পদ্ধতি এক সময় সব কৃষক অনুসরণ করবেন।
নেট দিয়ে ঘেরা থাকার কারণে বেগুনের চারা হবে সতেজ। ক্ষেতে চারা রোপণ করার পরও তা নিরাপদ ও তরতাজা থাকবে।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে নিরাপদ সবজির সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করতে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে সবজি বীজ, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ, আঠালো ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক মালচিং পেপারসহ বিভিন্ন উপকরণের সুষ্ঠু ব্যবহার করায় এ সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। নেটিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষের ফলে কৃষককে বিষ কিনতে হবে না। এ কারণে খরচ কমবে। তবে নেট কিনতে হবে। একবার নেট কিনলে তা চলবে কয়েক বছর, যা ক্ষেতে বিষ প্রয়োগের খরচের তুলনায় খুবই কম। নিরাপদ বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনে কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন।