দেশে কঠোর আইন থাকলেও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়া।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)-এর ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪র্থ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে কঠোর আইন থাকলেও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমছেই না।
সাংবাদিকদের বাক স্বাধীনতার উপর জোর দিয়ে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে রিট করার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের আরো সতর্ক হওয়ার তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন এই বাংলাদেশ হবে মানবিক বাংলাদেশ। যেখানে খুন হয়, মিথ্যা মামলা হয়, সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা সে দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা অনেক কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। মৌলিক অধিকার ও ভোটাধিকার এক নয়।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ভোটাধিকার সাংবিধানিক অধিকার আমরা কি প্রজা মানসিকতার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই? বিগত সরকার গণতন্ত্রের নামে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মানবাধিকার হরণ করেছে। দেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বুদ্ধিজীবি শহীদ মিনারের পিছনে জুলাই বিপ্লবের শহিদদের গুম করে রাখা গণকবরের উল্লেখ করে এটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জজামান আবেগ আপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী শব্দটি জনগণকে প্রজা হিসেবে দেখছে। তা পরিবর্তন করা দরকার। মানবাধিকার সম্পর্কে আরো ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন দেশ যে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে তাদের পাশে আমাদেরকে থাকতে হবে। প্রতিটি মানুষকে নিজ অধিকার ও অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
বিশেষ অতিথি জেলা ও দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, হাত পা থাকলে মানুষ হয় না, মানুষ হতে হলে বিবেক থাকতে হব, থাকতে হবে শুদ্ধাচার।
অনুষ্ঠানে সভাপতি বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সততা না থাকলে সব ক্ষেত্রে হতাশা ছড়িয়ে পড়বে।
বিএইচআরএফ চেয়ারপারসন অ্যডভোকেট এলিনা খান বলেন, প্রত্যেকে আমরা দায়িত্বের প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের প্রতি সৎ ও সচেতন থাকতে হবে। সংগঠনের প্রতিটি নেতা কর্মীকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। আত্ম মানবতার সেবায় কাজ করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। যেখানেই মানবাধিকার লংঘন সেখানেই আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
সংগঠনের মহাসচিব এএম জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ভবিষ্যতে যারা মানবাধিকার কর্মকান্ডে অবদান রাখবে তাদেরকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি স্লাইড শো’র মাধ্যমে সবার সামনে বাংলাদেশ ও বিশ্বে আলোচিত ঘটনাগুলির ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেন। বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ওসমান গনি মনসুর।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএইচআরএফ চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট এলিনা খান। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব এ এম জিয়া হাবীব।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জি এম মাজহারুল ইসলাম, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভিসি নাজিম উদ্দিন, ডা. শফিউল আলম, বিজেএমই’র মাহবুবুর রহমান, ডিজি রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট সুলতানা আক্তার রুমি, বিভাগীয় পরিচালক (সমাজকল্যাণ) কাজী নজিবুর রহমান এবং সাংবাদিক শাহ নেওয়াজ।