দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে রুটে চলবে বুড়িমারী এক্সপ্রেস

  • আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বুড়িমারী-ঢাকা রুটে অবশেষে চালু হচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেন 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস'। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে উচ্ছ্বসিত এ অঞ্চলের মানুষ। তবে অন্য আন্তঃনগর ট্রেনের মতো বেশকিছু স্টেশনে যাত্রাবিরতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে পীরগাছা ও আদিতমারী স্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে নাগরিক কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

রেলওয়ে ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ও তিনবিঘা করিডোর পরদির্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি বুড়িমারী থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকায় চলাচলের জন্য একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ১৬ জুন সাবেক রেল মন্ত্রী মুজিবুল হক আসেন লালমনিরহাট স্টেশনে। সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। পরে ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সাবেক রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সেসময় বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুত চালু প্রতিশ্রুতি দেন।

অবশেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ১৪টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর ৬ ডিসেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' ট্রেনের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত ছিল গত বছরের ৩০ নভেম্বর। পরে সেটি পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ৬ ডিসেম্বর। এ দিনটিও পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ১৬ ডিসেম্বর। সেদিনও উদ্বোধন করা হয়নি ট্রেনটি। পরে তারিখ পুননির্ধারণ করা হয়েছিল নতুন বছরের ১ জানুয়ারি। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও উদ্বোধন হয়নি ট্রেনটি। পরে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) নতুন করে উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেনটি চালু হলে বুড়িমারী টু ঢাকার যোগাযোগের চিত্র বদলে যাবে। এতে লালমনিরহাটসহ এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
শনিবার (৯ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখার উপ-পরিচালক (টিটি) মো. শওকত জামিল মোহসী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশপত্রে ট্রেনটি উদ্বোধনের বিষযটি জানানো হয়।

নির্দেশপত্রে বলা হয়, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বুড়িমারী-ঢাকা-বুড়িমারী রুটে অবমুক্ত কোচ দিয়ে আরও এক জোড়া বুড়িমারী এক্সপ্রেস পরিচালনার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত হয়েছে। নতুন বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের নম্বর হচ্ছে ৮০৯/৮১০। এটি 'খ' শ্রেণির আন্তঃনগর ট্রেন।

বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) ঢাকা স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যাবে এবং লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। এরপর ট্রেনটি ওই স্টেশনে যুক্ত হবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট রুটের ৪৫৫ নম্বর ট্রেনের সঙ্গে। লালমনিরহাট স্টেশনে থেকে ট্রেনটি ৬টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।

অন্যদিকে বুড়িমারী কমিউটার (৪) ট্রেন বুড়িমারী স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে এসে লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে। ওই স্টেশনে ট্রেনটি যুক্ত হবে বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) ট্রেনের সঙ্গে। ট্রেনটি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৭টায়।
বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) বুড়িমারী ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার এবং বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) এর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ১৪ কোচের ট্রেনে মোট আসন থাকবে ৬৩৮/৬৫৩টি। ট্রেনের রেক বেজ ও ওয়াটারিং করা হবে লালমনিরহাটে এবং ক্লিনিং করা হবে বুড়িমারীতে।

বুড়িমারী এক্সপ্রেস যেসব স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে ৮০৯ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী বাইপাস, নাটোর, সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া, গাইবান্ধা, কাউনিয়া, লালমনিরহাট, তুষভান্ডার, হাতিবান্ধা, বড়খাতা ও পাটগ্রাম স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।

অন্যদিকে ৮১০ নম্বর ট্রেনটি পাটগ্রাম, বড়খাতা, হাতিবান্ধা, তুষভান্ডার, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, সান্তাহার, নাটোর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।

এদিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী, রংপুরের পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা ও সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গায় ট্রেনটির যাত্রাবিরতি রাখা হয়নি। ফলে এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গণজমায়াতের মাধ্যমে ট্রেন থামিয়ে যাত্রাবিরতির দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১০ মার্চ) সকালে নাগরিক কমিটির ব্যানারে পীরগাছা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কর্মসূচির মধ্যে সোমবার(১১ মার্চ) দুপুর ২টায় মানববন্ধন ও মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টায় লক্ষাধিক মানুষের গণজমায়েত করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় উপজেলার সর্বদলীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

আদিতমারী প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরহাদ আলম সুমন বলেন, আদিতমারীতে ট্রেন থামানোর দাবিতে সোমবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এতেও যদি দাবি আদায় না হয় তাহলে রেললাইনে শুয়ে আত্মমহননের মতো কর্মসুচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদিতমারীর আপামর জনগণ।
আদিতমারী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুলতান হোসেন বলেন, আমাদের দাবী একটাই বুড়িমারী এক্সপ্রেস আদিতমারীতে স্টপেজ দিতেই হবে। নইলে সারাদেশের সাথে আদিতমারীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

বামনডাঙ্গার বাসিন্দা শাহআলম কিরণ বলেন, আন্তঃনগর ট্রেন বামনডাঙ্গায় থামবে না এটা অবাস্তব। এর আগে কখনও এমনটা হয়নি। বামনডাঙ্গায় যাত্রাবিরতি দিতেই হবে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কমার্শিয়াল ম্যানেজার (ডিসিএম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১২ মার্চ ট্রেনটি চালু করা হবে। ইতিমধ্যে ট্রেনটির ট্রায়াল রানও শেষ করা হয়েছে। বুড়িমারী-ঢাকা রুট ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রেলওয়ে রুট।