বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে দায় এড়াতে লোক দেখানো অভিযান চলছে: টিআইবি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সরকারি সংস্থাগুলো নিজেদের দায় এড়াতে এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল যে যার মতো শত শত রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি।

বিজ্ঞাপন

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নানা সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স বেশ কিছু সুপারিশও প্রস্তাব করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।

নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিআইবি। মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা, সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতা বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বরাবরের মতো সমস্যার মূল কারণকে গুরুত্ব না দিয়ে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে, যাদের নির্ধারিত দায়িত্বের সঙ্গে দুর্ঘটনার মূল কারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিক এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পেছনে মূল কারণ ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করা এবং মালিক কর্তৃক ভবনে অনুমোদনবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা। এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস অনিয়মের বিষয়ে অবহিত। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ভবনের অনুমোদন ও যথাযথভাবে তদারকি করছেন না। যোগসাজশের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছেন তারা। প্রকৃত অপরাধীমহল বিচারহীনতা ভোগ করছে।

তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় নির্মম প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য না থাকার দুঃখজনক উদাহরণ। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধে জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর পুলিশ ১০ দিনে ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। রাজউক ৩৩টি ভবনে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করার পাশাপাশি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জরিমানা করেছে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে, পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।