চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিয়ের নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে চার যুকবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয়মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭ এর বিচারক বেগম ফেরদৌস আরা এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন। দণ্ডিত চারজন হলেন- নুরুল কবির (৩৩), মো. শহীদ (৩২), মো. শরীফ (৩২) ও মো. বাপ্পী (৩৪)। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ভোক্তভুগী নারীর বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়। তার প্রথম স্বামী মারা যায়। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি নুরুল কবির আত্মীয় পরিচয় দেয়া আরও তিনজনসহ তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ইসলামী শরিয়তমতে তাকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে নুরুল কবির ওই বাড়িতেই স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। বিয়ের এক সপ্তাহ পরও স্ত্রীকে নিজের ঘরে তুলে না নিয়ে নুরুল কবির তাকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাবার জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করেন। এতে তার স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়। স্ত্রীকে বাড়িতে তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করায় ৩০ জানুয়ারি নুরুল কবির ঘর থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন লোকজন তাকে ধরে ফেলে। এরপর তারা যাচাই করে দেখেন, বিয়ের সময় জমা দেয়া নুরুল কবিরের জন্ম নিবন্ধন সনদের অনুলিপিটি ভুয়া।
বিয়ের নামে প্রতারণা করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের অভিযোগে ওই নারী মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিয়ের সাক্ষী তার আত্মীয় পরিচয় দেয়া তিনজনকেও আসামি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন জানান, মামলার তদন্ত শেষে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ২০১৪ সালের ২১ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলায় আটজনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামি শরীফ ও শহীদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নুরুল কবির ও বাপ্পী জামিনে গিয়ে পলাতক আছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে আটক করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে আটক করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ভালুকা উপজেলার ভান্ডাব গ্রামের মোহাম্মদ আজিমের ছেলে মোহাম্মদ রবিন (২৩) ও নূরুল ইসলামের ছেলে কবির হোসেন (৩৫)।
সোমবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব ১৪-এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সামসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর খালেদ সাইফুল্লাহর অটোরিকশা ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে রান্দিয়া যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। পরে রান্দিয়া মুন্সীবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে আসামি কবির হোসেন অটোরিকশা চালক খালেদ সাইফুল্লাহকে পেছন থেকে চাকু দিয়ে পেটে আঘাত করে। পরে অপর আসামি মোহাম্মদ রবিন গাড়ি থামায় এবং খালেদ সাইফুল্লাহকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে ধরে রাখে। পরে আসামি কবির হোসেন আহত খালেদ সাইফুল্লাহকে ছুরি দিয়ে পরপর বেশ কয়েকটি আঘাত করে। একপর্যায়ে গলায় ছুরিকাঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আসামিরা বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকে। পরে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে র্যাব-১৪, একটি টিম ভোরে জেলার গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া এলাকায় এবং ভালুকা থানাধীন ভান্ডাব এলাকায় দুটি অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করে ও ছিনতাইকৃত অটোরিকশার তিনটি ব্যাটারি উদ্ধার করে। পরে র্যাব গ্রেফতারকৃত আসামিদের ভালুকা মডেল থানায় হস্তান্তর করে।
উল্লেখ্য, নিহত খালেদ সাইফুল্লাহর (২৮) মরদেহটি গতকাল সকালে ভালুকা উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের রান্দিয়া ব্রিজের সামনে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে মডেল থানা পুলিশ। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকার ওমর আলীর ছেলে।
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৮৩৩ নাম্বার রুম থেকে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গ্রেফতার করে।
রাত সোয়া ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, আদাবর থানা এলাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে সাবেক রেলমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন তারা।
গণমাধ্যমে বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দায়িত্বে আছে। তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই সরকার থাকার পরও আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব হচ্ছে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাব দেখা যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন মাজারে একশ্রেণির উগ্রবাদী মানুষ হামলা করছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও পীর-ফকিরদের সংগ্রাম বাংলার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখন একশ্রেণির উগ্রপন্থী সাধারণ মানুষের ধর্মীয় পুঁজিকে সহায় করে মাজারে আঘাত হানছে। এই অতি উৎসাহী জনতাকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, বাংলাদেশ যেমন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সংখ্যালঘুদের জন্য আবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে, শান্তিপূর্ণ করে তুলতে হবে, তেমনি এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম ইসলামের মধ্যে যে সংখ্যালঘু মুসলিম কমিউনিটিগুলো আছে, তাদেরও এই সরকারকেই সুরক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এই সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একশ্রেণির মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্বের সুযোগ নিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি, বিভ্রান্ত করছে; ক্ষেত্রবিশেষে হেনস্তা করছে। স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা, দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা, আইনের সুশাসন আনা এবং বিচার ব্যবস্থায় সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, দেশে গত পনেরো বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসন সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ যেভাবে ‘মোরাল পুলিশিংয়ের’ মাধ্যমে দেশের আইন-বিচার ব্যবস্থাকে মগের মুল্লুক বানিয়েছিল, সেই নিপীড়নের–জুলুমের বাংলাদেশে কেউ ফিরে যেতে চায় না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন জনগণের সরকার হয়ে উঠতে পারে। এই সরকার যেন রাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের একটি সর্বজনীন এবং মৌলিক কাঠামো প্রণয়ন করতে পারে। যার মাধ্যমে আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবে না এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, দ্রুত দেশে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণতান্ত্রিক, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরতে হবে। তবেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত এবং আত্মত্যাগ প্রকৃত মর্যাদা পাবে।