শিগগিরই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথনকশা না দিলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর জনগণের অনাস্থা তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো? শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
কত দিনের মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন দেয়া প্রয়োজন? এমন প্রশ্নের জবাবে আনু মোহাম্মদ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে সার্চ কমিটি করেছিল, সেই সার্চ কমিটি আজকে নাম জমা দেবে। সেই নামের ভিত্তিতে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। বাংলাদেশে ২০০৮ এর পরে আর কার্যত কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ থেকে হাসিনার সরকার ছিলেন মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার বা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং, আমরা মনে করি, নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্যে যে ধ্স নেমেছিল, সেটি মেরামত বা সংস্কার করতে হবে। সেটা সংস্কার করে যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
তিনি বলেন, অনেকগুলো সংস্কার আছে, যেটা দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার, সেটা নির্বাচিত একটি স্থায়ী সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে অনেকগুলো ভিত্তি তৈরি করতে পারে এই সরকার। সেটা বিভিন্ন কমিশন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে তৈরি হবে। সেই প্রক্রিয়াটা চলতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে একটি প্রস্তুতি বা পথনকশা বা উদ্যোগ গ্রহণ করা, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, কি কি পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হবে, সেটার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। যথাযথভাবে এই ঘোষণা না এলে, এটি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে একটি অনাস্থা বা অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটা থেকে বাঁচার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করা উচিত বলে আম মনে করি।
তিনি আরও বলেন, কতদিনের মধ্যে নির্বাচন চাই, সেই তারিখটা তো নির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারবো না। তবে আমরা মনে করি, সব কাজই আপনি যদি গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং দক্ষতার সঙ্গে করেন তাহলে যত সময় লাগবে, গুরুত্বে সঙ্গে না নিলে তার থেকে বেশি সময় লাগবেই। আমি মনে করি, সরকার গুরুত্বের সঙ্গে এটি গ্রহণ করবে এবং যথা শিগগিরই সম্ভব সেই বিষয়ে জনগণকে পরিষ্কার বক্তব্য দিবে। নইলে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, অনাস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি। সেগুলো যাতে বন্ধ হয়। সেজন্য সরকারের এই উদ্যোগ নেয়া দরকার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন জনগণের, বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন অংশ তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ বহু বছরে মানুষের মধ্যে বঞ্চনা আছে, মানুষের মধ্যে অনেক রকমের ক্ষোভ আছে, অনেক রকম সমস্যা আছে। সেগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। জোর-জবরদস্তি কিংবা ধরপাকড় কিংবা কেউ আন্দোলন করলে তাকে ট্যাগ লাগানো এই প্রবণতা, যেটা অতীতের সরকারের সময়ে ছিল, এটা যেনো অব্যাহত না থাকে। যেমন অটোরিক্সা বলেন কিংবা অন্যান্য পেশাজীবী বলেন, তাদের জোর-জবরদস্তি করে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এটা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে, সমাধানের পথে যেতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের মর্যাদা দিয়ে সরকারের ভূমিকা পালন করলে আমি মনে করি, অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হবে। সমাজের মধ্যে সহিংসতা কিংবা জোর-জবরদস্তির প্রবণতা থেকে আমরা রক্ষা পাবো।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সংবিধানে স্বৈরশাসন বা ক্ষমতা ও সম্পদের কেন্দ্রিকতার জন্য যে ধারাগুলো যোগ করা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা আমাদের প্রধান দাবি। আরেকটা হচ্ছে, বাংলাদেশে যে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষার মানুষ আছে, তাদের প্রতি যেনো কোনো বৈষম্য না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। এবং আমাদের বহুজাতি, বহুধর্মীয় যে চরিত্র সেটাকে নিশ্চিত করতে সংবিধানে। আর শিক্ষা, চিকিৎসাকে মৌলিক জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ বিগত কোনো সরকার সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক মোসাইদা সুলতানা, মাইকেল চাকমা, সিপিডির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডা. হারুনুর রশিদ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা, সীমা দত্ত প্রমুখ।