চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম চট্টগ্রাম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশাসনের আশ্বাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার চলমান ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।

দীর্ঘ দুই ঘণ্টা আলোচনা শেষে রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টায় এ ঘোষণা দেন সংগঠনের আহ্বায়ক মঞ্জুর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের অনুরোধে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৪৮ ঘণ্টার চলমান ধর্মঘট আমরা স্থগিত করেছি। জেলা প্রশাসক আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়েছেন, সেজন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। পরবর্তীতে এরকম কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুনরায় ধর্মঘট দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। তা চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় জেলা প্রসাসক প্রসাশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আমাদেরকে ডেকেছেন। আমরা উনার ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছি এখানে। আমরা তার প্রতি সম্মান রেখে বলবো, চুয়েটে যে দুইজন ছাত্র নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং একজন আহত হয়েছেন তার জন্য আমরা মর্মাহত। ওই ছেলেদের আমাদের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা দিয়েছি। এরপর আমাদের তিনটা গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের তিনটা গাড়ির বিষয়ে প্রশাসন আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়িগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আমরা উনার আশ্বাসকে সাধুবাদ জানাই।’

তিনি‌ আরও বলেন, 'আমরা গাড়ি চালানোর জন্য ব্যবসা করি। আমাদের কাপ্তাই সড়কের চুয়েটের সামনে বর্তমানে যে বিবাদমান আন্দোলন, এই আন্দোলনে আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত। জানি না আবার গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবো কিনা। তারপরও ডিসি মহোদয় আমাদেরকে বলেছেন, উনার কথায় আস্থা রেখে আমরা গাড়ি ছাড়ব। আমাদেরকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে, যদি আমাদের কোন গাড়ি যদি সেই দুর্ঘটনা বা আক্রমণের শিকার হয় অথবা আমাদের এবি ট্রাভেলস বা শাহ আমানতের কোন গাড়ি যদি ইচ্ছাকৃত কোন আক্রমণের শিকার হয়, উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা পুনরায় ধর্মঘট শুরু করব। জেলা প্রশাসকের আহবানে আমরা জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট স্থগিত করলাম।'

বৈঠকে মনজুর আলম বলেন, ‘কাপ্তাই সড়কে গাড়ি চললে চট্টগ্রামের সব সড়কে গাড়ি চলবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইনা। আমরা সবমসময় সরকারকে সহযোগিতা করেছি। আমরা গাড়ি চালাবো। আপনাতত আমাদের দাবিগুলো আপনি পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন আমরা আপনার আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

এর আগে সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা যে দাবিগুলো বলেছেন তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বিষয়ে আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা গাড়িগুলো চালান আমরা নিরাপত্তা দেব। প্রয়োজনে পুলিশ স্কোয়ার্ড ও আমাদের দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। আর হামলায় গাড়িগুলো কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি বিআরটিএ দেখবে। এরপর আমরা সেটির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবো। ক্ষতিপূরণের জন্য মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলব। যাতে আপনাদের তিন গাড়ির ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায়।’

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, দুইজন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার পর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি সেখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গাড়িগুলো যাওয়া আসার সময় সামনে পেছনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ স্কোয়াড থাকবে।

এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ‘সড়কের মধ্যে দাড়িয়ে যে চাদাঁবাজি করা হচ্ছে সেটি বন্ধ করুন। না হয় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। সড়কে যত্রযত্র গাড়ি থামানো যাবে না। মামলা প্রত্যাহারের যে দাবি তোলা হয়েছে সেটি আসলে তদন্তের আগে জানানো সম্ভব নয়। আর গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে মামলা কেউ করতে চাইলে করতে পারবে।’

বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর মাথায় হেলমেট ছিল না। মোটরসাইকেলেরও নিবন্ধন ছিল না বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া যে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে, সেটা ছিল ফিটনেসবিহীন। চালকের লাইসেন্স ছিল না।’

সভায় পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ৪ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের এই ঘোষণা দেয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। পরে অবশ্য তিনটি পরিবহন সংগঠন ধর্মঘট প্রত্যাখানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু, এই সংগঠগুলো টেম্পো জাতীয় পরিবহন সংশ্লিষ্ট। ফলে তাদের প্রত্যাখানে তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর জের ধরে ওইদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন।

গত ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপরও ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।

   

গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তিন প্রার্থী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একে একে সরে দাঁড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। তিন দিনে তিনজন চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এরা হচ্ছেন- মেহেরপুর- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানু, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল আলম।

ব্যক্তিগত ও ভোট সিন্ডিকেটের কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানান তারা।

গেল রবিবার (১২ মে) নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন লায়লা আরজুমান বানু। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। দিন না পেরোতেই সোমবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মোশাররফ হোসেন। নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) আবারও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন কাপ পিরিচ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উঠে আসে ভিন্ন কথা।

ঘোষণা দানকালে লায়লা আরজুমান বানুর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, পরবর্তীতে রাজনীতি করার স্বার্থেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসময় লাইলা আরজুমান বানুর চোখে ছিল জল। তিনি দাবী করেছেন- রাজনৈতিক কোন চাপে নয়, ব্যাক্তিগত কারনেই নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একেএম শফিকুল আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান ভোটযুদ্ধ ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ অব্যহত থাকবে বলেরও ঘোষণা দেন তিনি। তবে সিন্ডিকেট সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ইছার উদ্দীন, সাংস্কৃতিক সংগঠক মোরাদ হোসেনসহ একেএম শফিকুল আলমের ঘনিষ্টজনেরা।

প্রসঙ্গত, গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির এক প্রার্থীসহ আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। বর্তমানে গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে থাকলেন

পাঁচজন প্রার্থী। পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের তিনজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

;

জিম্মিদশার দিনগুলো আর মনে করতে চান না আতিক



সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'আমাদের জিম্মিদশার দিনগুলা ভাল ছিল না, এসব দিনের কথা আমরা আর মনে করতে চাই না। সবাই আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সবাইকে একসঙ্গে দেখে আরও বেশি ভালো লাগছে। সারা বাংলাদেশের মানুষজন আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, বলার মত আর কিছু নেই। আমাদের এই মুক্তির বিষয়ে যারা কাজ করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমাদের কোম্পানি কেএসআরএম, সরকারপক্ষ ও মিডিয়া কর্তৃপক্ষসহ পুরো বাংলাদেশ এর যারা আমাদের জন্য দোয়া করেছেন।'

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসে কেএসআরএমের মালিকানাধীন লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনিতে দাঁড়িয়ে বার্তা২৪.কমকে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়ান জলদস্যু কর্তৃক জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান।
এরপর জাহাজ থেকে মাটিতে পা রাখতেই প্রথমে নিজের দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি। অনুভূতির কথা জানতে চাইলে আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'অনেক ভালো লাগছে, যা বলে প্রকাশ করার মতো না। দ্বিতীয়বার জীবন পেলে মানুষের যে অনুভূতি জন্মায়, সেই অনুভূতিই এখন কাজ করছে। বড় একটি গর্বের বিষয় ছিল, যখন জলদস্যুদের থেকে লুকিয়ে জাহাজে ফেসবুক চালাতাম। তখন দেখতাম, সারা বাংলাদেশের মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করছে। যেটি আমাদের মনোবল অনেক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা এটাই ভেবে তখন মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে, আমাদের পরিবারের সঙ্গে সারা বাংলাদেশের মানুষ আছে।'


জিম্মি অবস্থায় জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে কতটুক শঙ্কিত ছিলেন?- এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, 'ওরকম তেমন বেশি অনিশ্চয়তা ছিল না। আমরা আগে থেকে জানতাম, আমাদের কোম্পানিতে আগেও একবার এরকম জাহাজে জলদস্যুর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। সে সময় ওই নাবিকদের কোপাম্পানি ছাড়িয়ে এনেছে। সেটির অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের একটি আশা ছিল, কোম্পানিও আমাদেরকে ছাড়িয়ে নিবে। আমাদের মধ্যে এই আস্থাটা ছিল। কিন্তু কবে দেশে ফিরব সেটি নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা ছিল। তারপরও সবার প্রচেষ্টা এবং দোয়াতে আল্লাহর রহমতে মাত্র এক মাসের মধ্যে আমরা মুক্ত হয়েছি। তবে এত তাড়াতাড়ি যে ফিরতে পারব সেটি আশা করিনি।'

জিম্মি অবস্থার পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান বলেন, 'আমরা একে-৪৭ এর নাম শুনেছি, অথবা টিভিতে দেখেছি। কিন্তু সরাসরি কখনো দেখিনি। জিম্মি অবস্থায় দেখলাম, জাহাজে সেই একে-৪৭ আমার দিকে তাক করে আছে। পরিস্থিতিটা অবশ্যই অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। সে সময়ে আমরা মনে মনে দোয়া করেছি, ধৈর্য ধরেছি এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখেছি। এভাবেই জাহাজের দিনগুলো কেটেছে। অনেক ভয়ঙ্কর ছিল। এসব দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। জলদস্যুরা অনেক বড় বড় মেশিনগানও এনেছিল। তবে মাঝেমধ্যে তারা যখন ফায়ার করতো, আমরা অনেকে ঘুম থেকে সজাগ হয়ে যেতাম। ওই সময়টিতে অনেক ভয় লাগতো।

ছোট্ট দুইমেয়ে কোলে নিয়ে আতিক উল্লাহ বলেন, 'আমার দুই মেয়ে প্রথমে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরেছে। ওরা দুইজনেই খুবই আনন্দিত। এর আগেও আমি যদি জাহাজে যেতাম, তখন থেকে তারা- বলে বাবা কখন আসবে। এখানে সবাই আসতে পারেনি, বাসায় পরিবারের অনেকজন অপেক্ষা করছে। আমরাও তাদের দিকে মুখিয়ে আছি।'


এদিকে দীর্য়দিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে খুশি আতিক উল্লাহর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইয়াশরা ফাতেমা বলে, 'বাবাকে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। সামনে ২৩ তারিখ থেকে আমাদের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলে বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। ঈদের সময় তেমন বেড়াতে পারিনি। এবার বাবাকে নিয়ে বেড়াবো।'

এদিন বিকেল চারটায় ২৩ নাবিককে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে লাইটার জাহার এমভি জাহান মনি। এর কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই নাবিকদের এক নজর দেখতে বন্দর জেটিতে ভিড় করেছেন নাবিকের স্বজনরাসহ শতশত মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ২৩ নাবিক নিয়ে রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩। বিকেল চারটায় অবসান হয় অপেক্ষার দীর্ঘ দুমাসের অপেক্ষার। এর মধ্যেই শুরু হয় নাবিকদের বরণের উৎসব। লাল রঙের জাহাজটি বন্দরে ভিড়ার কয়েক মিনিট আগে থেকেই নাবিকরা দূর থেকে হাত নেড়ে জানান দেন, আমরা এসেছি! এদিকে জেটিতে থাকা স্বজনরাসহ সকলে তাদেরকে হাত উঁচিয়ে স্বাগত জানায়। এরপর ৪টা ১৮ মিনিটের দিকে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন ২৩ নাবিক। নাবিকদের বরণ করে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা। নাবিকদের কাছে পেয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় জেটি এলাকায়।

এর আগে সোমবার (১৩ মে) বিকেল ৬টায় বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ২৩ নাবিকসহ নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ।

এমভি আব্দুল্লাহতে ছিলেন যে ২৩ নাবিক:

জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

আগে ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন জাহাজটি ৩২ দিন জলদস্যুর কাছে জিম্মি থাকে। এরপর ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দেওয়ায় জাহাজ থেকে নেমে যায় জলদস্যুরা।

;

গাইবান্ধায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ৪



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ৪

গাইবান্ধায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক নারী তার সাবেক স্বামীকে নিয়ে ঘরে অবস্থান করার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ওই নারীকে নির্যাতন ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামি মোনারুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুর ২টার দিকে পালিয়ে থাকা মোনারুলকে (৩৫) উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রধান আসামি মোনারুল ইসলাম ওই গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে এবং এই নারীর প্রথম স্বামী।

এছাড়া একই ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকালে শাহজাহান আলী (৪৮), আব্দুর ছাত্তার (৫৫) ও চামেলি বেগম (৪০) নামের আরো তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ৩৫ বছর বয়সী ওই নারীর নাম ছকিনা বেগম। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। অসুস্থজনিত কারণে প্রায় ১৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। প্রতিপক্ষরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর উদ্দেশে দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করে আসছিল। সর্বশেষ গত রোববার রাতে পরিকল্পিতভাবে নারীর প্রথম স্বামী মোনারুল ইসলামকে তার শোয়ার ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। মোনারুল নারীর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। পরে সুযোগ বুঝে মোনারুল ইসলাম ওই নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন এগিয়ে আসায় মোনারুল পালানোর চেষ্টা করলেও ওই নারী তাকে জাপটে ধরে আটক করেন। ফলে মোনারুল আটক পড়ে। কিন্তু এঘটনার পরিকল্পনাকারী প্রতিপক্ষরা ওই নারীর কাছ থেকে মোনারুল ইসলাম ছিনিয়ে নেয়। পরে সাবেক স্বামীকে ঘরে ঢোকানোর অপবাদ দিয়ে ওই নারীকে দুষ্চরিত্রের প্রশ্ন তুলে তার বাড়ির সামনের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারপিট করা হয় এবং মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।

এঘটনায় পরদিন সোমবার ছকিনা বেগম নিজেই বাদি হয়ে মোনারুলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গতকাল তিনজন এবং আজ প্রধান আসামি মোনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্থানীয়দের খবরে ওই রাতেই নারীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন এ ঘটনায় ওই নারী নিজে বাদি হয়ে সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি মোনারুল ইসলামসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি তারা দ্রুতই গ্রেফতার হবেন।

;

কতদিন পরে এলে…



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেদিরাঙা আঙুল। হাতে নিজের বানানো কেক। আর এক গোছা রজনীগন্ধা। হিজাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখটার উচ্ছ্বাস দেখা না গেলেও আঁচ করা যাচ্ছে সহজেই। জলদস্যুদের ঢেরায় টানা এক মাসের দমবন্ধ টানাপোড়েন, কত শত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, বাঁচা-মরার লড়াই পেরিয়ে দেশে ফেরা স্বামী নূরউদ্দীনসহ ২৩ নাবিককে নিয়ে আসা এমভি জাহান মণি চোখের দৃষ্টিসীমায় হাজির হতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন জান্নাতুল ফেরদৌস। একটু পর ভিড় ঠেলে এই নারী এগিয়ে গেলেন জাহাজ ছোঁয়া দূরত্বে। মই বেয়ে স্বামী নামতেই বলে উঠলেন, ‘বাড়িয়ে দাও, তোমার হাত, আমি আবার তোমার আঙুল ধরতে চাই।’

৮ মে ছিল নূরউদ্দিন-জান্নাতুল দম্পাতির বিয়ের চার বছর পূর্তি। গত বছরের ২৫ নভেম্বর নূরউদ্দিন বিদায় নেওয়ার সময় কথা দিয়েছিলেন একসঙ্গে দিনটি দুজনে কাটাবেন একান্তে। কিন্তু স্বামী দস্যুদের কবলে পড়ে এক মাস জিম্মি থাকায় দীর্ঘ হয়েছে জান্নাতুলের অপেক্ষা। স্বামী পাশে ছিলেন না বলে ঈদেও ছিল না হাসি, বিবাহ বার্ষিকীর দিনেও এই নারীর সঙ্গী ছিল মনখারাপী। অবশেষে স্বামী নিঃশ্বাসের দূরত্বে। জান্নাতুলও তাই বহুদিনের দুঃখের পর পেলেন হাসার একটা দিন!

নাবিকেরা জাহাজ থেকে নামতেই পড়তে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে। এই ‘মধুর যন্ত্রণা’ এড়াতে স্বামীকে ভিড় থেকে একটু দূরে নিয়ে যান জান্নাতুল। স্বামীকে পাশে বসিয়ে মনে মনে যেন বলছিলেন-‘কতদিন পরে এলে, একটু বসো। তোমায় অনেক কথা বলার ছিল যদি শোন।’ নূরউদ্দিনও উজাড় করে বলছিলেন জমানো সব কথা। কীভাবে জিম্মি হলেন, কেমন কেটেছিল দস্যুদের সঙ্গে কাটানো সেই সব ভয়াল দিনরাত্রী, তারপর মুক্তির আনন্দ, দেশে ফেরা-সবকিছুই।

‘ব্যক্তিগত আলাপ’ শেষ হলো, এবার আর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বাঁধা নেই জান্নাতুলের। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘কতদিন মানুষটাকে দেখিনি। দস্যুদের ভারী অস্ত্রের মুখে ছিল, ভয়ে গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্বামী বারবার আশ্বস্ত করছিল দস্যুরা কিছুই করেনি। তবুও একটু কাছাকাছি বসে ভালোভাবে পরখ করলাম দস্যুরা কোনো আঘাত করেনি তো। স্ত্রীর মন-বোঝেন তো?’ কথা শেষ করে আরও একবার অট্টহাসি জান্নাতুলের।

স্বামী আসবেন, তাকে নিজের চোখে সরাসরি দেখবেন-সেই অপেক্ষায় রোববার রাতভর ঘুম হয়নি জান্নাতুলের। ‘রাত ২টা পর্যন্ত কেক বানালাম, স্বামীর পছন্দের খাবার রান্না করলাম। এরপর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু রাত চারটা হতেই ভেঙে যায় ঘুম। তারপর থেকে শুধুই অপেক্ষা-কখন বাজবে বিকেল চারটা। এক টানা বলে গেলেন জান্নাতুল।

জাহাজ থেকে নামছেন নাবিকেরা

নাবিক মানেই জলে ভাসা জীবন। এই বন্দর থেকে ওই বন্দরে ছুঁটে চলা। তুমুল একাকীত্ব তো আছেই, সঙ্গে আছে সামুদ্রিক ঝঞ্ঝা আর দস্যুদের শিকার হওয়ার ভয়। ২০২০ সালে নূরউদ্দিনকে বিয়ের আগে কেউ কেউ সেই সব কথা মনেও করিয়ে দিয়েছিলেন জান্নাতুলকে। কিন্তু এসব কিছুই গ্রাস করতে পারেনি এই তরুণীকে, নূরউদ্দিনকে যে তার খুব মনে ধরে গিয়েছিল। সেই কথা আরেকবার তুলে ধরে বললেন, ‘প্রথম যখন শুনলাম তাদের জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়েছে। তখন যেন আমার পুরো পৃথিবীটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ সে আমার কাছে ফিরে এসেছে। এই যে হাসছি, এই উপলক্ষ পেতে বহুদিন কাঁদতে হয়েছে আমাকে।’

স্বামীকে নিয়ে একসঙ্গে বিয়ে-বার্ষিকীর কেক কাটা হয়নি বলে কি ফুরিয়ে যাবে উৎসব। সেটি যে হওয়ার নয়। হাতে তাই তো জান্নাতুল মেহেদী লাগিয়েছেন। নিয়ে এসেছেন নিজের বানানো দুটি চকলেট কেক। মেহেদিরাঙা হাত দেখিয়ে নিজেই বললেন, ‘ওকে তো হারিয়েই ফেলেছিলাম। এখন নতুন করে আবার পেলাম। ও যেমন নতুন জীবন পেল, আমিও তো স্বামীকে নতুন করে পেলাম। দিনটি স্মরণীয় রাখতেই হাতে মেহেদী লাগানো, কেক বানানোর এত এত আয়োজন।’

মায়ের কোলে চড়ে বাবাকে অভিবাদন জানাতে আসা আড়াই বছরের সাদ বিন নূরের অবশ্য বাবা কি সেটি এখনো ঠিকঠাক বোঝার বয়স হয়নি। আনমনে নিজের ছন্দে খেলছিল সে। মাঝে মাঝে আবার শিশুমনের দুষ্টুমিও করছিল। কিন্তু বাবা হাত বাড়াতেই যেভাবে বুকে লুকিয়ে চুপসে গেল-বোঝা গেল বাবার ওমের অপেক্ষায় ছিল সেও।

ছেলেকে কোলে নিয়ে নূরউদ্দিনও আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। এই যে ছেলে আবার পুনর্দখল করল বাবার বুক, কেমন লাগছে- প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক গুছিয়ে বলতে পারলেন না নূরউদ্দিন। অস্ফুট স্বরে শুধু বলছিলেন, ‘দস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে ছেলের মুখটা চোখে ভাসত। আমি না থাকলে ছেলের কি হবে ভাবতাম। আর মনে পড়ত মা-বাবা-স্ত্রীর কথা। আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাদের পুনরায় বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরা যেন দ্বিতীয় জীবন পেলাম।’

সময়ের বয়স বেড়েই চলেছিল। ঘড়ির কাটায় তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা পেরিয়ে ছয়টার ঘরে ছুঁটছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে নাবিকদের বরণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়োজনও শেষের দিকে। এবার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ঘরে ফেরার পালা।

তার আগে স্বামীকে এরপর কি সমুদ্রে পাঠাবেন-আশপাশ থেকে এই প্রশ্নটা উড়াউড়ি করতেই মনটা যেন ফের বিষণ্ন হয়ে ওঠল জান্নাতুলের। আদ্র হয়ে ওঠে চোখের পাতা। ছায়াছবির মতো যেন এই নারীর চোখের পর্দায় ভেসে ভেসে আসছিল স্বামীর জিম্মির সেই শেষ হতে না চাওয়া ৩০ দিন। আবেগ কিছুটা প্রশমিত করে শুধু বললেন, ‘সমুদ্রই তো ওর জীবন-জীবিকা আর আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাই সমুদ্রে তো যেতেই হবে।’

দূরে কোথাও তখন যেন ভেজানো কণ্ঠে কেউ গেয়ে চলছিলেন রবীন্দ্রনাথের সেই অমর সংগীত-‘দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক তবে তাই হোক।'

;