‘আগামী ৬ মাস আর সমুদ্রে যাবো না, পরিবারকে সময় দিব’

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘আগামী ৬ মাস আর সমুদ্রে যাবো না, পরিবারকে সময় দিব’

‘আগামী ৬ মাস আর সমুদ্রে যাবো না, পরিবারকে সময় দিব’

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৩ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর এ এস এম সাইদুজ্জামান।

বুধবার (১৫ মে) দুপুরের দিকে নিজ গ্রামে ফিরেছেন এতে খুশির বাঁধ ভেঙেছে পরিবারের মাঝে। সাইদুজ্জামান’র বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার পলিটেকনিক অ্যাভিনিউ এর দুবলহাটি রোডে পাশে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার বিকেলে সাইদুজ্জামানের নিজ বাড়িতে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আগামী ৬মাস আর সমুদ্রে যাবো না, পরিবারের সাথে আপন সময়গুলো কাটাতে চাই৷ পরে হয়তো আবার সমুদ্রে ব্যাক করবো।’

সাইদুজ্জামান বলেন, মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লার কার্গো নিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম দুবাইয়ের এয়ারপোর্টে। আমরা ওখানে সোমালিয়া জোন থেকে অনেক নিরাপদ স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাদের এরিয়া থেকে প্রায় সাড়ে চারশো নটিক্যাল মাইল, যেটা মাইলের হিসেবে প্রায় ৫৫০ মাইল এর কাছাকাছি হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ দুর্ভাগ্যবশত গত মার্চের ১২ তারিখে ছোট বোর্ড এর মতন যেটা তাদের ডাকাতি করে আনা। হঠাৎ করেই সেখান থেকে এসে আমাদের জাহাজে অ্যাটাক করে। আমরা যেহেতু সেইফ জোনে ছিলাম, সেক্ষেত্রে আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে তারা আক্রমণ চালাবে। তারা  আমাদেরকে থামানোর জন্য গুলি ছুড়াছুড়ি করছিলো। জাহাজে উঠে আমাদের একজন নাবিককে তারা জিম্মি করে ফেলে। আমাদের নিয়ম- যে কেউ যদি জিম্মি হয় তাহলে আমাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আমরা তখন গোপন কক্ষে ছিলাম। তখন তাদের কমান্ডে আসা ছাড়া কিছু করার ছিল না। তারা আমাদের আশেপাশে প্রায় ৬০/৬৫ জনের মত থাকতো কিন্তু যখন আমাদেরকে ডাকাতরা ছেড়ে দেয়, তখন ৬৬ জনকে গুনেছিলাম।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে সাইদুজ্জামান বলেন, আমরা বন্দি অবস্থায় যতোই মনোবল ধরে রেখেছিলাম। এমনও ঘটনা আছে, যেখান থেকে নাবিকরা আর ফিরে আসতে পারে নাই। এমন ও রেকর্ড আছে, বাংলাদেশের কিছু ছেলে অন্য একটা বিদেশি কোম্পানিতে ছিল, তারা প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ বছর জাহাজে থাকার পরে তাদের জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। আবার তাদেরকে সাগরে ফেলে দিয়েছিল, তারা সাঁতার কেটেও পালিয়ে এসেছিল। আমরা এখন থেকে যে আসতে পেরেছি বা মুক্তি হতে পেরেছি, এজন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করি। বাংলাদেশের সকলে আমাদের জন্য দোয়া করেছেন, রোজার মাস ছিল, এজন্য আল্লাহ আপনাদের দোয়া শুনেছেন, আমাদের দোয়া শুনেছেন। আমরা ফিরে আসতে পেরেছি। দেশে আসার পরে যখন দেখলাম সত্যিই বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন আমরা আরও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছি। পরিবারের কাছে যখন ফিরে এসেছি, সেটার আনন্দের ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। যেখানে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সেখানে একটা কিছু মিসিং হবে সেখান থেকে ফিরে এসে সবাই খুশি।

সাইদুজ্জামান’র স্ত্রী মাননা তাহরীন বলেন, সবার প্রথমে সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা জানাই ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি এতোই খুশি যে, ভাষায় প্রকাশ করার মত না। গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে- চট্টগ্রামে একটা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। আজকে সকালে রাজশাহী এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম, আমার স্বামীকে রিসিভ করার জন্য। আমি তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছি, সেও আমার জন্য ফুল এনেছে। এরপর বাসায় এলাম। তাকে ফিরে পেয়ে আমি অনেক খুশি।