যাত্রী সংকটে বরিশাল-ঢাকা রুটে চলছে একটি লঞ্চ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল-ঢাকা নৌ-পথে যাত্রী সংকট চরম আকার ধারন করেছে। এ কারণে জনপ্রিয় এই রুটে এখন একটিমাত্র লঞ্চ চলাচল করছে। মঙ্গলবার বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে মাত্র একটি লঞ্চ। বুধবার (১৫ মে) ছেড়ে গেছে দুইটি। যা সাধারণ মানুষের কাছে বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে।

পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে বরিশাল-ঢাকা নৌ-পথে যাত্রী সংকট শুরু হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পূর্বে প্রতিদিন উভয় রুটে ৭ থেকে ৮ টি লঞ্চ চলাচল করতো। সেখান থেকে কমে অর্ধেকে নেমে আসে। এখন তা একটিতে নেমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের যাত্রী মো. লোকমান হোসেন বলেন, বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে মাত্র একটি লঞ্চ চলবে তা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। এ বিষয়ে বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে একটি করে লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রী সংকটের ফলে মালিক পক্ষের রোটেশনের কারনে একটি করে লঞ্চ চালানো হচ্ছে। কিন্তু দুইটি করে লঞ্চ চালানোর কথা ছিল।

তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিদিন ৫/৭ শ’র বেশি যাত্রী হয় না। একটি লঞ্চ দিয়ে তা পরিবহন সম্ভব। তাই হয়তো মালিকরা মিলে একটি করে লঞ্চ চালাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

একটি করে লঞ্চ চালানোর জন্য যাত্রী ভোগান্তি হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সদ্য অবসরে যাওয়া পরিদর্শক মো. কবির হোসেন। তিনি বলেন, বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য ২০ টি লঞ্চ রয়েছে। 

প্রতিদিন ঢাকা থেকে ৬/৭টি এবং একইভাবে বরিশাল থেকে ৬/৭টি ছেড়ে যেতো। ঈদ ও কোরবানির সময় একেকদিন ২০/২৫ টি লঞ্চও চলাচল করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী সংকট শুরু হয়। বর্তমানে যে যাত্রী রয়েছে তাতে দুইটি লঞ্চ ঠিক ছিল। কিন্তু একটি লঞ্চ চলাচল যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটি লঞ্চ চালানোর কারণে কেবিন নিয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নয়-ছয় করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি লঞ্চে ঠাসা যাত্রী। তবে সেটি ধারণ ক্ষমতার বেশি নয়। লঞ্চের নিচতলা ও দুই তলার ডেকে যাত্রী ভর্তি। লঞ্চ যাত্রীরা জানিয়েছেন, দুইটি লঞ্চ থাকলে তারা স্বাচ্ছন্দে যেতে পারতেন। কিন্তু একটি লঞ্চ হওয়ায় গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লঞ্চ কর্মচারীরা জানান, যত যাত্রী রয়েছে তা নিয়ে দুইটি লঞ্চ চললে আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই একটি লঞ্চ চালানো হচ্ছে। তারা স্বীকার করেছেন, একটি লঞ্চ চলাচল করায় যাত্রীরা একটু গাদাগাদি হয়।

দেশের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নৌ-রুট বরিশাল-ঢাকা। লিফটসহ নানা অত্যাধুনিক সুবিধার লঞ্চগুলোতে এক সময় যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড় থাকত। ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমি ভিআইপি,  প্রথম শ্রেণির এক শয্যা ও দুই শয্যার কেবিন, সোফা পেতে হেনস্তা হতে হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু পাল্টে দেয় সেই চিত্র। যাত্রী সংকটের কারণে লঞ্চের সংখ্যা কমতে শুরু করে।

অভিযোগ রয়েছে, যাত্রী সংকটের অজুহাত দিয়ে বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চ মালিকরা সিন্ডিকেট করে। তারা রোটেশনের মাধ্যমে লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এখনো যত সংখ্যক যাত্রী রয়েছে তাতে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি লঞ্চ প্রয়োজন। কিন্তু মালিকরা বিআইডব্লিউটিএ ও যাত্রীদের জিম্মি করে একটি/দুইটি লঞ্চ চালায়। এতে ভোগান্তিতে যাত্রীরা।

তবে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, যাত্রী সংকটে লঞ্চ এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রত্যেক লঞ্চ মালিক কম বেশি ঋন নিয়েছেন। তারা এখন ঠিকমতো ঋনের টাকা পরিশোধ করতে পারেন না। একটি লঞ্চ ব্যাংক নিয়ে গিয়ে কেটে বিক্রি করছে। এক স্বনামধন্য কোম্পানীর একটি লঞ্চ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

শুধু ঢাকা বরিশাল নয়, দক্ষিনাঞ্চলের সকল রুটে যাত্রী নেই জানিয়ে সুন্দরবন নেভিগেশনের মালিক রিন্টু বলেন, এ ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এজন্য সরকারকে পরিকল্পনা নিতে হবে।