‘ঘর পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পেয়েছি’
![ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Jun/11/1718105652122.jpg)
ছবি: বার্তা২৪.কম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি, পানি পেয়েছি। এতে মেয়েদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস ও শক্তি পেয়েছি। আমরা আপনার কাছে ঋণী।
কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার দরগাহ আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সুবিধাভোগী হোসনে আরা বেগম। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী ২ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। পেয়েছেন প্রতিবন্ধী কার্ডও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে সে কৃতজ্ঞতা যেনো প্রকাশ করলেন নত মস্তকে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে আশ্রয়ণ-২ পরিকল্পনার আওতায় সারাদেশে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিন সকাল ১১টায় সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। পরে সুবিধাভোগীদের সাথে কথা বলেন তিনি।
হোসনে আরা বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী। অনেক সময় না খেয়ে সময় পার করে দিয়েছি। মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেছি। প্রতিবন্ধী বলে স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। কেউ সাহায্য করেনি। মানুষের কাছে অনেক কটু কথা, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছি। আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। মনে হয়েছিলো যেনো মরে যাই কিন্তু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মরতে পারিনি।
দুইটা মেয়ে, চার ছেলের জনক রবিউল আলম। তিনিও ঘর পেয়েছেন একই প্রকল্পে। মৎস্যজীবী হিসেবে সাগরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন। তিনি বলেন, নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলে কখনো মাছ পাই, কখনো পাই না। আমার ছেলে মেয়ের না খেয়ে থাকতে হতো। যখন ঝড়বৃষ্টি হয় আমার ছেলেমেয়ের জন্য অনেক কষ্ট হতো, কান্না করতাম।
এখন ঘর পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জানিয়ে এই জেলে বলেন, আমার কোন ঘর ছিলো না। আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বাড়ি হবে, ঘর হবে। এখন আমার বাড়ি হয়েছে আপনার জন্য। জায়গা পেয়েছি, ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি। এখন আমার ছেলে মেয়ে পড়াশোনা করতে পারে। আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। আমার জেলে কার্ড আছে সেই কার্ডের মাধ্যমে চাল পাই, খাবার পাই।
ভোলার চরফ্যাশন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বিধবা বিবি আয়েশা। তিনি বলেন, নদী আমার বাড়ি ঘর ভাইঙ্গা ফেলেছে। ২৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে লিভার ক্যান্সারে। আমার একটা ভাঙো ঘর ছিলো, আমার কোন সামর্থ্য ছিলো না একটা টিন ঘরে লাগানোর। আপনি ঘর দিয়েছেন, বিদ্যুৎ দিছেন, স্কুল দিছেন, ঘাটলা দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি কখনো ভাবি নাই, আমি একটা ঘর পাবো। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করি যেনো আপনি ভাল থাকেন।
ঝালমুড়ি বিক্রি করেন বাবু মিয়া। নিজের বাড়ি ঘর বলতে কিছু ছিলো না। এখন সে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি জমিসহ ঘরের মালিক। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনি ঘর দিয়েছেন আমরা অনেক সুখে আছি। আমার যখন ঘর ছিলো না তখন অনেক কষ্টে থেকেছি। হোটেলে কাজ কাম করতাম। বাড়িতে থাকার জায়গা ছিলো না। মানুষের বাড়িতে থেকেছি। আমার মা বৃদ্ধ ছিল। আমরা মা ছেলে মিলে হোটেলে কাজ করতাম। কিন্তু থাকার জায়গা ছিলো না। সারাদিন কাজ করে, সারা রাত জেগে আবারও সকালে হোটেলে চলে যেতাম। ছেলে মেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে থাকতাম।
ঝর-বৃষ্টিতে মাথা গোঁজার জায়গা ছিলো না উল্লেখ করে বাবু মিয়া আরও বলেন, আমার মেয়ে বলতো, বাবা আমাদের কি কখনো বাড়ি হবে না? আমি বলতাম, ধৈর্য ধরো মা, আমাদেরও হবে একদিন। কিন্তু আমি অসুস্থ মানুষ, কিভাবে হবে কিছুই বুঝতাম না। প্রধানমন্ত্রী আপনার চেষ্টায় আজকে ঘর পেয়েছি। আজকে আমি খুব ভাল আছি।
সবার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে ঘর পাচ্ছেন এটা আপনাদের নিজের সম্পত্তি, এটার যত্ন নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব।
এসময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুঁটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষে কল্যাণে ও তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তিনি।