‘ঘর পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পেয়েছি’



রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি, পানি পেয়েছি। এতে মেয়েদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস ও শক্তি পেয়েছি। আমরা আপনার কাছে ঋণী।

কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার দরগাহ আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সুবিধাভোগী হোসনে আরা বেগম। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী ২ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। পেয়েছেন প্রতিবন্ধী কার্ডও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে সে কৃতজ্ঞতা যেনো প্রকাশ করলেন নত মস্তকে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে আশ্রয়ণ-২ পরিকল্পনার আওতায় সারাদেশে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিন সকাল ১১টায় সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। পরে সুবিধাভোগীদের সাথে কথা বলেন তিনি।

হোসনে আরা বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী। অনেক সময় না খেয়ে সময় পার করে দিয়েছি। মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেছি। প্রতিবন্ধী বলে স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। কেউ সাহায্য করেনি। মানুষের কাছে অনেক কটু কথা, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছি। আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। মনে হয়েছিলো যেনো মরে যাই কিন্তু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মরতে পারিনি।

দুইটা মেয়ে, চার ছেলের জনক রবিউল আলম। তিনিও ঘর পেয়েছেন একই প্রকল্পে। মৎস্যজীবী হিসেবে সাগরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন। তিনি বলেন, নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলে কখনো মাছ পাই, কখনো পাই না। আমার ছেলে মেয়ের না খেয়ে থাকতে হতো। যখন ঝড়বৃষ্টি হয় আমার ছেলেমেয়ের জন্য অনেক কষ্ট হতো, কান্না করতাম।

এখন ঘর পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জানিয়ে এই জেলে বলেন, আমার কোন ঘর ছিলো না। আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বাড়ি হবে, ঘর হবে। এখন আমার বাড়ি হয়েছে আপনার জন্য। জায়গা পেয়েছি, ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি। এখন আমার ছেলে মেয়ে পড়াশোনা করতে পারে। আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। আমার জেলে কার্ড আছে সেই কার্ডের মাধ্যমে চাল পাই, খাবার পাই।

ভোলার চরফ্যাশন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বিধবা বিবি আয়েশা। তিনি বলেন, নদী আমার বাড়ি ঘর ভাইঙ্গা ফেলেছে। ২৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে লিভার ক্যান্সারে। আমার একটা ভাঙো ঘর ছিলো, আমার কোন সামর্থ্য ছিলো না একটা টিন ঘরে লাগানোর। আপনি ঘর দিয়েছেন, বিদ্যুৎ দিছেন, স্কুল দিছেন, ঘাটলা দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি কখনো ভাবি নাই, আমি একটা ঘর পাবো। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করি যেনো আপনি ভাল থাকেন।

ঝালমুড়ি বিক্রি করেন বাবু মিয়া। নিজের বাড়ি ঘর বলতে কিছু ছিলো না। এখন সে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি জমিসহ ঘরের মালিক। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনি ঘর দিয়েছেন আমরা অনেক সুখে আছি। আমার যখন ঘর ছিলো না তখন অনেক কষ্টে থেকেছি। হোটেলে কাজ কাম করতাম। বাড়িতে থাকার জায়গা ছিলো না। মানুষের বাড়িতে থেকেছি। আমার মা বৃদ্ধ ছিল। আমরা মা ছেলে মিলে হোটেলে কাজ করতাম। কিন্তু থাকার জায়গা ছিলো না। সারাদিন কাজ করে, সারা রাত জেগে আবারও সকালে হোটেলে চলে যেতাম। ছেলে মেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়িতে থাকতাম।

ঝর-বৃষ্টিতে মাথা গোঁজার জায়গা ছিলো না উল্লেখ করে বাবু মিয়া আরও বলেন, আমার মেয়ে বলতো, বাবা আমাদের কি কখনো বাড়ি হবে না? আমি বলতাম, ধৈর্য ধরো মা, আমাদেরও হবে একদিন। কিন্তু আমি অসুস্থ মানুষ, কিভাবে হবে কিছুই বুঝতাম না। প্রধানমন্ত্রী আপনার চেষ্টায় আজকে ঘর পেয়েছি। আজকে আমি খুব ভাল আছি।

সবার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে ঘর পাচ্ছেন এটা আপনাদের নিজের সম্পত্তি, এটার যত্ন নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব।

এসময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুঁটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষে কল্যাণে ও তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তিনি।

রাজবাড়ীতে হেরোইনসহ ২ নারী গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

একমাস আগে মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের পূর্বমৌকুড়ী গ্রামের বাসিন্দা চৈতন্য দাস (৪০)। সেই মামলায় বর্তমান রাজবাড়ী জেলে রয়েছে সে। জেলে থাকলেও থেমে নেই চৈতন্যের মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসার দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী পাবর্তী দাস (৩৫) ও বোন দিপা দাস (৩০)।

পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা চালিয়ে যান মাদক ব্যবসা। শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ২৮৫ পুড়িয়া হেরোইনসহ ভাবী ও ননদকে বহরপুর রেলগেট সংলগ্ন এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এখন তারা হাজতে।

শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে এভাবেই হেরোইনসহ দুই নারীর আটকের বিষয়টির বর্ণনা দেন বালিয়াকান্দি থানার এসআই রাজিবুল ইসলাম।

তিনি জানান, চৈতন্য মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে আগে আরও মাদক মামলা রয়েছে। গত জুন মাসে তিনি নিজে তাকে গ্রেফতার করে রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করেন। এরপর তার মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তার স্ত্রী ও বোন। তার বোন দিপা দাস রাজবাড়ী সদরের বিনোদপুর গ্রামের কৃঞ্চ দাসের স্ত্রী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম ও এএসআই মিরাজুল ইসলাম তাদের হেরোইনসহ আটক করেন।

বালিয়াকান্দি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত ২ নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে তাদের রাজবাড়ী আদালতে পাঠিয়েছেন।

;

তারেক রহমানের নির্দেশে এমন সহিংসতা, কাউকে ছাড় নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোনো শিক্ষার্থী হামলা অগ্নিসংযোগ করতে পারে না। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের কাছে সকল প্রমাণ আছে। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। পুলিশ তদন্ত করছে। ছাত্রদের আন্দোলনে প্রবেশ করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হবের আমরা এটি করতে বদ্ধপরিকর।

শনিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত কোটা সংস্কারের নামে বিএনপি, জামায়াত কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের প্রতিবাদে মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,আজকে রাষ্ট্র আক্রান্ত। এই রাষ্ট্রের ওপরে হামলা তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে। গতকাল তারা (বিএনপি নেতারা) শিকারোক্তি দিয়েছে, ছাত্রলীগ মারলে পাঁচ হাজার ও পুলিশ মারলে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, যদি একটু ধৈর্য ধরা হতো তাহলে ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দেশ বিরোধী অপশক্তি এই সুযোগ নিতে পারতো না। আর দেশের সম্পদের এমন অবস্থাও হতো না। ছাত্র নেতাদেরও এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। ছাত্র নেতাদেরও বিষয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার। তাদের মধ্যে দেশ বিরোধী অপশক্তি জঙ্গি গোষ্ঠীর কোনো এজেন্ট আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে। 

মন্ত্রী বলেন, দেশে যখন ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে তখন সেই বিভাগের কর্মকর্তারাই দুর্যোগ কবলিত মানুষের কাছে ছুটে যান। কিন্তু, এখন সেই মন্ত্রণালয়েও আগুন দিয়েছে। এটি রাষ্ট্রের ওপরে হামলা। যে সেতু ভবন পদ্মা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেছে সেই সেতুভবনকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডাটা সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে যার কারণে বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে সাবমেরিন কেবলগুলোকে কেটে দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ঢাকাবাসীর গর্ব মেট্রোরেলে হামলা চালিয়েছে। ফুটওভার ব্রিজে আগুন দেওয়া হয়েছে। এক হাজারের বেশি গাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এসব যারা করেছে এবং যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

;

চেনা ছন্দে চট্টগ্রাম নগরী, সড়কে ব্যাপক যানজট



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
সড়কে ব্যাপক যানজট, ছবি: বার্তা২৪.কম

সড়কে ব্যাপক যানজট, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় ১০ দিন পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে যান চলাচল একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছে। এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে চালু হয়েছে।

শনিবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকেই সড়কে ছিল যানবাহনের উপচেপড়া ভিড়। কোথাও কোথাও ব্যাপক যানজটেও পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, সংঘর্ষ আর কারফিউ ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে বলতে গেলে চট্টগ্রামে অচলাবস্থা শুরু হয়। গত কয়েকদিন ধরে কারফিউ শিথিল থাকলেও শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে আশপাশের জেলা ও উপজেলায় গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সংখ্যা ছিল কম। তবে শনিবার সকাল থেকে পুরোদমে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে।

শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর চান্দগাঁও থানা মোড়ে দেখা যায়, পাঁচদিকেই গাড়ির জট। এর মধ্যে মোড়ের দুদিকের সড়কে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে যানজট। এই মোড়ে বেশ কিছু পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে। চকরিয়া-পেকুয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারগামী গাড়ি এখান থেকেই বেশিরভাগ ছেড়ে যায়। এই মোড়ের বিভিন্ন কাউন্টারে ঢু মেরে দেখা যায় যাত্রীদের প্রচুর ভিড়। টিকিট দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল কাউন্টারের কর্মীদের।

এখানকার পূরবী ও মার্চা নামের দুটি পরিবহনের কাউন্টারের কর্মীরা জানান, শনিবার সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় তৈরি হয়েছে। এতদিন অল্প বিস্তর গাড়ি ছেড়ে গেলেও আজ আগের মতো প্রায় সব গাড়িই ছেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপও সামলাতে হচ্ছে।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে সীমিতভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হলেও তারা এতদিন পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরিস্থিতি ভালো দেখায় গন্তব্যে ফিরছেন। অন্যদিকে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সেজন্য বাসের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে।

স্ত্রীকে নিয়ে চকরিয়ার গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন প্রবীণ সাহাব উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে দেখাতে নগরীতে চট্টগ্রামে এসেছিলেন। ওঠেছিলেন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মেয়ের বাসায়। তখন চিকিৎসক দেখালেও ঝামেলা শুরু হওয়ায় বাড়িতে ফিরতে পারেননি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন।

একইভাবে যানজট দেখা গেছে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দু নম্বর গেট ও জিইসি মোড় এলাকায়ও। অবশ্য প্রতিটি মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এতদিন কারফিউ শিথিলের সময়সীমা ১২ ঘণ্টা থাকলেও শনিবার কারফিউ শিথিলের সময়সীমা দুই ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। সকাল ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ায় শিথিলের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। তাই আরও দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথার প্রমাণ মিলল সড়কগুলোতেও।

;

৫৩ বছরেও হয়নি ব্রিজ, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বার্তা ২৪

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ও তিলকপুর ২ ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে ছোট যমুনা নদী। দুই ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা দড়িটানা নৌকা। প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মানুষ দুই ইউনিয়নে যোগাযোগ করে একটি মাত্র নৌকার উপর ভর করে। যুগের পর যুগ পার হলেও দুর্ভোগের মুক্তি মেলেনি আজ পর্যন্ত। এলাকাবাসির দাবি এই ঘাটটিতে একটি সেতু হলে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি গতি আসবে অর্থনীতিতে।

বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনা যখন পানিতে টইটুম্বুর তখন এক ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে কমে আসে পানি। এই দুই মৌসুমে দঁড়িটানা নৌকার উপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় ২ পাড়ের বাসিন্দাদের। আবার ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকবার নৌকা ডুবে ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে বই খাতা ও পোশাক ভিজে যায় শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে বক্তারপুর গ্রাম। গ্রামে রয়েছে হাট-বাজার, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়। এই গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে বাইপাস শীবপুরে এবং আরেকটি ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ত্রিমোহনীতে রয়েছে সেতু। তাই বাধ্য হয়ে ২ পাড়ের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, 'চাকলা নতুন হাটে নদীর ওপার থেকে লোকজন এসে বাজার করে নিয়ে আবার ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আমাদের একটা একান্ত ব্রিজের খুব দরকার কারণ পাশে যে একটা ব্রিজ আছে সেটা প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে আরেকটা ২ কিলোমিটার দূরে। এতে করে শিক্ষার্থীরাও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। চাকলা ঘাটে ব্রিজ হলে হাট টাও জাকজমক হবে আবার অন্যদিকে ওপারের বাসিন্দারাও খুব সহজে পারাপার হতে পারবে।'

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, 'চাকলা ঘাটে অতি শীঘ্রই একটা ব্রিজ দরকার কারণ ওপারের লোকজন খুব সহজে এপারে আসতে পারেনা। এপারে উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি বিদ্যালয় থাকায় ওপার থেকে নৌকা পার হবার সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার এপারে চাকলা হাট আছে সেখানে প্রতিদিন বিকেলবেলা মানুষ জন বাজার করতে আসে এজন্য দ্রুত একটা ব্রিজ দরকার আমাদের সবার।'

দঁড়িটানা নৌকার উপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় গ্রামের ২ পাড়ের বাসিন্দাদের।

চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চৌতি জানায়, 'আমি চাকলা প্রাইমারি বিদ্যালয় থেকে এপাড়ে যাতায়াত করছি, প্রায় ৯ বছর ধরে এপাড়ে পড়াশোনার জন্য ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে এবং শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, পোশাক ভিজে যায় তাই আমাদের সবার দাবি চাকলা ঘাটে একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।'

ইকরতাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী হাজেরা বলেন, 'আমি চাকলা বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে যাতায়াত করি। আমি ক্লাস ওয়ান থেকে পড়াশোনা করি। অনেক সময় মাঝি তার পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে আমাদের দেরি হয়। আবার মাঝে মাঝে নৌকা ডুবে যায় এতে করে আমরা ভোগান্তির মধ্যে পড়ি। অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আছে যারা সাঁতার পাড়েনা এদের জন্য পারাপার আরও ঝুঁকি।'

ইকরতাড়া গ্রামের গৃহবধূ মুক্তা বলেন, 'আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্তু একটা ভয় সব সময় কাজ করে কারণ নদীতে এখন অনেক পানি। যদি নৌকা ডুবে যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। এজন্য সব সময় চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। চাকলা ঘাটে একটা ব্রিজ থাকলে সবার জন্য সুবিধা হতো।'

চাকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সোহেলী পারভীন বলেন, 'আমার বাড়িও ইকরতাড়া গ্রামে মানে নদীর ওই পারে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা দিয়ে পার হয়ে বিদ্যালয় আসে, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ছেলে মেয়েরা যখন পার হয় তারা ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পার হয়। অনেক সময় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে আবার নৌকা থেকে পড়েও যায়। এই অবস্থায় নদীর উপর একটা ব্রিজ জরুরী, ব্রিজ হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং তারা উপকৃত হতো। ছেলে মেয়েরা নিশ্চিন্তে ব্রিজ পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারতো আবার অভিভাবকরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত।'

চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর রশীদ বলেন, 'চাকলা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে যার অধিকাংশ নদীর ওপার থেকে অর্থাৎ ইকরতাড়া গ্রাম থেকে আসে। শিক্ষার্থীদের নদী পার হওয়ার সময় একটি নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। নদী পার হওয়ার সময় বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। নদীর পানি যখন বেড়ে যায় তখন নদীতে প্রবল স্রোতে হয় তখন খুবই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়। আবার মাঝে মাঝে ছেলেমেয়েরা নৌকা ডুবিরো ঘটনাও ঘটে এতে করে শিক্ষার্থীদের বই খাতা ভিজে যায় তখন পাশের স্থানীয় বাসিন্দারা সহযোগিতা করে তাদের উদ্ধার করে নাহলে অনেক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতো শিক্ষার্থীরা। আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমার আবেদন যে এখানে একটা যেন ব্রিজ হয়, ব্রিজ হলে ওপারের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই এপারে বিদ্যালয় আসতে পারবে এবং ভোগান্তি কমবে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন হবে।'

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) তোফায়েল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর উপর চাকলা খেয়া ঘাট স্থানীয় একটি ঘাট রয়েছে। এখানে খেয়া ঘাটের মাধ্যমে দিয়ে শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়, বর্ষাকালে পার হতে বেশ কষ্ট হয়। এখানে আমাদের একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আসলে এগুলো ব্রিজ আমরা নির্মাণ করে থাকি স্থানীয় সাংসদের অনুমতিক্রমে তাদের সাথে আলোচনা করে, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ আলোচনা করে থাকি। ইতিমধ্যে স্থানীয় সাংসদের ব্রিজ বাস্তবায়ন করার জন্য দিয়েছিলেন আমরা হেড কোয়ার্টারে প্রস্তাব প্রেরণ করেছিলাম সেটির এখনো অনুমান পাওয়া যায়নি, অনুমোদন পাওয়া গেলে আমরা বাস্তবায়ন পর্যায়ে চলে যাবো।'

;