ভূমি সংক্রান্ত বিষয় হাতে কলমে শেখাতে চাই: ভূমিমন্ত্রী

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, ভূমি সপ্তাহ করেই বসে থাকলে চলবে না। সব অফিসেই আমাদের সারাবছর ভূমি সংক্রান্ত ভূমি সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। আমরা জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও ভূমি সংক্রান্ত সকল বিষয় হাতে কলমে শেখাতে চাই। অনলাইনে ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজ করার ব্যবস্থা আমরা করেছি। একজন গ্রাহক ঘরে বসেই ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা নিতে পারবে।

বুধবার (১২ জুন) দুপুরে নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে ভূমিসেবা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত 'স্মার্ট বাংলাদেশ: স্মার্ট ভূমিসেবা ও ভূমি ব্যবস্থাপন' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ভূমি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ভূমি অফিসে গেলে প্রত্যেক নাগরিককে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন। প্রথমে তাকে বসতে দিবেন। এক অফিস থেকে অন্য অফিসে না ঘুরিয়ে জটিল সমস্যা সুন্দর করে বসে সমাধান করবেন। কোনভাবেই নাগরিকদের সঙ্গে অসদাচারণ করা যাবে না। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবেন। মনে রাখতে হবে আপনারা নাগরিকের সেবক। নাগরিকের টাকায় আপনাদের বেতনভাতা হয়।

এসময় তিনি চট্টগ্রামকে আরও সুন্দর করে সাজানোর কথা তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী। এ সুন্দর চট্টগ্রামকে আরও সুন্দর করে সাজাতে চাই। আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেছেন, দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। তিনি তার কথা রেখেছেন, চট্টগ্রামকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

নদী, পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণের বিষয়ে কঠোর বার্তা ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, নদী সংরক্ষণ করতে হবে। কোনভাবেই নদী বা নদীর আশপাশ ভরাট করা যাবে না। আমরা এসব বিষয় অত্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছি। আমাদের পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। কৃষি জমির শ্রেণী কোনভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। ফসলি জমি ও কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। যেভাবে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ বছর পর আর কোন কৃষি জমি থাকবে না। তাই আমাদের সজাগ হতে হবে। কোনভাবেই যাতে মাটি ভরাট করে কৃষি ও ফসলি জমি নষ্ট না করা হয়।

জমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হলে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবো না। আমরা সবাই সমালোচনা করি। একে অন্যের সমালোচনা করি। কিন্তু নিজের সমালোচনা কেউ করি না। নিজের সমালোচনা নিজে যদি করি তাহলে অনেক কিছুর পরিবর্তন আসবে। বহুতল বিশিষ্ট ভবনে বসবাসে শান্তি নিহীত নয়। সবাই মিলে সুষ্ঠু পরিবেশে বসবাস করাই শান্তি। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন একটি সমাজ ব্যবস্থা। সেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবে।

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ভূমি সংক্রান্ত যে জটিলতা সেগুলো আমরা নিরসন করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। আমরা যারা শিক্ষিত তারাও ভূমির অনেক বিষয়ে জানি না। তাই নবম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে ভূমি সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয় রাখা হয়েছে। যাতে অন্তত নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়লেও ভূমি সংক্রান্ত একটি ধারণা পাওয়া যায়।

সিভিল মামলায় গেলে সে পরিবার একেবারেই শেষ। তার বাবা ছেলেকে, ছেলে তার ছেলেকে এ মামলা দিয়ে যায়। এতে কোন সামাধান হয় না। উল্টো টাকা পয়সা হারিয়ে পথে বসতে হয়। তাই আমাদের ভূমি আইন সম্পর্কে জানতে হবে। জটিল বিষয় সমাধানের দিকে আসতে হবে। একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। এ মানসিকতা তৈরি করতে হবে বলে মন্ত্রী তার বক্তব্য যোগ করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (সিএমপি) কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি।

বিভাগীয় কমিশন মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, শুধু ভূমি বা জমির মালিক হলেই হবে না। সেটির বৈধ মালিক হতে হবে। মামলা জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে যে পরিমাণ জমির দাম তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে জমিটি উদ্ধার করতে। যার কারণে তৈরি হচ্ছে মানসিক অশান্তি। আমাদের ভূমি সংক্রান্ত আইন জানতে হবে এবং সে আইন মানতে হবে। জমি কেনার সময় সমস্ত কাগজপত্র সঠিক কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। যাতে এ জমি কেনার পর কাগজপত্র নিয়ে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।

তিনি আরও বলেন, একটা চক্র সৃষ্টি হয়েছে যারা জটিলতাপূর্ণ জমি ক্রয় করছে কম দামে। পরে সেগুলো বিভিন্ন ভাবে জমির প্রকৃত মালিককে হয়রানি করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা অনলাইনে নিয়ে এসেছেন। স্মার্ট ভূমি সেবা নিশ্চিত করেছেন। ঘরে বসেই এখন ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজ করা যাচ্ছে। সেবাগ্রহীতারা হয়রানিমুক্ত ভূমিসেবা পাচ্ছে।