কোরবানির হাটে নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত হবে: মেয়র আতিক
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসি'র কোরবানির পশুর হাটে ক্যাশলেস ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত হবে।
বুধবার (১২ জুন) ডিএনসিসি নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে 'লেনদেন হচ্ছে ক্যাশলেস, স্মার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্য নিয়ে ডিএনসিসির কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'ডিএনসিসি পেপারলেস স্মার্ট ডিজিটাল সেবা বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ডিএনসিসিতে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে কাউকে অফিসে আসতে হয় না। সম্পূর্ণ অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছে। ট্রেড লাইসেন্সও অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। অনলাইন সেবার পরিসর বাড়াতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এতে জনগণের ভোগান্তি কমবে এবং সিটি কর্পোরেশনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।'
মেয়র আরও বলেন, 'কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির কোরাবনির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগের ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি, নকল বা ছেঁড়া/ফাটা নোট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান হবে না। ছিনতাই, মলম পার্টির খপ্পর থেকে রক্ষা পাবে ক্রেতা ও বিক্রেতারা।'
তিনি বলেন, 'হাটে ডিজিটাল বুথ স্থাপন করে অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতার হিসাব হতে বিক্রেতার হিসেবে পৌঁছে দেওয়া হবে। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নগদ টাকা বহন করতে হবে না। হাটের বুথ থেকে ক্রেতারা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম বুথ, POS মেশিন ব্যবহার করে, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, কিউআর কোডের মাধ্যমে নগদ অর্থ তুলে হাট থেকে কেনা গরুর মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি হাটের হাসিলও দিতে পারবেন এই পদ্ধতিতে। একই সুবিধা ব্যবহার করে বিক্রেতারা তাদের কোরবানির পশু বিক্রির অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন।'
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'এবার ঈদে ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদে বর্জ্য অপসারণের জন্য ১০ হাজারের অধিক কর্মী কাজ করবে। ১০ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন, টুকরী, ফিনাইল দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলররা ও ডিএনসিসির কর্মীরা মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করবে। আমি নিজে মাঠে থাকবো। জনগণকে অনুরোধ করছি যত্রতত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলবেন না। নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিবেন। গতবারের মতো জনগণের সহযোগিতা পেলে নির্ধারিত ৬ ঘন্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করবো।'
মেয়র বলেন, 'গত বছর সবার চেষ্টায় উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৮ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এবার আমাদের টার্গেট ছয় (৬) ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানীর বর্জ্য অপসরণ করা। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আজকেই যুক্ত হয়েছে ৩২টি ডাম্প ট্রাক ও ৮টি কম্প্যাক্টর ট্রাক। ৪০টি ট্রাক যুক্ত হওয়ায় এই বছর বর্জ্য অপসারণে আরও গতি বাড়বে।'
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৬টি কোরবানির পশুর হাটে ক্যাশ টাকা ছাড়াই ডিজিটাল উপায়ে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন গ্রাহকরা। হাটগুলো হলো- উত্তরা ডিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নং সেক্টর তৎসংলগ্ন পর্যন্ত খালি জায়গায় কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট তৎসংলগ্ন পর্যন্ত খালি জায়গায় কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাট, মিরপুর সেকশন-০৬, ওয়ার্ড নং-০৬ (ইস্টার্ণ হাউজিং) খালি জায়গায়, ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গায় (ভাটারা সুতিভোলা), মিরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট (স্থায়ী), মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা।
ডিএনসিসির কোরবানির পশুর হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ব্যাংক এশিয়া পিএলসি, সিটি ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, এবি ব্যাংক পিএলসি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, পূবালী ব্যাংক পিএলসি, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স, ভিসা, বিকাশ, নগদ, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ)।
২০২২ সালে স্মার্ট ডিএনসিসির কোরবানির হাটে পাইলট কার্যক্রমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৪৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর কাজী সায়েদুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুতাসিম বিল্লাহ, ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন, বাংলাদেশ ডেইলি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোঃ ইমরান হোসেন প্রমুখ।