`চট্টগ্রামে তামাক চাষের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে হবে'

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, এখানে (চট্টগ্রাম) যেন তামাকের চাষ না হয় সে লক্ষ্যে মাননীয় স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদেরকে সম্পৃক্ত করে এলাকার জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

রোববার (২৩ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসক বলেন, সুস্থ-সবল জাতি গঠনে অবশ্যই তামাক বর্জন করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতা সভার আয়োজন করতে হবে। এক সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে তামাক চাষ হতো। সেটি ধীরে ধীরে পাহাড়ের দিকে চলে যাচ্ছে। পাহাড়ে জনসমাগম কম বা পাহাড়ে লোকজন কম যায়, সে জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে পাহাড়ে তামাকের চাষ হচ্ছে। খাগড়াছড়ির অনেক জায়গায় তামাকের চাষ হচ্ছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, রাউজানসহ পাহাড়ি এলাকায় যেন তামাকের চাষ হতে না পারে, এখানকার লোকজন তামাক চাষে যাতে উদ্বুদ্ধ না হয় সে লক্ষ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসি ল্যান্ডদেরকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সহযোগিতায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন করতে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এখন দৃশ্যমান হওয়ার কারণে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করার প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে। প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখলে অনেকে বাধা দেয়। এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা কমপ্লেক্স ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে। ধূমপানে উদ্বুদ্ধকরণে বিজ্ঞাপন বা সাইনবোর্ড দেখলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়মিত মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি ধূমপানের বিরুদ্ধেও মোবাইল কোট পরিচালনা করতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেন ডিসি।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, তামাকের ব্যবহার কতটুকু কমাতে পেরেছি জানি না, তবে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তামাকে ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুরুষ ধূমপায়ীর হার ১৮ শতাংশ ও নারী দশমিক ৮ শতাংশ। উন্নত বিশ্বে নারীদের মধ্যে তামাকের ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে যেন ধূমপায়ীর প্রবণতা বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। রাউজান উপজেলাকে সম্পূর্ণ তামাকমুক্ত ও ধূমপানমুক্ত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনপ্রতিনিধিরা মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। এ ধরনের অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে অন্যান্য উপজেলা কাজ শুরু করেন তাহলে আমরা নিশ্চিত উল্লেখযোগ্যভাবে ধূমপান কমানো সম্ভব।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেছেন, ধূমপান বা তামাকজাত পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাকের কারণে মানুষ একদিকে ব্রংকাইটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সারসহ মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে আয়ুষ্কাল। এর পরও মানুষ সচেতন হয় না। ধূমপায়ীর কারণে অধূমপায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে অবশ্যই তামাক বর্জন করতে হবে। তামাক ও তামাক জাতীয় দ্রব্য থেকে বিরত থাকতে শুধু শিক্ষার্থী নয়, সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০৫ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ধূমপানের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ সবাইকে তামাকের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপায়ীদের পরিবারে অভাব-অনটন থাকে। আমরা ধূমপান বর্জন করব ও অন্যকে বর্জন করতে উৎসাহিত করবো।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একেএম গোলাম মোর্শেদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার, এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান, সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সকল সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।