‘ভারতের রেল চলাচলে দেশের নিরাপত্তায় কোনো ঝুঁকি নেই’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত
জাতীয়
ভারতের রেল বাংলাদেশে প্রবেশের পর দেশের আইন অনুযায়ী চলবে জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহনের সুযোগ না থাকায় ভারতের রেল চলাচলে দেশের নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না।
সোমবার (১ জুলাই) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সঙ্গে রেল সমঝোতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছি বিএনপি এবং বিরোধীরা বলে মন্তব্য করে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন। সেখানে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন মূলধারার গণমাধ্যমে অপপ্রচার হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মিথ্যাচার করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতের ট্রেন চলবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমাদের দেশ নাকি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই লাইনে ভারত নাকি এখান দিয়ে আর্মস নিয়ে যাবে। কিন্তু সমঝোতা স্মারকে এমন কিছুই নেই। বরং আর্মসসহ এ জাতীয় কিছুই পরিবহণ করা যাবে না উল্লেখ আছে। এ নিয়ে একটা কল্পিত ঝুঁকির ভয় দেখানো হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তিনি বলেন, ভারত শুধু আমাদের ওপর নিয়ে ট্রেন নিয়ে যাবে না বরং বাংলাদেশের ট্রেনও ভারত হয়ে নেপাল ভুটান যাবে। এসব অর্জনকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটাকে তো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বলে না।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে লালমনিরহাটে বিক্ষোভ, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির আয়োজনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে লালমনিরহাট মিশন মোড়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল লালমনিরহাট সদর বিএনপির সভাপতি সম্পাদক, হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোশাররফ হোসেন সম্পাদক আফজাল হোসেন মিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিটের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যেকোনো আন্দোলন করতে হাতীবান্ধা উপজেলা বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, বেনজির এখন কোথায় আছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানেনা। তার ওই পদে থাকার যোগ্যতা নেই, এসময় তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দী নেতাদের মুক্তি দাবি করেন।
নাটোরে দুর্বৃত্তের হামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ আহত ৭
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
পুলিশ/ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে চলা সমাবেশে যাওয়ার পথে নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রবীণ নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাচ্চুকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ৭ জন।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে শহরের আলাইপুরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত অন্যরা হলেন- জেলা শ্রমিক দলের দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাব্বিরুল ইসলাম চপল ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হিটলু। হামলায় আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন বলেন, চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আজ সকালে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সমাবেশ ছিল। সমাবেশে যোগ দিতে শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বিএনপি কার্যালয়ে আসছিলেন। এ সময় শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এলে সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, তার হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ফরহাদ আলী বলেন, বিএনপির একজন সিনিয়র নেতাকে দিনের বেলায় রাজপথে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এমন ঘটনা দুঃখজনক। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেওয়া হোক।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনজনকে কুপিয়ে জখম করার খবর শুনেছেন। সকাল থেকেই তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ছিলেন। তবে সমাবেশে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রাইফেলসহ আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী, ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ ২ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় বিদেশি রাইফেল ও দেশীয় অস্ত্র-গুলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (৩ জুলাই) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন দাবি করেন, ক্যাম্পে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরসার কিলিং গ্রুপ কমান্ডার ও ক্যাম্প-১৭ এর জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল। সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের গোয়েন্দা শাখা ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে হাফেজ কামালকে ধরতে অভিযান চালানো হয়।
পালংখালীর রোহিঙ্গা বাজার থেকে হাফেজ কামালের সহযোগী মোহাম্মদ সাইফুলকে গ্রেফতার করা। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়ার ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে হাফেজ কামালকে তার দেহরক্ষী আনসার উল্লাহসহ গ্রেফতার করা হয় বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, একের পর এক আরসার শীর্ষ কমান্ডারদের গ্রেফতার করলেও শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন হওয়ায় পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলে দাবি র্যাবের।
র্যাব জানায়, র্যাব বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত আরসার কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারসহ ১১৮ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ৫৪ কেজি বিস্ফোরক, ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৫টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৭টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৮৩ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪টি হাত বোমা, ৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে র্যাব।
ছবি: বার্তা২৪, ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নেমে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই
জাতীয়
৮ মাসের চেষ্টার পর ক্লুলেস একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানা গেছে, মাদক ও অনলাইনে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে পরিকল্পনা করা হয় ছিনতাইয়ের। এরপর ছিনতাইয়ে বাধার মুখোমুখি হতে হবে না এমন একজনকে নির্বাচন করে আসামিরা।
তারপর বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নির্দিষ্ট সময়ে নির্জন স্থানে ডেকে নেওয়া হয় ভিকটিমকে। বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে হত্যার উপযুক্ত স্থান খুঁজে হত্যা করা হয় ১৮ বছর বয়েসি তরুণ রবিউল ইসলামকে। ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি।
এ হত্যায় সরাসরি জড়িত ৩ জন আসামির ২ জনকে এবং বিক্রি চক্র ও রং পরিবর্তন চক্রের ৫ জনসহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)।এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ১ জন এখনো পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (৩ জুলা্ই) রাজধানীর ধানমণ্ডির পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নরসিংদী জেলার পিবিআই পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো.এনায়েত হোসেন মান্নান।
গ্রেফতাররা হলেন, নাহিদ শেখ (২২), মো. হুমায়ুন (৪০), মো. লিটন খান (৪৫), জুবায়ের হাসান অমি (১৯), শাজিদুল ইসলাম হাসিব (১৯), রাকিবুল (২০) ও জুয়েল (২০)।
ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে মো.এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর সকালে জানা যায় যে, নরসিংদী জেলার শিবপুর থানা এলাকার সাতপাইকা পাকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের গলাকাটা মরদেহ পড়ে রয়েছে।
খবর পেয়ে নরসিংদী জেলার পিবিআই ও ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে ভিকটিম রবিউল ইসলামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি নরসিংদীর পিবিআই গ্রহণ করে। তদন্তকালে ঘটনার সম্ভাব্য কারণ, ঘটনার প্রকৃতি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য আসামিদের শনাক্ত করার বিষয়ে নানান তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নেমে পিবিআই জানতে পারে যে, নেশার টাকার জোগাড় করতে এই অটোরিকশাটি ছিনতাই করা হয়, ছবি- বার্তা২৪.কম
জানা যায় যে, ভিকটিম একজন অটোরিকশা চালক। আসামিরা নেশার টাকা জোগাড় করতে ভিকটিম রবিউল ইসলামকে হত্যা করে তার ভাড়া করা অটোরিকশাটি নিয়ে যায়। ভিকটিম কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। ঘটনাস্থল থেকে সম্ভাব্য যেসব দিকে ছিনতাই করা অটোরিকশাটি নিয়ে যেতে পারে, অনুমান করে সম্ভাব্য ও সন্দেহজনক কিছু অটো গ্যারেজের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়।
ঘটনার কোনো ক্লু না থাকায় শিবপুর অঞ্চলে যাদের চোরাই অটো বাইক/গাড়ি কেনাবেচার দুর্নাম রয়েছে, তাদের যাচাই করার পর সন্দেহভাজন আসামি রাকিবুলকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাকিবুল ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অটোরিকশাটি নাহিদের মাধ্যমে বিক্রিতে সহায়তা করেছে বলে জানা যায়। কিন্তু হত্যার বিষয়ে কোনো কথা স্বীকার করেনি সে। রাকিবুলের দেওয়া তথ্যমতে, মো. নাহিদ শেখকে (২২) গ্রেফতার করা হয়।
নাহিদ অটোরিকশাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে এবং যে গ্যারেজে বেচাকেনা হয়েছে, তা দূর থেকে শনাক্ত করে দেয়।
এরপর শিবপুর কলেজ গেট এলাকায় এধরনের একটি অটোরিকশা দেখেছে বলে সোর্স জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ওই সব এলাকার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অটোচালককে শনাক্ত করে মো. হুমায়ুনকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডের পরে ছিনতাই করা অটোরিকশাটি গ্যারেজ মালিক আসামি মো. লিটন খাঁনের (৪৫) গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়।
ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের বর্ণনা দিচ্ছেন পিবিআই কর্মকর্তারা, ছবি- বার্তা২৪.কম
পুলিশ সুপার মো.এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, জানা যায়, অটোরিকশাটি যাতে কেউ চিনতে না পারেন, সে কারণে এর রং ও কিছু পার্টস পরিবর্তন করা হয় এবং তা গ্যারেজ মালিক মো. লিটন খাঁনের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়
পরে আসামি নাহিদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় যারা নাহিদের কাছে ছিনতাই করা অটোরিকশাটি নিয়ে এসেছিল তাদের নাম জানা যায়।
তিনি বলেন, হত্যার পর আসামিরা গা ঢাকা দেয়। মামলার ঘটনার তদন্তে তদন্তকারী একাধিক টিম নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভৈরব, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো বলেন, হত্যাকারী ২ জনসহ অটোরিকশা কেনাবেচা, রং ও মডেল পরিবর্তন ও সংরক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোট ৫ জন আসাম নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে জানা যায় যে, ভিকটিম রবিউল হত্যাকাণ্ড ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ে প্রত্যেক্ষভাবে জড়িত অমি, নিহাল, হাসিব একই সঙ্গে চলাফেরা করতো। তারা নিয়মিত মাদক সেবন করা ছাড়াও অনলাইনে জুয়া খেলতো। একপর্যায়ে আসামিরা মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহের জন্য অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তারা সহজ-সরল অটোচালক ভিকটিম রবিউল ইসলামকে চিনতো এবং তাকে হত্যা করে অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে আসামি অমি, নিহাল, হাসিব শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভিকটিম রবিউল ইসলামকে পেয়ে তার অটোরিকশা নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে শাজিদুল ইসলাম হাসিবের বাড়ির সামনে থাকতে বলে।
অমি ও নিহাল বিকেল ৪টার আগেই হাসিবের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। রবিউল ইসলাম বিকেল ৪টার দিকে হাসিবের বাড়ির সামনে এলে অমি, নিহাল, হাসিব ভিকটিম রবিউল ইসলামের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে এবং বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়।
একপর্যায়ে শিবপুর থানার সাতপাইকার ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আড্ডা দেয়। আড্ডা শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা বলে আসামিদের দুইজন পেছনে এবং একজন সামনের আসনে চালক রবিউল ইসলামের পাশে বসে।
পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, গোপনে নিয়ে আসা চাপাতি বের করে এবং আসামি হাসিব ও নেহাল ভিকটিম রবিউলের হাত পা জাপটে ধরে রাখে। এ সময় অমি চাপাতি দিয়ে বেপরোয়াভাবে গলায় কোপাতে থাকে। ঘটনাস্থলেই রবিউলের মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃতদেহটি ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে থাকা ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে চলে যায়।
পরবর্তীতে রাকিব, নাহিদ, জুয়েল ও হুমায়ুন অটোরিকশাটির রং ও মডেল পরিবর্তন করে লিটন মিয়ার কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
মো.এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আসামি অমির স্বীকারোক্তি মতে নাহিদের চাচাতো ভাই বিশালের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক আসামি নেহালকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অটোরিকশা ছিনতাই প্রতিরোধে পরামর্শ পিবিআইয়ের
ভয়ঙ্কর নেশা থেকে জুয়া, ছিনতাই, হত্যা প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান পুলিশ সুপার মো.এনায়েত হোসেন মান্নান। মো.এনায়েত হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে চালককে হত্যা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এজন্য তিনি বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলি হচ্ছে-
ছিনতাই ও হত্যা প্রতিরোধে- ১. প্রতিটি অটোরিকশার ৩ দিকে গ্রিলের তৈরি গেট নির্মাণ করতে হবে। ২. চালকের পাশে কোনো ধরনের যাত্রী তোলা যাবে না। ৩. প্রয়োজনে গাড়িতে জিপিএস ট্রাকার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ৪. এই সমস্ত গাড়িগুলি রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।