নদীর মাছের দাম ব্যাপক চড়া, দাম শুনেই বিমুখ ক্রেতা

  • মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাছ নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতারা। ছবি: বার্তা২৪.কম

মাছ নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতারা। ছবি: বার্তা২৪.কম

‘কী আর বলবো মামা, খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মাছের দাম হুইনাই (শুনেই) আর কেনার ইচ্ছে থাকে না। যখনই বাজারে যাই, মাছ না কিনেই ফিরতে হয়। সারাদিন রিকশা চালাইয়া যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। ভাত আর শাক-সবজি খেয়ে বাঁইচা আছি। একদিকে শাক-সবজির চড়া দাম, অন্যদিকে বাজারে সব মাছের দাম বেশি। তা কেনার সাধ্য আমাদের নেই। সবজির সাথে দেওয়ার জন্য ছোট ছোট নদীর কুচো চিংড়ি মাছের কেজিও ৮০০ থেকে ৯০০টাকা। আমাদের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই।’

আক্ষেপের সুরে এসব কথা বলছিলেন সুলাখালীর বাসিন্দা সোনাগাজীর রিকশাচালক লিটু মিয়া। এমন চিত্র সোনাগাজী মাছ বাজারের। উপকূলীয় উপজেলা হওয়াতে সোনাগাজীতে নদীর মাছ সারাবছর পাওয়া যায়, তবুও কম দামে মাছ পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সব ধরনের মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে দাম শুনেই কেনার আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা।

বিজ্ঞাপন
মাছ নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতারা। ছবি: বার্তা২৪.কম

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চর খন্দকারের জেলে পাড়া এবং মুছাপুরের নদীর মাছ কেনার জন্য পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ছুটে আসেন। জেলেরাও সারারাত নদীতে মাছ ধরে সকাল বেলা জোয়ার আসলে নদীর কিনারে ফিরে আসে। নৌকা ঘাটে ভিড়লেই শুরু হয় দরদামের হাঁকডাক। এখানকার বেশিরভাগ মাছই কিনে নেন মহাজন, আড়তদাররা। কয়েক হাত ঘুরে বাজারে মাছ আসে, ফলে মাছের সরবরাহ বেশি থাকলেও দাম থাকে চড়া।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের মাছের দাম বেশি। ৬০০ টাকার নিচে কোনো নদীর মাছ নেই। ঈদুল আযহার আগেও যে চিংড়ি মাছের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, এখন বিক্রেতারা মাঝারি চিংড়ি মাছের দাম ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যান্য মাছের মধ্যে হুল চিংড়ি ১২০০ টাকা, কুচো চিংড়ি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, মাঝারি চিংড়ি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ১৫০ টাকার চাইয়া মাছ ২৫০ টাকা, লরকা মাছ ৭৫০ টাকা, ৬৫০ টাকার কাইককা মাছ ৮০০ টাকা, ৩৫০ টাকার বাইল্যা মাছ ৫৫০ টাকা, ৪৫০ টাকার ট্যাংরা ৬৫০ টাকা, ৫০০ টাকার বাইন মাছ ৭০০ টাকা, বড় আকারের ইলিশ ২ হাজার টাকা, ৩৫০ টাকার পাবদা মাছ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও চাষ করা মাছের দামও বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। পুকুরের ছোট রুই ২০০ টাকা কেজি দরে, বড় রুই (৪ কেজি সাইজ) ৪০০ টাকা কেজি দরে, মাঝারি মৃগেল ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১৮০ টাকার চাষের পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া বর্তমানে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বরফ দেওয়া মাঝারি সুরমা মাছ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, মাছের সরবরাহ থাকলেও আড়তদারদের কাছে জেলেরা জিম্মি। তারা জেলেদের থেকে মাছ কিনে আমাদের কাছে বিক্রি করে, আমরা বাড়তি দাম দিয়ে কিনি, ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।

ধলিয়া থেকে মাছ কিনতে আসা প্রবাসী রবিউল হক বলেন, দেশে থাকলে সোনাগাজীতে নদীর মাছ কিনতে আসি। বিভিন্ন ধরনের তরতাজা ও সুস্বাদু মাছ এখানে পাওয়া যায়। তবে এখানে আগের চেয়ে মাছের দাম অনেক বেড়েছে। আগে যে মাছগুলো ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় পেতাম, সেগুলোর দাম এখন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। যেমন বলা যায়, ট্যাংরা, চিরিং, কোরাল, নদীর চিংড়িসহ সবগুলোর দাম বাড়তি।

আব্দুর রহমান নামে আরেকক্রেতা বলেন, আমাদের উপজেলায় নদীর থাকার পরও এখানে নদীর মাছের দাম এখন নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে। আমরা মধ্যবিত্তরাও মাছের দাম শুনে কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। শুধু বাড়িতে মেহেমান আসলে বাড়তি দাম হলেও অল্প পরিমাণে কিনে হাফ ছেড়ে বাঁচি।

উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকার সাব্বির বলেন, গরুর মাংসের চেয়ে নদীর মাছের দাম বেশি। ইলিশ, চিরিং, চিংড়ি, ট্যাংরা, লরকা মাছ কেনাই যাচ্ছে না। মাছের দাম শুনে আর কেনার ইচ্ছে থাকে না। যে পাঙ্গাশ মাছ আমরা খাইনি, সেই মাছের দাম এখন ১৮০ টাকা কেজি। যে তেলাপিয়া মাছ আমরা ১৪০ টাকায় কিনেছি সেটা এখন ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এককথায় নদীর মাছ এবং চাষের মাছ হোক মাছের বাজারে যেন আগুন জ্বলছে।