বাজেটের প্রভাব নেই বাজারে, দাম নিয়ে সাধারণের উদ্বেগ
জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট পাস হয়েছে রোববার (৩০ জুন)। বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমাতে কয়েকটি পণ্য ও সেবায় শুল্কের হার পরিবর্তন করা হয়েছে। বাজেট পাসের পর এসব জিনিসের দামেও পরিবর্তন আসার কথা ছিল। কিন্তু বাজেট কার্যকরের প্রথমদিনে সেসব পণ্যে দাম কমার কোন প্রভাব দেখা যায়নি।
বিশেষ করে এবারের বাজেটে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, গুঁড়ো দুধ, চকলেটসহ যেসব নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেসব পণ্যের দামে এখনো প্রভাব পড়েনি। পূর্বের দামেই বিক্রি চলছে।
ব্যবসায়ীদের মতামত, বাজারে নতুন পণ্য না আসা পর্যন্ত দামে কোনো প্রভাব পড়বে না। আর সাধারণ মানুষ বলছে, বাজেটে পণ্যর দাম কমলে সেটা কার্যকর করতে সময় লাগে, দাম বাড়লে পরের দিনেই কার্যকর করে ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধমুখী। উচ্চমূল্যের এই বাজারে স্বস্তি নেই নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। মাছ-মাংস, সবজি কোন কিছুই সাধারণ মানুষের লাগালের মধ্যে নেই।
বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন অনিক দেবনাথ। কারওয়ান বাজারে সপ্তাহের বাজার করতে এসেছেন তিনি। বার্তা২৪.কমকে বলেন, এদেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তা আর কমে না। সরকারের লোকজন তো আর বাজারে আসে না, তারা বাজারের কী অবস্থা দেখবে কীভাবে। গতকাল বাজেট পাস হওয়ার পর ভাবতেছি আমার বেতন বাড়বে কি? তা তো আর বাড়বে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ আর ডিমের দাম চড়া। এদিকে সবজির দামও বেড়েছে মান ভেদে। এই বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১১০ আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।
পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বরবটি বিক্রি ১০০ টাকায়, গাজর ১২০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই ৮০ টাকা। এছাড়াও ঢেড়স ৫০ টাকা, প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, বিআর-২৮ ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা। পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮ টাকায়। গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাজেটে বলা হয়েছে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে। কমলে ক্রেতার জন্য যেমন স্বস্তির বিক্রেতার তাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানিগুলো নতুন পণ্য দেয়নি। তখন বুঝতে পারবো দাম কতটুকু কমেছে।
সবজি বিক্রেতা নুরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাজার আগের মতোই আছে। রোববার বাজেট পাস হলেও আজকের বাজারে কোনো প্রভাব নেই।
বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম না কমায় মেজাজ হারিয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাজারে শুধু নিত্যপণ্যের দামই বাড়েনি। বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে পানি ও বিদ্যুৎ বিল সবকিছুই বেড়েছে। কেবল বাড়েনি আমাদের বেতন।
শফিকুলের অভিযোগ, বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হয়, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে দাম কমলে একবার বেড়ে যাওয়া জিনিসের দাম আমাদের দেশে আর কমে না।
বাজেটে সবজির বাজারে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে বিক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, বাজেটে পাস হওয়ার পর সবজির বাজারে কোন প্রভাব পড়েনি। যদি কোনো কিছু আমদানি হয় তখন দাম কমে যায়। সবজির দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করে, কারণ এটা কাঁচামাল।
গতকাল সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বাজেট পাস হয়েছে। এবারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এজন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।