২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবার খোঁজে তরুণী

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবার খোঁজে তরুণী

২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবার খোঁজে তরুণী

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন পথে প্রান্তে ঘুরে ফিরছেন রুপা খাতুন (২৫) নামের এক তরুণী। প্রায় ২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবার খোঁজে এসেছেন তিনি।

গত ২ জুলাই বিকেলে চাটমোহর উপজেলা গেইটে বাবার খোঁজ করতে দেখা যায় তাকে। বাবার ছবি নেই, ঠিকানাও জানা নেই। শুধু আছে বাবার জন্য জমে থাকা অন্তর আত্মার আর্তি। এই নিয়েই ছুটছেন এদিক সেদিক।

বিজ্ঞাপন

রুপা খাতুন নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া এলাকার বাসিন্দা। চার বছর বয়সে বাবা নুর ইসলামকে হারান বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাবা খুলনায় সবজি বিক্রি করতে গিয়ে আর ফেরেননি। তার কোনো ছবি নেই। চেহারাও পরিষ্কার মনে নাই। তবে বাবাকে ফিরে চাই। বাবার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করে কলিজা ছিঁড়ে যায়। শ্বশুর বাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলেই কটু কথা শোনায়।

তিনি জানান, নানা বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন তার বাবা। কত মানুষ চেনে তাকে। সব সময় তার কথা মনে পড়ে। নানা কারণে তার খোঁজ করা হয় নাই। ইদানিং খুব বেশি মনে পড়ছিল। তাই বাবাকে খুঁজতে বেরিয়েছি।

বাবার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুপা বলেন, তার বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি লম্বা। মুখে হালকা চাপ দাঁড়ি ছিল। বাবার কোন ছবিও নেই তাদের কাছে। বাবা মা–মামাকে তার বাড়ি চাটমোহরে বলেছিলেন। এটা সত্য না মিথ্যা জানা নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন তাও জানি না। শুনেছি আমার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। বাবাকে খুঁজে না পেলে কষ্ট পাবো।

রুপা পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে তার বাবা চাটমোহরের নুর ইসলাম মোল্লা কালিয়ার শুক্তগ্রামে যান। সেখানে গফফার আলী নামে এক ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিলেন। পরে ছোট কালিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে (রুপার মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করছিলেন। এলাকায় সবজির দোকান দেন। বড় কালিয়া এলাকায় ছয় শতাংশ জমিও কেনেন। নুর ইসলাম মোল্লা এবং রহিমা বেগমের সংসারে রুপা খাতুন এবং নুরজাহান নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। ভালই কাটছিল তাদের দিন। চৌদ্দ থেকে পনেরো বছর বসবাসের পর একদিন পাতাকপি বিক্রি করতে খুলনায় যান নুর ইসলাম মোল্লা। এরপর আর ফেরেননি।

সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও রুপার মা ও তার পরিবার বাবার সন্ধান পাননি বলে জানান রুপা। অভিমানে রহিমা বেগম কখনো স্বামীকে খুঁজতে আসেননি চাটমোহরে। শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা নামের কোনো গ্রামে।

রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতেও কথা ওঠে তাদের বাবাকে নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে বাবাকে খুঁজতে বের হন মেয়ে রুপা খাতুন। বাবাকে খুঁজে পেতে চান সবার সহযোগিতা।