ভয়ংকর ভাড়াটিয়া, বাসা ছাড়তে বলায় ধর্ষণ মামলায় কারাগারে বাড়ির মালিক

  • আল-আমিন রাজু ও রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রাফিক্স, বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক্স, বার্তা২৪.কম

ইট পাথরের রাজধানীতে জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাময়িক বসতি গড়েন কর্মজীবীরা। অস্থায়ী বসবাসে সবারই ভরসা ভাড়া বাসা। সাধারণত বাড়ির মালিকদের বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের জালে আটকে যান ভাড়াটিয়ারা। তবু কর্মের কারণে মুখ বুজে সহ্য করে যান তারা। কিন্তু এবার উল্টো ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকায়। কয়েক মাস ধরে ভাড়া না পেয়ে বাসা ছেড়ে দিতে বলায় ধর্ষণ মামলা ঠুকে দিলেন ভাড়াটিয়া। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে দুই মাস ধরে জেল খাটছেন ভবন মালিক।

ভুক্তভোগী ভবন মালিকের নাম মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। তিনি পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের আ. সালামের ছেলে।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকবাজার থানার পোস্তার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৭৬/২ নম্বর বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। সাত তলা ভবনের ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় বসবাসের চুক্তি করেন জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি নামের এক নারী। দুই বছর বসবাসের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি বাড়ির মালিকের সঙ্গে ১২ হাজার টাকা ভাড়ার নতুন একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। নতুন চুক্তির পর প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে প্রথম সাত মাস ভাড়া পরিশোধ করেন। পরবর্তী সাত মাস কখনো ১০ হাজার আবার কখনো ১১ হাজার করে অনিয়মিত ভাবে ভাড়া পরিশোধ করেন। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন।

ভাড়া না পেয়ে একাধিকবার বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব ভাড়া পরিশোধ ও বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন। পাওনা টাকা পরিশোধ করে বাসা ছাড়ার জন্য ২ মাস সময় চান ভাড়াটিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি। এই সময় পেরিয়ে গেলে বাসা না ছেড়ে উল্টো বাড়ির মালিককে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। যার সর্বশেষ শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলার করে বসেন এ্যানি। যদিও এখন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপস করতে নিজেই ভুক্তভোগীদের চাপ প্রয়োগ করে চলছেন মামলার বাদী।

ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে ভবন মালিক সজিবের মা আসগড়ি বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাড়াটিয়া কয়েক মাস ধরে ভাড়া দেয় না। চুক্তি অনুযায়ী আমরা তাকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছি। এখন সে উল্টো আমার ছেলের নামে মিথ্যা শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা করেছে। এমনকি এই ধর্ষণ মামলায় আমার ছেলের দুই বউ ও বাসার নিরাপত্তাকর্মীকেও আসামি করেছে। এই মামলা কীভাবে পুলিশ নিলো, তারা কি কিছুই বোঝে না?

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে পেশায় ব্যবসায়ী। তার দুই স্ত্রী। তারা এক সঙ্গে একই বাসায় আমার কাছে থাকে। দুই বউকে নিয়ে আমরা অত্যন্ত সুখী পরিবার। আসল সমস্যা হলো আমার ছেলের কোনো সন্তান নেই। সে (বাদী) ভেবেছে ওই ভবন দখল করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাতিয়ে নেবে। কিন্তু সে তো জানে না, এই ভবনের আসল মালিক আমার ছেলে না। ভবনের মালিকানা আমার দুই ছেলে বউ ও আমার। আপসের নামে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। আমার বাসা এসেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেকে বাঁচান, আমার ছেলেটা অসুস্থ।

গত ৫ জুলাই বিকেলে নিজ বাসায় কথা হয় জেলে থাকা সজিবের দুই স্ত্রী সাদিয়া আফরিন মুক্তা ও শায়লার সঙ্গে। তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার স্বামীকে ফাঁসিয়ে বাড়ি দখলের পায়তারা করছে। বাড়ি শাশুড়ি ও আমাদের দুজনের নামে। এটা জানার পরে প্রতিদিন নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমনকি ওই মহিলা কারাগারে গিয়েও আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।

মামলা ও হুমকির বিষয়ে জানতে চকবাজার থানার পোস্তা এলাকায় ওয়াটার রোডের সজিবের ভবনের ভাড়াটিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানির বাসায় যান এই প্রতিবেদক। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে দরজা বন্ধ করে বাসার ভেতরে অবস্থান নেন এ্যানি। তার মেজো ছেলে সানাফ দরজার ভেতর থেকে জানান, তার মা বলেছে গেট খোলা যাবে না। তার মা কথা বলতে রাজি না। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে এ্যানির দুটি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি মিথ্যা মামলা ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহিদুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলমান। সত্য না মিথ্যা সেটি তদন্তে প্রমাণ হবে। মামলাটি এখন আমরা তদন্ত করছি না। এটি ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার তদন্ত করছে। আর ভাড়াটিয়া আমরা নামাতে পারি না।

মামলা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোদেজা খানম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামলার তদন্ত চলমান, এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।

মামলায় বাদীর অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। ফরেনসিক করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি।