‘খুবই পেরেশানিতে আছি’
খুবই পেরেশানিতে আছি, আর মিনিট খানেক সময় পেলে পার হয়ে যেতে পারতাম। এখন ৩ ঘণ্টা ধরে বাংলামোটর সিগন্যালে বসে আছি।
শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকা তানজিল পরিবহনের চালক মো. মামুন এমন আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তার বাসের সামনে মাত্র ৩টি যানবাহন রয়েছে। তারা আর কয়েক সেকেন্ড সময় পেলে পার হয়ে যেতে পারতেন।
আবার তার পাশেই প্রাইভেটকার নিয়ে আটকা পড়েছেন লিয়াকত হোসেন। রামপুরা থেকে এসেছেন, তার গন্তব্য হাতিরপুল অর্থাৎ সিগন্যাল পার হলেই। সেই ১ মিনিটের পথের জন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন।
একই জায়গায় আটকা পড়েছেন গাবতলী এক্সপ্রেস কোম্পানির চালক মুরসালিন। ফজরের আযানের সময় গাড়ি রাস্তায় নেমেও গাড়ির জমা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভোরে গাবতলী রওনা করে যাত্রাবাড়ী যাত্রী নামিয়ে গাবতলীতে ফিরি। দ্বিতীয় দফায় গাবতলী থেকে যাত্রীবাড়ী যাত্রী নামিয়ে দিয়েছি। এরপর গাবতলী ফিরতে গিয়ে ফেঁসে গেছি। এখন পর্যন্ত তেল খরচ বাদ দিয়ে হাজার-বারো’শ টাকা আয় হয়েছে। স্টাফের (সুপারভাইজার) হাজিরা দিবো কোথা থেকে, আর জমা দিবো কিভাবে। আমার সংসার চলবে কিভাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কিসের কোটা না-কি কি নিয়ে যেনো ছাত্ররা আন্দোলন করছে শুনেছি। এ ধরনের আন্দোলন আমাদের গরিবের পেটে লাথি মারা।
তানজিল পরিবহনের চালক মো. মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কি করবো কিচ্ছু করার নেই। সবই কপাল। ওপরওয়ালা যা লিখেছে তাই হবে। মালিক যদি মানতে না চায় জমা পুরোটাই দিতে হবে। কিছু করার নেই। না হলে গাড়ি নিয়ে নেবে।
শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্লকেড আন্দোলনে বাংলামোটরের উভয়পার্শ্বে শতশত যানবাহন আটকা পড়েছে। বাংলামোটরের জট পূর্বদিকে জনকণ্ঠ ভবন পেরিয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাসগুলো থেকে যাত্রীরা নেমে হেঁটে রওনা দিয়েছেন। তবে দু’চারজন যাত্রী বাসেই বসে রয়েছেন। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের স্টাফ মার্গারেট যাবেন মিরপুর-১ এ। হাঁটতে কষ্ট হয় বলে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে ৩ ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন।
সব যানবাহন থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভ্যাপসা গরম থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই রাস্তায় গাড়ি রেখে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কোন কোন বাসের স্টাফরা গরম উপেক্ষা করে লম্বা হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তবে কারও মুখেই হাসি নেই। সবাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে সব পার করছেন।
বিকেল ৫টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাংলামোটর মোড়ে অবস্থান দেখা গেছে। পুরো কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স, রোগী পরিবহনের গাড়ি, সাংবাদিকদের যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছে। মূল সড়ক যেহেতু বন্ধ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রং সাইড দিয়ে পার করে দিতে দেখা যাচ্ছে। রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে কাগজপত্র দেখে তবেই ছাড়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থেকে খানিকটা নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছে।
৭ জুলাই বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির শুরু হয়, ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরদিন ৮ জুলাই বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করে রাখে। ৯ জুলাই একদিন বিরতি দিয়ে ১০ জুলাই আবার রাজপথে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রথম দিনের তুলনায় উপস্থিতি কিছুটা হলেও কম লক্ষ্যণীয়।
২০১৮ সালে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বাতিল হয়। গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এরপর থেকেই আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে থাকা অবস্থায় বুধবার (১০ জুলাই) হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তাতেও অনড় আন্দোলনকারীরা।