ছাত্রদের সামনে রেখে ‘ব্লু-প্রিন্ট’বাস্তবায়নের চেষ্টায় ছিল জামায়াত-বিএনপি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যে দাবি ছিল সেই দাবি নিয়ে বেশ কিছুদিন আন্দোলনের পর, এক পর্যায়ে আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অন্যান্য যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যারা প্রকৃতপক্ষে এই কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছিল, তারা কোন ধরনের আমাদের পুলিশি অ্যাকশন বলেন বা অন্য কোন ধরনের বিতর্কে যায়নি। আমরা তাদের সাথে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে সহযোগিতা করেছি। তাদের সঙ্গে একটা সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি। যাতে তারাও কোন খারাপ কিছু না করে। এখন পর্যন্ত সাধারণ যেসকল ছাত্ররা তারা কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক যে কার্যক্রম এর সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার শনিবার (২৭ জুলাই) বার্তা২৪.কম’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বিএনপি-জামায়াত জানিয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াতের যে সন্ত্রাসীরা রয়েছে, তারা এই ব্যানারটিকে সামনে রেখে সাধারণ ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পেছন দিক থেকে এই আন্দোলনকে ছিনতাই করেছে। আন্দোলনটাকে ছিনতাই করে তারা সহিংসতার দিকে নিয়ে গিয়েছে, যেটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কখনই চায়নি। সাধারণ ছাত্রদের যারা নেতৃবৃন্দ, যারা সমন্বয়ক তারা কিন্তু বার বার বিবৃতি দিয়েছে। সহিংসতা কখনই আমরা করছি না, সহিংসতা আমাদের কাম্য নয়। আমাদের কেউ সহিংসতা করছে না। এটা কিন্তু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়করা বলেছে। আমরাও বলেছি যে, সাধারণ ছাত্রদের সাথে এই ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের বা নাশকতার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এই কারণে সাধারণ ছাত্রদের সাথে আমাদের কোন বৈরিতা নেই। বরং আমরা তাদের সহায়ক।
তিনি বলেন, কিন্তু এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে বিএনপি এবং জামায়াতের সন্ত্রাসীরা তাদের ব্লু-প্রিন্ট বাস্তবায়ন করেছে। তারা দীর্ঘদিন যাবত ব্লু-প্রিন্ট এঁকেছিল। তারা শুধু এই ব্যানারটাকে ব্যবহার করেছে। এটা কিন্তু একটা নন-পলিটিকাল ব্যানার। যেহেতু সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন, সেহেতু এটা নন-পলিটিক্যাল। অরাজনৈতিক একটা বিষয়। কাজেই ব্যানারটিকে তারা ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারকে পতনের জন্য, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ সেই উন্নয়নকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য তাদের যে ব্লু-প্রিন্ট সেটা তারা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল।
প্রথমত উন্নয়ন ধ্বংস করে দেওয়া, দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা পতন ঘটানোর জন্য তারা ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী কাজ করেছে। এই ক্ষেত্রে তারা পুলিশকে প্রথম এবং প্রধান টার্গেট হিসেবে নিয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, পুলিশের সমস্ত স্থাপনায় তারা আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। স্থাপনা এবং ব্যক্তি পুলিশ ইন্ডিভিজিউয়ালি যাকে যেখানে পেয়েছে তাকে সেখানে আক্রমণ করেছে এবং আমাদের তিনজন সদস্যকে তারা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের অসংখ্য স্থাপনা প্রায় ৬৯টি পুলিশ-বক্স তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের দুইটি ট্রাফিক ডিসি অফিসে তারা আক্রমণ করেছে, চারটি এসি ট্রাফিক অফিসে তারা আক্রমণ করেছে। তিনটি থানায় আক্রমণ করেছে। দুইটি ফাঁড়িতে তারা আক্রমণ করেছে।
কিন্তু আমি এই ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বলতে চাই তাদের এই ব্লু-প্রিন্ট যাতে তারা বাস্তবায়ন করতে না পারে, তার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আমরা আমাদের প্রত্যেকটি সদস্য জীবন বাজি রেখে সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। আমাদের প্রতি সদস্য আন্তরিকভাবে এই শত্রুদের বিরুদ্ধে, যারা এই নারকীয় সন্ত্রাস করেছে, যারা সেতু ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তর পুড়িয়ে দিয়েছে, ডেটা সেন্টারে আক্রমণ করেছে, টোল-প্লাজা ধ্বংস করেছে এমন অসংখ্য জায়গা তারা এই নাশকতাগুলো করেছে। আমাদের প্রতিটি সদস্য শতভাগ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে এদেরকে প্রতিহত করেছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই পুলিশকে আক্রমণ করে পুলিশের মনোবল কখনই ভাঙা যাবে না।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সৃষ্টি। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে প্রথম বুলেটটি ফায়ার করেছিল আমাদের রাজারবাগের গর্বিত পুলিশ সদস্যরা। তাদের উত্তরাধিকার আমরা। এই স্বাধীনতাবিরোধীরা যেহেতু পুলিশকে দেখতে পারে না, পুলিশকে তারা টার্গেট মনে করে, কাজেই আমাদের একজন সদস্য জীবিত থাকতেও বঙ্গবন্ধুকন্যার কোন ক্ষতি করতে আমরা দেবো না।
বর্তমান যে গণতান্ত্রিক সরকারে পতন ঘটাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন সদস্য জীবিত থাকতেও এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বিন্দুমাত্র স্পেস (জায়গা) আমরা দেবো না বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লব কুমার।
তিনি বলেন, তার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, যত কাজ করা প্রয়োজন আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটানোর যদি প্রয়োজন হয় সেটা ঘটাতেও আমরা এক বিন্দু দ্বিধা করব না।
সাধারণ ছাত্র আর জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসী দুইটা আলাদা ইস্যু জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ ছাত্রদের সাথে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কোন বৈরিতা নেই। আমরা তাদের সমস্ত প্রটেকশন (নিরাপত্তা) দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু তাদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে যদি জামায়াত-বিএনপি কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক লীলা ভবিষ্যতেও করার চেষ্টা করে তাদেরকে সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে এবং গত যে নাশকতা তারা করেছে এখন পর্যন্ত ২২৯টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে এবং প্রায় ২৮০০ থেকে ২৯০০ আসামি আমরা গ্রেফতার করেছি। এমন আসামিও আমরা পেয়েছি যারা এই নাশকতার মূল কার্যক্রমে লিপ্ত ছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। তারা কেন করেছে? কারা এর পেছনে মদদ দিয়েছে? এই নাশকতার পেছনে দেশীয় যারা রয়েছে পয়সা বিনিয়োগ করছে এবং যারা বিদেশে বসে বসে তাদের সাথে যোগাযোগ করছে, পয়সা বিনিয়োগ করছে, পরামর্শ দিচ্ছে এই বিনিয়োগগুলো কারা করেছে, কেন করেছে? তা এখন আমাদের কাছে সব তথ্য পরিষ্কার। গতকাল ডিবি জানিয়েছে নুরুল হক নুরকে একজন চার-লাখ টাকা দিয়েছে। এই টাকাগুলো কেন দিয়েছে, সেটাও এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার।
কাজেই এখন আমাদের অপারেশন চলছে। যত বড় নেতা হোক না কেন একজনকেও আমরা ছাড়ব না। একজনও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাবে না। যারা আমার পুলিশ সদস্যদের গায়ে আঘাত করেছে, যারা রাষ্ট্রীয় সমস্ত সম্পদ নষ্ট করেছে, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেলে আঘাত করেছে, একজনকেও আমরা ছাড় দেবো না । তারা যেখানেই থাকুক আমাদের যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন প্রত্যেককে আমরা ধরে নিয়ে এসে আদালতের কাছে সোপর্দ করব।
আমরা মনে করি, সাধারণ শিক্ষার্থী যারা তারা এই নাশকতার সাথে যুক্ত ছিলনা। এই নাশকতার সাথে সম্পূর্ণভাবে জড়িত জামায়াত এবং বিএনপি। জামায়াত এবং বিএনপির সাথে যারা জড়িত নাশকতার সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে কিন্তু আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেবো না। আমি এখনও বিশ্বাস করি সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই নাশকতার সাথে জড়িত ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই, বলেন বিপ্লব কুমার।