মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, বাঁধে ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫৫ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা দু'দিনের ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির স্রোতে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। যার ফলে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এর আগে জুলাই মাসের ১ তারিখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে এ দুই উপজেলার ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
শুক্রবার (০২ আগস্ট) দুপুর থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে পরশুরামের শালধর এলাকায় মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে উপজেলার চিথলিয়া, বক্স মাহমুদ, মির্জানগর ও পৌর এলাকাসহ ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়াও ফুলগাজী উপজেলায়ও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫৫ সে.মি এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আগামী তিন ঘণ্টায় আরও পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরশুরাম পৌরসভার বাজার সংলগ্ন মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউতলী রাস্তার ২টি স্থানে এবং পরশুরাম থানা সংলগ্ন ১টি স্থান দিয়ে বাজারের দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।পৌরসভার বাউরপাথর, বাউরখুমা, দুবলাচাদ, কোলাপাড়া, অনন্তপুর, উত্তর গুথুমা, বেড়াবারিয়া গ্রামে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
একই সূত্র জানায়, উপজেলায় মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগরের সিলোনিয়া নদীর বেডিবাঁধের একটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এতে উত্তর মণিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, কাউতলী ও দাসপাড়া গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এছাড়াও চিথলিয়া ইউনিয়নের শালধর গ্রামে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনে ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের নদীর বেড়িবাধ ভাঙ্গনে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
একইদিন বিকালে ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদীর একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৩টি, আমজাদ হাট ইউনিয়নে ৫টি ও মুন্সিরহাট ইউনিয়নে ২টি মিলে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।পানি ঢুকে এলাকার বিভিন্ন সড়ক, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজী বাজার।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ফুলগাজী উপজেলায় ১ হাজার এবং পরশুরাম উপজেলায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গেল জুলাই মাসে বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবাও বন্যার কবলে এ দুই উপজেলার হাজারো মানুষ।স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পরবর্তী ভাঙনকৃত স্থানগুলো নামমাত্র মেরামত করেছে যার ১ মাসের মাথায় ফের ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পরশুরামের শালধরে যে স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। গত জুলাই মাসে পূর্বের ভাঙন স্থান মেরামত শেষ হওয়ার আগেই সে স্থান আবার ভেঙেছে।
চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। এক মাস পূর্বে ভেঙে যাওয়ার বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে ভাঙন এলাকায় দেখা যায়নি। আজ সকাল ১১টার দিকে শালধরে বাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নের মালিপাথর, পাগলিরকুল, দক্ষিণ শালধর গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
মির্জানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনীয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছেন। আমরাও ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, রাত ৮টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বেড়ে বিভিন্ন স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনের আশংকা আছে এমন স্থানগুলোতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ চলমান আছে। বৃষ্টি বাড়লে আরও বেশ কিছু স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পরশুরাম পৌরসভার উত্তর বাজার এলাকায় বন্যার কারণে আটকে যাওয়া প্রায় ১০টি পরিবারকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদফতর ফেনীর উচ্চ পর্যবেক্ষক সালেহ আহাম্মদ বলেন, ফেনীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার, ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার ও ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুইদিনও ফেনী মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।