প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে দেশের স্বার্থে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সম্প্রতি তারা (আন্দোলনকারীরা) আপনিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে তাতে করে আপনারা চিন্তিত, জনগণও চিন্তিত। যে জায়গায় পরিস্থিতি পৌঁছেছে তাতে করে আপনিসহ অন্যদের সেই সেক্রিফাইস করার সময় আছে কি না যে মন্ত্রিত্ব থেকে আপনারা সরে দাঁড়াবেন– একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন হলে যদি এরকম কোনো সিচুয়েশন আসে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন... আমরা সবসময় দেশের জন্য কাজ করি, আমরা সেটা (পদত্যাগ) করব যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।’
বিজ্ঞাপন
এসময় ঢাকা জেলা ও মহানগর, গাজীপুর ও নরসিংদীতে কারফিউ অব্যাহত থাকবে বলে জানান আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম ও বিএনপি সবসময় ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল। শুরু থেকেই তারা দেশকে অকার্যকর করতে চেয়েছিল। যে কারণে ছাত্রদের কাছে আহ্বান, তারা যাতে লেখাপড়ায় ফিরে যান। কারণ তাদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। এরপরেও যদি তাদের কোনো দাবি থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরজা সবসময় খোলা আছে।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রী বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলে দিই, আমাদের শোকের মাস চলছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস। মাসটিকে শোকের মাস হিসেবে পালন করি। বঙ্গবন্ধু শাহাদতবরণ করার পর থেকে এটা চলছে।
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এসব ঘরের বাসিন্দারা নতুন করে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। এরা সকলেই নিম্ন আয়ের মানুষ। তদুপরি বন্যার কবলে পড়ে কয়েকদিন কর্মহীন থাকায় এসব ঘর মালিকরা এখন রয়েছেন ব্যাপক অর্থ সংকটে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামত নিয়ে তারা এখন ফের দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ভাঙাখাঁ ইউনিয়নের জাগিদার বাড়ি এলাকার গৃহবধূ রাবেয়া আক্তার বলেন, 'আমার ঘরের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঘরের কোমর পানি ছিল। আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। বন্যার পানিতে ঘরের অবস্থা এমন হয়েছে যে- বসবাসের মতো পরিবেশ নেই। মেরামত করা ছাড়া ঘরে উঠা যাবে না। আমার স্বামী দিনমজুর। বন্যা আমাদেরকে দুর্দশাগ্রস্ত করে দিয়েছে। ঘর মেরামত কোন উপায় আমাদের নেই। ঘরে তো যেতে হবে, আশ্রয় কেন্দ্রে আর কতদিন থাকবো?'
একই উপজেলা মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের নাছরিন ও সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, 'ঘরের অবস্থা একেবারে জীর্ণ হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। কিন্তু ঘরে যেতে হলে ঘর মেরামত করতে হবে। মেরামতের মতো অর্থ নেই আমাদের।'
একই সদর উপজেলার পশ্চিম দিঘলী গ্রামের মমিন উল্যার ঘরে হাঁটু পানি ছিল। প্রায় দুই সপ্তাহের মতো ঘরের ভিটি তলিয়ে ছিল পানিতে। এখন পানি ঘর থেকে নেমেছে। তবে দেখা দিয়েছে ক্ষতচিহ্ন।
মমিন উল্যার ঘরের ভিটি দেখলে মনে হবে চাষকৃত কোন ফসলি জমি। অবস্থা এমন হয়েছে যে- ঘরে পা দেওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়ছে। আর ঘরের বেড়া এবং খুঁটি এখন নড়বড়ে হয়ে আছে। ভেঙে পড়ে কিনা সে ভয় তো আছেই। ঘরের আসবাবপত্র পানিতে পঁচেও নষ্ট হয়েছে।
মমিন উল্যার পেশায় একজন কৃষক। বন্যায় কৃষিও শেষ। আয় রোজগার নেই। তাই ঘর মেরামত করারও অর্থ নেই তার।
মমিন উল্যা বলেন, 'বন্যার পানি উঠা শুরু হলে শুরুতে ঘরে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু পানি বাড়তে বাড়তে খাটের উপরও উঠে গেছে। তখন কিন্তু অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ঘরে থাকতে পারিনি। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছি পাশের বেড়িবাঁধের উপর। সেখানে ঝুপড়ি ঘরে ছিলাম এখন ঘর থেকে পানি নেমেছে। ঘরের টানে স্ত্রী জরাজীর্ণ ঘরে চলে আসে। কিন্তু ঘরের যে অবস্থা থাকার মতো পরিবেশ নেই। শুধু খাটের উপর বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না।'
মমিন উল্যাদের বাড়ির আশেপাশে বহু কাঁচাঘর পানির নিচে তলিয়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। এখনো অনেকের ঘরে হাঁটু পানি, কারো ঘরে কিছুটা কম। যেসব ঘরের পানি নেমেছে, সেগুলো বসবাসের উপযোগী নয়। ঘরের ভিটির মাটি নরম হয়ে আছে। ঘরের নীচের অংশের কাঠ পঁচে গেছে। ঘরের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রও নষ্ট হয়েছে অনেকের।
মমিন উল্যার প্রতিবেশি জাহাঙ্গীর বলেন, 'এখনো ঘরের ভেতের অনেক পানি। এ পানি সরতে আরও অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঘর পানিতে তলিয়ে থাকায় অনেক মালামাল নষ্ট হয়েছে। ঘরের মাটি নরম হয়ে আছে। এ মাটিতে পা রাখা যায় না। ঘরের পানি সরলেও উঠা যাবে না। মাটিগুলো সরিয়ে নতুন মাটি দিয়ে ভিটি ঠিক করতে হবে। বেড়ার কাঠ পঁচে গেছে, সেগুলোও পরিবর্তন করতে হবে। বন্যায় অনেক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কৃষি কাজ করতাম, বীজতলা পঁচে গেছে। জমিতে রোপা আমন নষ্ট হয়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সবদিক দিয়ে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ অবস্থায় ঘর মেরামত করবো কি দিয়ে?'
ওই এলাকার রোকসানা বেগম বলেন, 'বন্যার পানি খাটের ওপর উঠেছে। বন্যার পানি থেকে তেমন কিছু রক্ষা করতে পারিনি। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরও এখনো পানির নীচে। এ ঘরে সহজে ওঠা যাবে না।'
জোহরা বেগম নামে এক নারী বলেন, 'বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে ঘর করে থাকতাম। ঘরে এখনো পানি। ঘরের অবস্থা একেবারে খারাপ। কিভাবে এ ঘর মেরামত করবো, সে অবস্থা নেই।'
একই এলাকার নুর হোসেন, শিরিন আক্তার, জাহেদা বেগমসহ অনেকে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের চিত্র তুলে ধরেন। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব ঘর মেরামত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। আবার ঘর মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করতেও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
তারা জানান, চারিদিকে এখনো অনেক পানি। কোথাও বুক পরিমাণ, কোথাও কোমর বা হাঁটু। বসতভিটিও তলিয়ে আছে। যতক্ষণ পানির নীচে থাকবে, তত ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। ঘরের ভিটির মাটি সরিয়ে নতুন মাটি দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তাছাড়া ঘর মেরামতের অর্থও নেই অনেকের কাছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের হিসবে মতে জেলাতে এবারের বন্যায় ১৮ হাজার ৩৬৫ টি কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মেরামত করতে ব্যয় হবে ১২৬ কোটি এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বলেন, 'আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি।'
বায়ুদূষণের দূষিত শহরের তালিকায় আজ প্রথম স্থানে আছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কিনশাসা। এদিকে তালিকায় ১২তম অবস্থানে আছে রাজধানী ঢাকা।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী- ৯৬ স্কোর নিয়ে ঢাকা বায়ুদূষণে মাঝারি অবস্থানে আছে।
অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কিনশাসা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও পাকিস্তানের লাহোর যথাক্রমে ২৭৩, ১৮৯ ও ১৮৪ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করেছে।
সাধারণত, একিউআই স্কোর ৫১ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকলে তাকে ‘মাঝারি’ পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।
অন্যদিকে ৩০১ থেকে ৪০০-এর এর মধ্যে থাকা একিউআইকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
সাধারণত নগরীর বাতাসের গুণমান শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। যেহেতু এখন কমবেশি বৃষ্টির দেখা মিলছে, তাই বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান এখন প্রায় মাঝারি পর্যায়ে থাকে।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
দেশের সব বিভাগেই ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর মধ্যে ৮ জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া এক সতর্কবার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমানের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
‘এই মামা বাংলামোটর যাবেন?' গ্রিন রোডের কাছাকাছি পান্থপথের একটি হাসপাতালের সামনে প্যাডেলচালিত রিকশাচালকের কাছে জানতে চাওয়ার ভঙ্গিটা এমনই ছিলো। ডাকে সাড়া দিলেন চালক। ভাড়া চাইলেন ৭০ টাকা। কিন্তু ঠিক তখনই এসে থামলো একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গায়ে চকচকে রঙ। পরিপাটি। আরামদায়ক সিট। দেখে ঢোক গিললাম। মানে প্যাডেলচালিত রিকশাচালকের সাথে কথপোকথনটা যেনো থামিয়ে দিতে নিজের কথাগুলোই গিলে ফেললাম।
দুপুরের ভ্যাপসা গরম। শরতের আকাশে ছোপ ছোপ কালো মেঘও জমেছে। তার উপর দুই-এক ফোটা বৃষ্টিও পড়ছে। আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত চোখটা ঘুরিয়ে নিলাম প্যাডেলচালিত রিকশাওয়ালার দিক থেকে। অটোরিকশা চালকের কাছেও একই প্রশ্ন ‘যাবেন বাংলামোটরে?’।
এবার আর মামা নয়, সরাসরি আপনি বলে সম্বোধন।
সম্মতি পেতেই প্রশ্ন- ‘কত ভাড়া?’ দরকষাকষিতে ৫০ টাকা ভাড়া ঠিক হলো। এরপর চাপলাম ‘পক্ষ্মীরাজে’। সুইচের এক টিপেই চোখের পলকে বিআরবি হাসপাতাল থেকে গ্রিনরোড সিগন্যাল। সেখানে অবশ্য আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন প্যাডেলচালিত রিকশাওয়ালা। বড় চোখ করে চেয়ে আছেন। চোখাচোখি হতেই হালকা অপরাধবোধে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলাম।
এরপর সিগন্যাল ছাড়তেই যেনো রাস্তার রাজা বনে গেলো আমার ‘অটোরিকশা’। উঁচু-নিচু কোন বাছ-বিচার নেই। ধেই ধেই করে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলছে। মহা মুশকিল। বার বার সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া আমিতো ঘরপোড়া গরু। একটু ভয়ই পেলাম। কিন্তু থামালাম না। উল্টো বললাম ‘মামা, এত দ্রুত চালাচ্ছেন, পুরোই মোটর গাড়ি!’ হালকা ব্রেক কষে তার উত্তর- ‘প্রাইভেট কারের থেকে এটা কম না!’
হবে না কেনো। ব্যাটারির শক্তির গতি নিয়ে সত্যিই যেনো রাস্তার রাজা হয়ে উঠেছে এই রিকশাগুলো। চালকরা পাত্তা দেয়না কোনো গাড়িকেই। বাস, প্রাইভেট কার কিংবা অন্য কোনো দ্রুতগতির যানবাহনে থোরাই কেয়ার। রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে এই রিকশা। যা রীতিমতো আতঙ্কের।
রাজধানীসহ সারা দেশে অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে এই ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট। অলিগলিসহ মূল সড়কে এসব এই রিকশার দাপটে ভেঙে পড়েছে রাজধানী ট্রাফিক ব্যবস্থা। অনিয়ন্ত্রিত চলাচল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাহনটি এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য যানবাহন চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাফিক পুলিশের নির্বিকার ভূমিকার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই নৈরাজ্য চলছে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে অটোরিকশার এই উপদ্রব।
নিউ মার্কেট, সায়েন্সল্যাব, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগে সরজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকার মূল সড়কে এলোমেলোভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সড়কে বাস ও প্রাইভেট কারের মাঝখান দিয়েই ঢুকে পড়ছে এই রিকশাগুলো। কোনোটি মালপত্র নিয়ে, কোথাও যাত্রী নিয়ে। শুধু যে নিয়ম ভেঙে, ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলছে তাই নয়। এর চালকেরা সড়কে যখন তখন বাক-বিতণ্ডায় জড়াচ্ছে। কখনও বাইক চালকদের সঙ্গে কখনওবা গাড়িচালকের সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখা যায় তাদের। বিশেষ করে হাতিরঝিল। যেখানে কখনওই রিকশা চলতে দেখা যায়নি। সেখানেও চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল হচ্ছে। কিন্তু তাতে কার কী যায় আসে?
তবে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলায় সত্যিই অতিষ্ঠ নগরবাসী। তবে তারা এমন একটি বাহনের বিপক্ষে নয়। তারা বলছেন, যানজটের এই শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চাহিদা রয়েছে। সেই সঙ্গে রিকশাগুলো সুসজ্জিত ও আরামদায়ক সিট থাকায় যাত্রীরা আকৃষ্টও হচ্ছে। তবে অবশ্যই সেটা অলি-গলিতে চললে ভালো হয়। রাজধানীর মূল সড়কে এসব রিকশা ‘এক প্রকারের যন্ত্রণা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পা উঠিয়ে বসে থাকা চালকরা স্রেপ ট্রাফিক আইনই ভাঙছেন না। যেখানে সেখানে দেখাচ্ছেন ঔদ্ধত্য আচরণ। আর মূল সড়কে তাদের নিষেধ করার সরাসরি বিরোধিতা করেন তারা।
কাওরান বাজারে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ওহিদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাগো মেইন রাস্তা মানা করার কিছু নাই। যাত্রীরা আমাদের চায়। আমাদের রিকশার কারণে জ্যাম হয় না, জ্যাম হয় ট্রাফিকরা (ট্রাফিক পুলিশ) বইস্যা আছে এজন্য।’
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের দাবি, তাদের রিকশা তৈরি ও পরিচালনায় যে খরচ তা উঠাতে মূল সড়কে রিকশা চালাতেই হবে। তা না হলে তাদের জমা, চার্জের খরচ ও রিকশার খরচ উঠবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহার হয়। একটি ১৩০ ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন, অন্যটি ২৩০ ভোল্টের। ১৩০ ভোল্টের ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে বিদ্যুৎ খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকার। আর ২৩০ ভোল্টের ব্যাটারি চার্জ হতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকার। তবে তা ব্যক্তি ব্যবস্থাপনায়। এরই মধ্যে রাজধানীতে এসব বাহনের ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভিন্ন স্টেশন ও গ্যারেজে। সেখানে চার্জ দিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হয় বলে দাবি চালকদের।
হাসু নামে এক চালকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, এমন একটি রিকশা তৈরিতে খরচ হয় ৯০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আবার চার্জ দিতে খরচ হয় দিনে এক-দেড়শ'। জমা দিতে হয় ৫০০ টাকা। সব মিলে গলিতে চালাইলে পেট চলবে না।'
'সরকার আমাগো আলাদা লেন করে দিতে পারে। কিন্তু বন্ধ করা যাবে না,’ দাবি হাসুর।
কেউ কেউ মনে করছেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করা যাবে না, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাবে। নগর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এর জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও পুর্নবাসন ব্যবস্থা।
"অটোরিকশা যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। পরে আরও বেশি কাঠ-খড় পোড়াতে হবে। যারা সড়কে নেমে গেছে তাদের চাইলেই রাতারাতি সরাতে পারব না। এর জন্য কৌশলী হতে হবে," বলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান।
দ্রুত নীতিমালা তৈরির তাগিদ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, দুঃখজনক হলো- ২০১৮ সালের পর থেকে বার বার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নীতিমালা তৈরি করার। কোন কোন সড়কে তারা চলতে পারবে- সে নীতিমালাও হয়েছে। কিন্তু সেটা খসড়া আকারে রয়েছে। এটাকে পুরোপুরি রূপ দেওয়া বা বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আমরা দেখছি অটোরিকশা সংখ্যা সম্ভাব্য ৩০ থেকে ৪০ লাখে ঠেকেছে।
"এটা আরও বাড়তে থাকবে যদি অতিদ্রুত নীতিমালা তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ না করা না যায়। যানজট ও সড়কের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে একটা বড় ধস নেমেছে, এই ধস ঠেকানো আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা," বলেন ড. হামিউজ্জামান।
এর আগে গত মে মাসে রাজধানীতে ব্যাটারি বা যন্ত্রচালিত কোনো রিকশা চলতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো গণ-অভ্যুত্থানে পতন হওয়া সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। আন্দোলনের মুখে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় হাসিনা সরকার।