সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি সারাদেশে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ সোমবার (৫ আগস্ট) এ কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ সোমবার সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আসিফ মাহমুদ জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করেছে খুনি হাসিনা। চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশেপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র জনতার সঙ্গে রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।
বিজ্ঞাপন
এই ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে। যে যেভাবে পারেন এর মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটাবো।
আনারসকে ঘিরে জমে উঠেছে রংপুরের বিভিন্ন বাজারের ফল ব্যবসা। ছোট-বড় দোকান থেকে শুরু করে ভ্যান কিংবা রাস্তার পাশে দাড়িয়েও আনারস বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য সময় থেকে দাম একটু কম হওয়ায় ক্রেতাদেরও রয়েছে বেশ ভিড়। মৌসুমের শুরু থেকেই আনারসের চাহিদা বাজায়ে রয়েই গেছে।
নগরীর টাউন হল সাথেই আনারসের পাইকারি বাজার। এখান অনেক দূর থেকে এসেও বিক্রেতারা কেনা-বেচায় ব্যস্ত হয়ে পরেন। বিশেষ করে এলাকার ছোট-বড় দোকানদার ও ভ্যানে করে আনারস বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। আনারস পিসপ্রতি কিছুটা লাভের আশায় পাইকারি এই বাজারে সকাল থেকে ভিড় জমে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণের।
সিটি বাজার থেকে আনারস কিনতে আসা ক্রেতা রমজান আলী বলেন, এ্যালা যত গরম পলছে ঘরোত সউক গুলারই জ্বর ধরছে। আনু বাজারোত আনারস কিনিম বুলি। দ্যাখো দামও কম নোয়ায়। এ্যালা আর কি করি নেওয়ায় খাইবে। এইজইনতে ৬০ ট্যাকা দি নিনু এখান আনারস।
নগরীর মাহিগঞ্জের আনারস ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, পেট চালাতে ভ্যানে করি আনারস ঝালাই নিয়া গ্রামের মোড়ে মোড়ে বিক্রি করি৷ এখান থাকি আনারস কিনলে ৫-১০ টাকা হইলেও কম পাওয়া যায় ওইটাই লাভ৷ আনারসে আকার মত কোনোটা ২০ থেকে ৪০ টাকা করে কিনি। কিন্তু বাজারে এইটাই ৫০-৬০ টাকা। তাই প্রতিদিন এখান থাকি কিনি ব্যবসা করি।
খুচরা ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, আনারসের মৌসুমের শুরু থাকি ১৪ হাজার আড়াই হাজার পিসেরও বেশি বিক্রি করছি আনারস। কেনা পরছে ২০-৪০ টাকা বিক্রি করি ১০ টাকা লাভে৷ আনারসের চাহিদা খুব, প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৩৫০ টা আনারস বিক্রি করি৷
নগরীর বেতপট্টিতে ভাসমান আনারস বিক্রেতা জাহিদ বলেন,আকার অনুযায়ী আনারসের দাম ৩০-৫০ টাকা। লাভ কম করি সেল বেশি হয়। প্রতিদিন অনায়াসে ১০০ পিস আনারস বিক্রি হয়। সেই সাথে আনারস ঝালাইের চাহিদা প্রচুর দম ফেলাতে পারিনা। ১০-২০ টাকার করে ঝালাই রাত পর্যন্ত। বিকেল থাকি ব্যবসাটা বেশি ভালো হয় শহরে লোকসমাগম বাড়ে।
পাইকারি বাজারের আনারস ব্যবসায়ীরা বলেন, সরাসরি আনারসের আড়ত থেকে আনি হাজার হাজার পিস আনারস। গড়ে পিস প্রতি পরে ২০ টাকা পড়েছে। এখানে যেমন বড় আনারস আছে, তেমনি ছোটও আছে। আমি তিনটি ভাগে আনারস বিক্রি করছি। যেগুলো একটু বড় সেগুলো ৫০ টাকায়, মাঝারি সাইজ ৪০ টাকায় এবং তুলনামূলক ছোট আনারস ২০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে পচনশীল পন্য যেহেতু সেল বেশি হওয়ার জন্য খুব বেশি লাভ না করেই ছেড়ে দিচ্ছি।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয়। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই ভবনটি বছরখানেক আগেই উদ্বোধন করেন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের বছর পেরোতেই এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এই কার্যালয়টি।
উদ্বোধনের পর থেকেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে কার্যালয়টি সরগরম থাকতো দিন রাত ২৪ ঘণ্টায়। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে জনরোষে পড়ে এই ভবনটি। উত্তেজিত জনতা সেদিন কার্যালয়টি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেই।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কার্যালয়টির বর্তমান অবস্থা দেখতে গেলে এমনই চিত্র পাওয়া যায়। যদিও বাহির থেকে গেইট দুটি আটকে রাখা হয়েছে তারপরও বাহির থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো উত্তেজিত জনতার কতটা আক্রোশের মুখে পড়েছিলো এই ভবনটি। ভাঙচুর ও আগুনের লেলিহান শিখায় কঙ্কালসার হয়ে পরেছে ভবনটির কাঠামো।
এদিন দেখা যায়, কার্যালয়টির মূল ফটক অক্ষত থাকলেও কর্মীদের প্রবেশের জন্য যে ফটকটি নির্ধারিত ছিলো সেটির কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে ককশিট ও বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ফটকটি। এক সময়ের ব্যস্ততম এই কার্যালয় এখন জনমানবহীন।
দলের মন্ত্রী-এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসা যাবার পথ নির্বিঘ্ন রাখার জন্য কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটি সবসময় ফাঁকা করে রাখা হতো। থাকতো পুলিশ সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। তবে এসবই এখন অতীত।
সড়কটি এখন ট্রাক মালিকদের দখলে। ফুটপাত দখল করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট। কার্যালয়টিতে প্রবেশের মত স্থানও আর অবশিষ্ট নেই। আওয়ামী লীগের এমন আকষ্মিক পতনে মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে অতীতের খাতায় ফেলে দিচ্ছে তাদের যত সৌর্য-বীর্য।
কার্যালয়টির মূল ফটকের পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। এরকমই একটি সদ্য গড়ে উঠা চায়ের দোকানে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। বার্তা২৪.কম কে তিনি বলেন, 'এই রাস্তাটা সবসময় নেতাকর্মীরা দখল করে রাখতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপাচাপিতে দাঁড়ানোটাও ছিলো দুরুহ। এখন এখানেই চায়ের দোকানে গড়ে উঠেছে, সেখানে বসে চা খাচ্ছি।'
এই যে দোকান দিচ্ছেন, সামনে এতো ট্রাক দাড় করিয়ে রাখছে কেউ কিছু বলছে না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বার্তা২৪.কম কে বলেন, 'এইখানে তো আর আগের মত নেতাকর্মীর আসে না। পুলিশও এইদিকে আসে না। রাস্তাটা খালিই থাকে তাই ট্রাক এখানে এনে রেখে দেয়। আমিও দোকান দিছি। এখনো কোন সমস্যা হয়নি।'
এর আগে গত ৬ আগস্ট কার্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুর করে নিয়ে যায় চেয়ার টেবিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আসবাবপত্র। পরে আগুন লাগিয়ে দিলে পুড়ে যায় সব কিছু। সে পোড়া ধ্বংসস্তূপ খুঁজে কিছু মানুষ বের করছেন লোহা ও অন্যান্য ধাতপ পদার্থ।
স্টিলের স্ট্রাকচারের উপর নির্মিত এই আধুনিক স্থাপত্যের ভবনটি আগুনের তান্ডবে কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। পুড়ে গেছে দ্বিতীয় তলার সেমিনার হলের স্টেজও। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পায়নি একমাত্র লিফটটিও। পুড়ে যাওয়া এসব জিনিস ভেঙে লোহাসহ ধাতপ অংশটুকু ভেঙে নিচ্ছিলেন টোকাইরা।
এর আগে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। তার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পরে এসব স্থাপনা।
এদিন, দুপুরের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডি ৩ নম্বরে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁও ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
আহতরা হলেন, ঢাকা কলেজের মশিউর রহমান (১৭), আব্দুল্লাহ (১৮), তৌহিদুর রহমান তানভীর (১৭), বাদল (১৭), সামির (১৫), তাহমিদ সালেহ (২১), আব্দুল্লাহ (১৮), আরিফ (১৯), শামীম (১৭), বখতিয়ার (১৮), মো শামীম (১৭), নিশাত (১৬), হুজাইফা (২৩), ইয়াসিন (১৮) ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী উসাইব (১৮)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ ঢাকা কলেজের নবীন বরণের অনুষ্ঠান ছিল। নবীন বরণ অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা বের হলে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজের ভেতরে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ক্যাম্পাসে এসে ভাঙচুর করে এবং আমাদের কলেজের বিলবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঢাকা কলেজে আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন। আহতরা অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আরও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মালবাহী ট্রাকের চাপায় পোশাক কারখানার দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও জনগণ ট্রাকটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক স্বাভাবিক হয়। শুরু হয় যানবাহন চলাচল।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে জেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলাধীন হরিণহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে স্টারলিং নামে ওই কারখানায় দুপুরের বিরতি দিলে শ্রমিকরা খাবার খেতে বের হন। এসময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পার হবার সময় উত্তরবঙ্গগামী মালবাহী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে শ্রমিকদের চাপা দেয়। এতে মূহুর্তেই ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। গুরুত্বর আহত হয় আরও ৩ জন। আহতদের মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে কারখানার অন্যান্য শ্রমিক ও স্থানীয়রা ট্রাকটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনা সদস্যরা গিয়ে তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।