দেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জাতীয় জীবনে শান্তি, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও দৈনন্দিন জীবন যাপনে স্বস্তি আনতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (৪ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এতে বলা হয়, সব পর্যায়ে সাংবিধানিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরণে জনগণের অধিকার সংরক্ষণ ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে সারা দেশে বহুসংখ্যক মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে, যা অত্যন্ত মর্মপীড়াদায়ক। এত বেদনাদায়ক ঘটনার পরেও আন্দোলনের তীব্রতা কমছে না। এ অবস্থায় পরস্পর বিরোধী পক্ষগুলোর মারমুখী অবস্থান শান্তি আনার পরিবর্তে ভবিষ্যতে আরও নির্মমতা বয়ে আনতে পারে। এ জন্য সহমর্মিতামূলক মনোভাব পোষণ করে সব পক্ষের সংলাপে অংশ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় সংস্কৃতি বিরাজ গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকের সমান ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং মর্যাদার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত সব সংকট নিরসনের আশা কমিশনের।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
আহতরা হলেন, ঢাকা কলেজের মশিউর রহমান (১৭), আব্দুল্লাহ (১৮), তৌহিদুর রহমান তানভীর (১৭), বাদল (১৭), সামির (১৫), তাহমিদ সালেহ (২১), আব্দুল্লাহ (১৮), আরিফ (১৯), শামীম (১৭), বখতিয়ার (১৮), মো শামীম (১৭), নিশাত (১৬), হুজাইফা (২৩), ইয়াসিন (১৮) ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী উসাইব (১৮)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ ঢাকা কলেজের নবীন বরণের অনুষ্ঠান ছিল। নবীন বরণ অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা বের হলে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজের ভেতরে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ক্যাম্পাসে এসে ভাঙচুর করে এবং আমাদের কলেজের বিলবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঢাকা কলেজে আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন। আহতরা অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আরও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মালবাহী ট্রাকের চাপায় পোশাক কারখানার দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও জনগণ ট্রাকটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক স্বাভাবিক হয়। শুরু হয় যানবাহন চলাচল।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে জেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলাধীন হরিণহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে স্টারলিং নামে ওই কারখানায় দুপুরের বিরতি দিলে শ্রমিকরা খাবার খেতে বের হন। এসময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পার হবার সময় উত্তরবঙ্গগামী মালবাহী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে শ্রমিকদের চাপা দেয়। এতে মূহুর্তেই ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। গুরুত্বর আহত হয় আরও ৩ জন। আহতদের মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে কারখানার অন্যান্য শ্রমিক ও স্থানীয়রা ট্রাকটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনা সদস্যরা গিয়ে তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিদাস পাহালিয়া নদীর (সিলোনিয়া নদী) তীরবর্তী এলাকা নদী ভাঙনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মনে ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা প্রবল হয়েছে।
ইতোমধ্যে ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে বেশ কয়েক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে এসেছেন। স্থানীয় আরও ৩ শতাধিক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নবাবপুরের ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড রয়েছে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরবর্তী অংশে। নদীর এ তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর, উত্তর রঘুনাথপুর, মজুপুর মুখের টেক এলাকা। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ইউনিয়নের এসব এলাকা ৬ফুট থেকে ৮ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পরে ২৮ আগস্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করলে নদীর তীরে বড় বড় ফাটল দেখা দিতে থাকে। এরপর পানির স্রোতের কারণে প্রতিদিন তীরের মাটি ভেঙে বিলীন হতে থাকে নদীগর্ভে।
ভাঙন কবলতি এলাকাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মজুপুরের শুক্কর আহম্মদ, শাহাদাত, মফিজের ভিটেমাটিসহ ৭টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং শাহাবুদ্দিন, অটোরিকশা চালক হোসেন, জসিমের ঘরবাড়িসহ ৩০টি বেশি বাড়ির আঙিনা ইতোমধ্যে ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রসহ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন তারা। এছাড়াও রঘুনাথপুরে আমিরাবাদের বেঁড়িবাঁধ ইতোমধ্যে রাস্তাসহ ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ নদীর আগ্রাসী ভাঙনে সব হারানোর শঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠেছে। কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত নবাবপুর ব্রিজটি নবাবপুর থেকে কসকা যাওয়ার একমাত্র আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক। ইতোমধ্যে ব্রিজটির চারপাশ ভেঙে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্রিজ সংলগ্ন পূর্ব সুলতানপুরে সংযোগ সড়কটিও ইতোমধ্যে নদীর স্রোতের কারণে ১২ ফুট ভেঙে গেছে এবং স্থানীয় আব্দুল মান্নানের বসত ঘরসহ ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড়ের ১২০টি পরিবার। এর মধ্যে গুচ্ছ গ্রামের পরিবার রয়েছে ৭৭টি। সুলতানপুরের সংযোগ সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হলেও ভাঙন স্থান দিয়েই পায়ে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে মানুষ।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা জাকির আহম্মদ বলেন, নদী ভাঙনের যে ভয়াবহতা দেখছি, মনে হচ্ছে আমার বাড়িটিও ভেঙে যাবে। আমার দুই সন্তানের জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করে দুটি দালান নির্মাণ করেছি বেশ কয়েকবছর আগে। এগুলো এখন ইচ্ছে করলেও সরাতে পারব না। শুধু আমরা নয়, পূর্ব সুলতানপুরের নদীর পাড়ের আদর্শ গ্রামে (গুচ্ছ গ্রাম) এরশাদের আমল থেকে ৭৭টি অসহায় পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। সেই পরিবারগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।
সুলতানপুরের আব্দুল মান্নান বলেন, নদী আমাদের থেকে কিছুটা দূরে ছিল। এখন কূল ভেঙে বাড়ির আঙিনায় চলে এসেছে। প্রবাসে থেকে আমি এই বাড়িতে ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে বসতঘর নির্মাণ করেছিলাম। এই বাড়িটি ছাড়া বাইরে কোনো জায়গা- জমি না থাকায় এই ভাঙন পরিস্থিতিতে আমি বিপদের মধ্যে আছি।
নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির জানান, আমার ইউনিয়নে তিনটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর কূলের ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের বাড়িঘর-আঙিনা ভেঙে গেছে তাদের অনেক পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে এবং নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, বন্যার পানির চাপ মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীনের পর ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর ফ্লুইজ গেইট, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনীপাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপুর, আউরারখিল, চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটাখিলা, কালিমন্দির, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাদামতলী, গুচ্ছগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে আনেকে ঘর-বাড়ি রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
আবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও পাঁচজনের। এ নিয়ে চলতি বছর মারা গেল ১০২ জন। আর ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৩৪ জন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও পুরুষ ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ।