কুষ্টিয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ ভাস্কর্য চত্বর অযত্ন ও অবহেলায় নষ্ট হতে চলেছে। শহরের এনএস রোডের পাশে ও পৌর বাজারের সামনে বাঙালির গৌরবজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত ভাস্কর্যটি রং তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রং তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের করা রং তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে দেওয়ায় চোখ আটকে যাচ্ছে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের এক হাতে রংয়ের কৌটা, অন্য হাতে তুলি। শরীর বেয়ে বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম। তবু, চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের।
সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উৎসবের সময়ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকার স্থাপনা আক্রান্ত হয়। মঙ্গলবার থেকে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কারসহ শ্রীবৃদ্ধি করার পাশাপাশি রঙীন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসব দেয়াল ও স্থাপনায় রঙ করছেন শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অঙ্কনের কাজ। নানা প্রান্ত থেকে হাজির হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন প্রতিটি দেওয়াল কালো, সাদা, লাল, নিল, হলুদসহ নানা রঙে রাঙাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল রঙ-তুলি। তাদের সাহায্য করছেন অন্য শিক্ষার্থীরা।
মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়রা জানান, ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় ও অযত্নে পড়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত ভাস্কর্যটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাস্কর্যগুলোর রং নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় ফেটেও ভেঙে গেছে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও শিক্ষার্থীরা যেভাবে এতো সুন্দর করে রঙীন করে তুলেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়।
মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক সংগঠনের সদস্য বলেন, এই স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা চত্বরটি ময়লা আবর্জনায় আবদ্ধ থাকতো। শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গেল বিশ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হচ্ছে। দেখতেও অনেক সুন্দর লাগছে চত্বরটি।
শিক্ষার্থীদের এসব কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন শহরবাসী। অনেক পথচারী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর কর্মতৎপরতা দেখছেন।
এদিকে, গত দুই দিনের ধারাবাহিকতায় আজও আনসার বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন সিগন্যালে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিও।
রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি তারা ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠা-নামা ও ইজিবাইকগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে থামার নির্দেশনা দিচ্ছেন, দোকানীদের ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন ব্যবহার মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট ব্যবহারের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন তারা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই ভূমিকায় খুশি পথচারী ও গণপরিবহনের চালকরা।
স্বপ্ন প্রয়াস যুব সংস্থার সভাপতি সাদিক হাসান রহিদ বলেন, পুলিশ নেই, তবু সড়কে শৃঙ্খলা আছে। শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। খুব বেশি যানজট হচ্ছে না। শুধু কি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, আমরা এই শহরটাকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মাধ্যমে নতুনভাবে সাজাতে চাই কুষ্টিয়াকে। এজন্য আমরা শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সদস্যরা মিলে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়ার সমন্বয় শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ দেশ আমাদের। দেশকে আমাদেরকেই সুন্দর ও ভালো রাখতে হবে। আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।