স্বপ্নের সংসার এখন আবর্জনার স্তূপ
ফেনী থেকে: ১২ বছর ধরে তিলে তিলে স্বপ্নের সংসার গড়েছেন ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ নাঙ্গলমোরা এলাকার গৃহবধূ রেহেনা বেগম। তার গোছানো সংসারে ছিল সখের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ও প্রয়োজনীয় জিনিস। মজুদ ছিল বছরের খাবার। তবে সবই ভেসে গেছে বানের জলে। পানির স্রোতে লণ্ডভণ্ড হয়ে রেহেনার সংসার এখন আবর্জনার স্তূপ।
গত ২২ আগস্ট ফেনীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া মুহুরি, কহুয়া, ও সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয় জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ নাঙ্গলমোরা এলাকা। তখনও সে ছিল না বিপত্তি। তবে হঠাৎ উজানের ঢলের পানিতে নিমিষেই তলিয়ে যায় ছাগলনাইয়া উপজেলা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পানি উঠে যায় ঘরের চিলেকোঠায়। জীবন বাঁচাতে ঘর থেকে আশ্রয় নেন পাশের স্কুলে।
রেহেনা বেগম বলেন, তিলে তিলে সংসার গুছাইছি। সব চলি গেছে। কিছু নিতে পারিনি। একশ মণ ধান ছিল। তাও ভেসে গেছে। ধানের গাছ হয়ে গেছে ঘরে। এক-কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেছি। কিছু বাঁচাতে পারিনি। যা ক্ষতি হইছে তা কেমনে পোষাবো। টিভি-ফ্রিজ সব শেষ। ঘরে পা রাখব তাও নাই। তছনছ হয়ে গেছে। এই সংসার গোছাতে ৫ বছর লাগবে। এভাবে এখন যে খাব তারও উপায় নাই। ৫ বছরেও মনে হয় এই সংসার গোছাতে পারব না।
শুধু রেহেনা বেগমই নন, ছাগলনাইয়ার উপজেলার লক্ষাধিক পরিবারের অবস্থা একইরকম। বন্যার পানিতে হারিয়েছে জমানো সম্পদ। নষ্ট হয়েছে বিছানাপত্র।
সরেজমিন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিলীন হয়েছে হাজার হেক্টর জমির ফসল। ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি। কাদা জমেছে বাড়ির আঙিনা ও ঘরে। এতে বন্যা পরবর্তী সময় সীমাহীন দুর্দশায় দিন পার করছে ফেনীর মানুষ। সাপ ও পোকামাকড়ের ভয়ে অনিরাপদ হয়ে পড়েছে ঘরবাড়িগুলো।
লাকী আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, আন্ডা কিয়া করমুরে বাপু। আঁর তো ব্যাজ্ঞান ভাসি গেছেগো। আর তো এক্করে কিছু নাই। আন্ডেরে কোনে ছাইবো (আমাদের কে দেখব)। আন্ডা কোন চাই নো, আন্ডাগো ঘর বান্ধি দাও।
মোকারম হোসেন নামের একজন বলেন, আমাদের এই এলাকার মানুষ বেশিরভাগই দরিদ্রতার বাইরে। তারা স্বনির্ভর। কিন্তু এমন বন্যায় তারা সব হারালো। সম্মানের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু চাইতে পারছে না। পুরো জেলার মানুষ আজ অসহায়। দেখেন বিছানা নেই। কাপড় নেই কীভাবে চলব-না চলব ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের ভাই ত্রাণ প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন পুনর্বাসন। আমাদের বসতিটা ঠিক করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আর কিছু চাই না আমরা।
বন্যা পরবর্তী সুপেয় পানির অভাব দিয়েছে ফেনীতে। বিপাকে পড়েছে শিশুরা। বইপত্র ভিজে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে লেখাপড়া। বসতভিটা উদ্ধারে কাজ করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বার্তা২৪.কমকে জানান, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বসতভিটার ক্ষতি নিরূপণের জন্য অধিদপ্তর মোতাবেক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপজেলাগুলোতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা নিরূপণ হলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বরাদ্দ আসবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা অধিদফতরকে স্কুল ও বই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তালিকা করতে বলা হয়েছে। আমরা এই বিষয় গুরুত্বের সাথে দেখব।