জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র সেতুতে চাঁদাবাজি বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শনিবার ( ৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের বেলটিয়া এলাকায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুরের অন্যতম সমন্বয়ক মীর ইসহাক হাসান ইখলাস লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জামালপুর শহরে চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় মাইকিং অব্যাহত রাখে শিক্ষার্থীরা।
গত ৭ আগষ্ট সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র সেতুর টোল আদায়কারীদের অতিরিক্ত টাকা আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সেখানে যায়। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে টোল আদায়কারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে নিরাপত্তার কারণে টোল আদায় অফিস কক্ষ থেকে ২ হাজার ৬০৩ টাকা, একটি মোবাইল ফোন, একটি মনিটর, একটি রাউটার, রশিদ বই উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর কাছে শিক্ষার্থীরা হস্তান্তর করে।
কিন্তু এই ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলে ঘটনার আংশিক বিবরণ ও মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি গণমাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ডাকাত প্রমাণ করতে মানহানিকর সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের হেয় করে সংবাদ প্রচার করায় নিন্দা জানিয়ে সঠিক সংবাদ প্রচারের আহবান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হামিদুল হক সীমান্ত, উমর ফারুক, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, জয় হোসেন, রাজন, শাহেদ, জুলফিকারসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিতি ছিলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বনানীর তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
শাহরিয়ার কবির ১৯৫০ সালে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্য অনুপ্রেরণামূলক পাণ্ডুলিপি এবং কবিতা লিখতে সহায়তা করেছিলেন, যেগুলি পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বাজানো হয়।
১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ১০১ জন ব্যক্তি মিলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে একত্রে মিলে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী ব্যক্তিদের বিচারের আহ্বান জানায়।
১৯৯৫ সালে শাহরিয়ার কবির বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
ময়মনসিংহের ভালুকায় চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ভালুকা উপজেলার ভান্ডাব গ্রামের মোহাম্মদ আজিমের ছেলে মোহাম্মদ রবিন (২৩) ও নূরুল ইসলামের ছেলে কবির হোসেন (৩৫)।
সোমবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব ১৪-এর কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সামসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর খালেদ সাইফুল্লাহর অটোরিকশা ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে রান্দিয়া যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। পরে রান্দিয়া মুন্সীবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে আসামি কবির হোসেন অটোরিকশা চালক খালেদ সাইফুল্লাহকে পেছন থেকে চাকু দিয়ে পেটে আঘাত করে। পরে অপর আসামি মোহাম্মদ রবিন গাড়ি থামায় এবং খালেদ সাইফুল্লাহকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে ধরে রাখে। পরে আসামি কবির হোসেন আহত খালেদ সাইফুল্লাহকে ছুরি দিয়ে পরপর বেশ কয়েকটি আঘাত করে। একপর্যায়ে গলায় ছুরিকাঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আসামিরা বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকে। পরে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে র্যাব-১৪, একটি টিম ভোরে জেলার গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া এলাকায় এবং ভালুকা থানাধীন ভান্ডাব এলাকায় দুটি অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করে ও ছিনতাইকৃত অটোরিকশার তিনটি ব্যাটারি উদ্ধার করে। পরে র্যাব গ্রেফতারকৃত আসামিদের ভালুকা মডেল থানায় হস্তান্তর করে।
উল্লেখ্য, নিহত খালেদ সাইফুল্লাহর (২৮) মরদেহটি গতকাল সকালে ভালুকা উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের রান্দিয়া ব্রিজের সামনে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে মডেল থানা পুলিশ। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকার ওমর আলীর ছেলে।
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৮৩৩ নাম্বার রুম থেকে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গ্রেফতার করে।
রাত সোয়া ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, আদাবর থানা এলাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে সাবেক রেলমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন তারা।
গণমাধ্যমে বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দায়িত্বে আছে। তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই সরকার থাকার পরও আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব হচ্ছে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাব দেখা যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন মাজারে একশ্রেণির উগ্রবাদী মানুষ হামলা করছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও পীর-ফকিরদের সংগ্রাম বাংলার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখন একশ্রেণির উগ্রপন্থী সাধারণ মানুষের ধর্মীয় পুঁজিকে সহায় করে মাজারে আঘাত হানছে। এই অতি উৎসাহী জনতাকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, বাংলাদেশ যেমন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সংখ্যালঘুদের জন্য আবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে, শান্তিপূর্ণ করে তুলতে হবে, তেমনি এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম ইসলামের মধ্যে যে সংখ্যালঘু মুসলিম কমিউনিটিগুলো আছে, তাদেরও এই সরকারকেই সুরক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এই সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একশ্রেণির মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্বের সুযোগ নিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি, বিভ্রান্ত করছে; ক্ষেত্রবিশেষে হেনস্তা করছে। স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা, দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা, আইনের সুশাসন আনা এবং বিচার ব্যবস্থায় সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, দেশে গত পনেরো বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসন সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ যেভাবে ‘মোরাল পুলিশিংয়ের’ মাধ্যমে দেশের আইন-বিচার ব্যবস্থাকে মগের মুল্লুক বানিয়েছিল, সেই নিপীড়নের–জুলুমের বাংলাদেশে কেউ ফিরে যেতে চায় না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন জনগণের সরকার হয়ে উঠতে পারে। এই সরকার যেন রাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের একটি সর্বজনীন এবং মৌলিক কাঠামো প্রণয়ন করতে পারে। যার মাধ্যমে আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবে না এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, দ্রুত দেশে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণতান্ত্রিক, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরতে হবে। তবেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত এবং আত্মত্যাগ প্রকৃত মর্যাদা পাবে।