ফেনীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৬৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্ষতি সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়, ছবি: সংগৃহীত

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়, ছবি: সংগৃহীত

ফেনীতে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ৮৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে আনুমানিক ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানায়, বন্যায় জেলার ৩৫৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বই, আসবাবপত্র, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে আনুমানিক ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিস ও আওতাধীন প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গিয়ে আনুমানিক ৮ কোটি ৭১ লাখ ৫০০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সোনাগাজী ও ফুলগাজী উপজেলায়। এতে ছাগলনাইয়ায় আনুমানিক ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ফেনী সদর উপজেলায় ১ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দাগনভূঞা উপজেলায় ১ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ফুলগাজী উপজেলায় ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০০ টাকা, পরশুরামে ২৭ লাখ টাকা এবং সোনাগাজী উপজেলায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সূত্র জানায়, বন্যায় উপজেলার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের শহীদ মিনার-সংলগ্ন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কার্যালয়ও। কার্যালয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম পানিতে ডুবে আনুমানিক ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে বন্যায় জেলার প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৫০০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে গত ২০ আগস্ট থেকে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ৯২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তারমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৫৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৩টি, মাদরাসা ১২৮টি, কলেজ ৩০টি, কারিগরি, ডিপ্লোমা ও প্রশিক্ষণ-সংশ্লিষ্ট ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়ে গেছে বই ও আসবাবপত্র।

বন্যার পানেত ডুবে আছে বিদ্যালয় ভবন

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোটর পাম্প, কম্পিউটার ও প্রিন্টারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ১০-১২ দিন পর্যন্ত পানি থাকায় মেঝে এবং বারান্দায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের উপযোগী করতে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চয়নিকা চৌধুরী বলেন, বন্যায় পুরো স্কুল ভবন পানিতে ডুবে ছিল। স্কুলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। শ্রেণিকক্ষগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্যায় স্কুলের সবগুলো ক্লাস অফিস কক্ষসহ পানিতে নিমজ্জিত ছিল। স্কুলে গিয়ে রক্ষা করার ও কোন উপায় ছিলনা। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোল হলেও পরে স্কুলই ডুবে যায়।

শহীদ মেজর সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্চনা রানী চক্রবর্তী বলেন, বন্যার সময়ে বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বন্যার পানিতে বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করে আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো স্কুলের আনুমানিক ১৫ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দোলন কৃষ্ণ সাহা বলেন, বন্যায় কলেজের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নিচতলা সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে যায়। বন্যার সময় কলেজ ভবনগুলোতে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে আবার শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছি।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীদের বইখাতা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ বলেন, বন্যায় জেলার ৩৫৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ প্লাবিত হয়। এতে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শত শত বইয়ের সেট নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষে দ্রুতই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসরাত নুসরাত সিদ্দিকা বলেন, ৩৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০৬টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, ভবন, সীমানা প্রাচীর ও মাঠসহ ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।