চারদিকে অথৈ পানি, উঁচু জায়গা দেখে কাঠের বক্সে দাফন

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চারদিকে অথৈ পানি, ছবি: সংগৃহীত

চারদিকে অথৈ পানি, ছবি: সংগৃহীত

‘চারদিকে পানি। মাঝখানে দ্বীপের মতো একটু মাথা উঁচু করে আছে কবরস্থানটি। এই পরিস্থিতিতে কোনো উপায় না পেয়ে কবরস্থানে কিছুটা মাটি খুঁড়ে কাঠ দিয়ে কফিনের মতো তৈরি করে তার ভেতরে মরদেহ রেখে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ বলে জানিয়েছেন গোপিনাথপুর গ্রামের একজন বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম বাচা। 

বাড়ির আঙিনা, ক্ষেত খামার, রাস্তাঘাট সব জায়গা পানিতে ডুবে আছে। এমনকি শুধু কবর নয়, হিন্দুদের শেষ কাজ যেখানে সংস্কার করা হয় সেখানেও পানি। 

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ছবিতে দেখা যায়, চারদিকে পানি থাকায় দাফন করার জন্য কোমড় সমান পানি পাড়ি দিয়ে মরদেহের কফিন ঘাড়ে নিয়ে কয়েকজন মানুষ যাচ্ছেন।

পোস্ট দেওয়া মাত্রই এই ছবিটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়। ছবিটি দেখে জায়গাটা সাতক্ষীরার কোথায়? সেটা খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ছবিতে মৃত ব্যক্তি আব্দুল হাকিম (৭০)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। 

বিজ্ঞাপন

আজহারুল ইসলাম বাচা বলেন, প্রতি বছর ৪-৫ মাস আমাদের পানির নিচে তলিয়ে থাকতে হয়। এই দুর্বিসহ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এখানে বেঁচে আছি। মঙ্গলবার সকালে চাচা মারা গেলে দাফন করা নিয়ে আমরা বিপাকে পড়ে যায়। শেষ সময়ে এক মুঠো মাটি কোথায় দিবো সেটা নিয়ে চিন্তায় থাকি। 

এ ব্যাপারে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, বেতনা নদীর নাব্যতা কম থাকায় একটি গেট খুলে দেওয়ার কারণে গ্রামের ভেতরে পানি প্রবেশ করে। যার কারণে এই এলাকা পানিতে ডুবে থাকে। এলাকাটি নিচু হওয়ায় পানি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। 

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩নং লাবসা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোপিনাথপুর গ্রামটি এই সময় জলাবদ্ধতায় থাকে। সেখানে প্রায় ২০০০ মানুষের বসবাস। প্রতি বছর ৪-৫ মাস জলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে হয় এই এলাকার মানুষের। ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে বসতবাড়ির অধিকাংশ সেনিটেশন ব্যবস্থা। যার ফলে ঘা, চুলকানিসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশু, বয়স্ক, নারীসহ অধিকাংশ মানুষ। জলাবদ্ধতার জন্য বাড়ি বসবাসের অনুপেযোগী হয়ে পড়লে গ্রামের গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয় কয়েকটি পরিবার। কিন্তু তাতেও স্বস্তি মেলেনি তাদের। কারণ বিদ্যালয় মাঠেও হাঁটু পানি। স্কুলের যাতায়াত পথে শিক্ষার্থীদের কোমর সমান পানি।