নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই: ফরহাদ মজহার

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার, ছবি: বার্তা২৪.কম

আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার, ছবি: বার্তা২৪.কম

কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্র হলো রাষ্ট্রের একটা ধরণ। বাড়িটা হলো রাষ্ট্র আর বাড়িটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে নির্বাচন। বাড়ির ঠিক নেই সেখানে কি নির্বাচন করবেন। এইজন্য বারবার বলা হচ্ছে গঠনের কথা। এই সরকারকে এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। না হলে মারাত্মক ভুল হবে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দ্যা ভয়েস অফ টাইমস আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান-২৪: জন আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, আজ তাদের হাতে বিজয়টা চলে গেল মন্তব্য করে তিনি বলেন, তরুণরা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়েছে। ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তরুণরা যেহেতু বুদ্ধিজীবীকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নাই তাই তারা বিজয়ের ফসল তুলে দিয়েছেন ওই চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি) হাতে। এটা বুঝতে হবে। তরুণরা কাজ শুরু করেছে, জনগণ সাড়া দিয়েছে। আজ এই বিজয়টা চলে গেল তাদের হাতে যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।

বুদ্ধিজীবীরা সমাজ বদলায়নি বদলেছে তরুণরা এমন একটি বক্তব্য টেনে ফরহাদ মজহার বলেন, এক তরুণ বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বুদ্ধিজীবী ছাড়া কোনো বড় ঘটনা বা বাংলাদেশকে গঠন করতে পারবো না।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক বলেন, তরুণদের বুদ্ধিজীবীদের নেতিবাচক হিসেবে মনে করলে হবে না। এটার চর্চা না থাকলে সেই রাষ্ট্রে হাজার হাতুড়ি পিটিয়ে গণতন্ত্র আনতে পারবেন না। গণঅভ্যুত্থানকে কখনো পুরানো সংবিধানে ঢোকানো যায় না। আর তার জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) এর ছাত্র রেদোয়ানুর রহমান কবি ও লেখক আহমেদ ছফার একটি লাইন উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছিল তখন বুদ্ধিজীবীরা তা জানতো না। এই শিক্ষার্থীর এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ফরহাদ মজহার বলেন, ২০২৩ সালে আমাদের একটা বই বের হয়েছিল। আমাদের যৌথ প্রযোজনা। বইটির নাম ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন’। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট এটা প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের তরুণদের বড় একটা অংশ সেই বই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সেই বই তারা পড়েছে। সেই বই থেকে তারা দিক নির্দেশনা পেয়েছে।

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। আমরা চেয়েছিলাম পুলিশ সংস্কার করা। তা হয়নি। পুলিশ না আসলে তাদের পলাতক ঘোষণা করা। আগে পুলিশ মাসে লাখ টাকা কামাতো। তারা তো এই দুই চার টাকার জন্য ফিরে আসবে না। আগে থেকেই এটা ভাবা উচিত না। 

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ছাত্ররা একটি নাগরিক কমিটি করেছে কিন্তু প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সেটাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। কারণ তারা বলছে তোমরা নাগরিক কমিটি কর, কিন্তু এই সরকারের ক্ষমতা নিয়ে আরেকটি কিংস পার্টি হইও না। এখন যেটা দরকার সেটি হলো বিপুল বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন। চিন্তার পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা। যে ভিত্তিটা কারো পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। এবং সেই ভিত্তি তৈরি হলে কোনো দেশের পক্ষে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হতে কোনো বাধা থাকবে না।

ভয়েস অফ টাইমসের সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক ওলীউল্লাহ নোমান, জামায়াত ইসলামির পল্টন থানার আমীর শাহীন আহমেদ খান, লেখক ও গবেষক সারোয়ার তুষার, সাংবাদিকনেতা শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।