খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার মেয়ে জান্নাত আরা আক্তার ওরফে শিমুল। ২০০৭ সালে মানিকগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দেন নার্স হিসেবে। এরপর আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র ২/৩ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করেন আরও প্রায় এক দশক। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেন মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে। এরপর হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। অভিযোগের পাহাড় গড়ে ওঠতে শুরু করে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে সেই সম্পর্ক গড়ায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পর্যন্ত। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি নার্স জান্নাত আরা শিমুলকে। সীমাহীন অভিযোগ থাকলেও কেউ কোন শব্দ পর্যন্ত করতে পারেনি নার্স শিমুল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারি যন্ত্রপাতি চুরি করেও রেহাই পেয়েছেন এই দাপুটে এই নার্স।
তবে বিধি বাম হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। কৌশলে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান জান্নাত আরা শিমুল। বেশ কয়েকবার নোটিশ করা হলেও যোগ দেননি তার কর্মস্থল মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে। বিএনপিপন্থী নার্স ও ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়েও মিলেছে না প্রতিকার। টাকার বান্ডিল প্রপোজ করেও যোগ দিতে পারছেন না জেলা হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার মিরেরডাঙ্গা গ্রামের আফজাল শেখের মেয়ে জান্নাত আরা আক্তার। পুরো নাম জান্নাত আরা আক্তার হলেও হাসপাতাল এলাকায় তিনি শিমুল নামে বহুল পরিচিত। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুড়ি ইউনিয়নের কাকজোর গ্রামের আলতাফ হোসেনের বড় ছেলে আতিকুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। নার্স হিসেবে কর্মরত থাকলেও শ্বশুরবাড়ি এলাকায় চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন জান্নাত আরা।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সরকারিভাবে যান হজেও। মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের দাপুটে এই নার্স দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ হিসেবে। যেখানে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতি মাসে লুটে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কোন নার্স বা সংশ্লিষ্ট কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তাকে হাসপাতাল থেকে বদলীর কবলে পড়তে হতো। সরকারি নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে হাসপাতালে গড়ে তুলেন সিন্ডিকেট।
জেলা হাসপাতালের ওটি রুমের ১০টি বায়োপোলার ডায়াথেরামি মেশিন চুরির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতো কিছুর পরেও বহাল তবিয়তে ছিলেন জান্নাত আরা। তবে সরকার পতনের পর ভাগ্যবদলের দাঁড়িপাল্লায় রয়েছেন তিনি। এখনো যোগদান করতে পারেনি তার কর্মস্থল মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নার্স বলেন, শিমুলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার মতো হাসপাতালে কেউই ছিল না। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আফসার চেয়ারম্যানের বিশ্বস্ত থাকায় যা খুশি তাই করতো শিমুল। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে বদলী বা হয়রানির শিকার হতে হতো। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হয়েছিলেন নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সেক্রেটারি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তাকে আর হাসপাতালে দেখা যায়নি বলে জানান তারা।
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহিনুর রহমান বলেন, হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সরবরাহ থাকার পরও সার্জারি বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনদেরকে দিয়ে হাজার হাজার টাকার ওষুধ কেনাতে বাধ্য করতো জান্নাত। সকালের আনা সেই ওষুধ আবার বিকেলেই ফেরত দেওয়া হতো সংশ্লিষ্ট ফার্মেসিতে। এর প্রতিবাদ করায় তাকে চার বার হাসপাতাল থেকে বদলী হতে হয়েছে। শুধু তাই নয় শারীরিকভাবে নাজেহাল করা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়েছে বলে দাবি করেন শাহিন। এসব কিছু হয়েছে জান্নাত ও তার সিন্ডিকেটের ইশারায়।
এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়েও দেখা পাওয়া যায়নি জান্নাত আরা আক্তারের। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জান্নাত আরা বলেন, আমার সম্পর্কে আনিত অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। যন্ত্রপাতির বিষয়টিও মীমাংসা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালের দায়িত্বরত সিনিয়র নার্সদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে জান্নাত আর শিমুলকে অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার পতনের পর থেকে হাসপাতালে অনুপস্থিত জান্নাত আরা। বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করার পরও জান্নাত হাসপাতালে যোগ দেননি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে নদী রক্ষায় অনেক আইন আছে, নদী রক্ষার মূল দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের । এছাড়া আছে বিআইডব্লিউটিএ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু সঠিক ভাবে কেউ দায়িত্ব পালন করে না।
মাঝে-মধ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ২-১ দিনের অভিযান চালানো হয়। তারপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। যুগ যুগ ধরে চলছে এ অবহেলা ও নদীর ওপর অত্যাচার। কর্মকর্তারা থাকেন নিজেদের পদ-পদবী ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত। আর সুশীল সমাজ ব্যস্ত সভা-সেমিনার ও দিবস উদযাপনে।
এদেশের তরুণ প্রজন্মের অফিসার হিসেবে নদী রক্ষায় প্রথম অভিযানে নেমেছিলেন মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। ১৯৯৭ সালে চাঁদপুরে মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ১১০ একর অবৈধ দখলমুক্ত করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এরপর ২০০০ সাল থেকে মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দরে কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার অভিযানে নামেন। ভেঙে দেন বড় বড় শিল্প কারখানা, অবৈধ জেটি ও স্থাপনা ।
কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরে শত শত কিলোমিটার চষে বেড়িয়েছেন মুনীর চৌধুরী। তার দুর্ধর্ষ অভিযানে বহু দেশি ও বিদেশি জাহাজ আটক ও দন্ডিত হয়। বিদেশি জাহাজগুলোর মাধ্যমে নদী ও সমুদ্রে দূষণ ছড়িয়ে যেত। সেগুলো হাতে-নাতে আটক করা হতো। কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরকে মুনীর চৌধুরী রাডারের মতো পাহারা দিয়ে রাখতেন। সেসময় এসব অভিযানে তার সাথে কোন পুলিশ বাহিনী ছিল না। রাতে ও দিনে ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে নদী দূষণ ও দখল বিরোধী অভিযান চালিয়ে তিনি অসংখ্য রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এমনকি চট্টগ্রামের হালদা নদীতেও ২০০৪ সালে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে নদী তীরে কারখানার বর্জ্য দূষণ বন্ধ করেন। এমনকি কর্ণফুলী নদীমুখী বহু কারখানার বর্জ্যের পাইপ লাইন করে দেন। বিশেষত: হাক্কানী পেপার মিল্স, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিল্স, ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, টিএইচপি কারখানা চট্টগ্রাম সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সহ বহু ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করেন। এমনকি কর্ণফুলী নদী দখলকারী বহু অবৈধ ডকইয়ার্ডও মুনীর চৌধুরী ২০০২ ও ২০০৩ সালে উচ্ছেদ করেন।
সেসময় রাজনৈতিক সরকারের বহু মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা তাকে থামাতে পারেনি। এমনকি চট্টগ্রামের ক্ষমতাসীন মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পতেঙ্গার অবৈধ জেটি উচ্ছেদ করেন। এছাড়া বড় বড় রাজনৈতিক শক্তিধরদের অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কর্ণফুলী নদীর গতিপথ রক্ষা করেন। অনেকের স্মৃতি থেকে হয়তো বা হারিয়ে গেছে এসব অভিযানের ঘটনা। এরপর ২০০৩ সালে মুনীর চৌধুরী সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে সারা দেশের নদ-নদীতে চালান সাঁড়াশি অভিযান। সে অভিযানে তদানীন্তন সরকারের বহু মন্ত্রী, এমপি এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী পরিবারের জাহাজ আটক করা হলে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। পুনরায় ২০০৪-২০০৭ সাল পর্যন্ত কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরে সাহসী অভিযান চালিয়ে নদী রক্ষায় মুনীর চৌধুরী অনন্য অবদান রাখেন। কিন্তু ১/১১ সরকারের সময় প্রভাবশালীদের চাপে তাকে বগুড়ায় বদলি করে দেয়া হয়।
২০১০ সালে তাকে পরিবেশ অধিদপ্তরে নিয়োগ দেয়া হলে তিনি পাহাড়, বনভূমি ও কৃষিজমি রক্ষার পাশাপাশি সারাদেশের নদ-নদী রক্ষায় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেন। বাংলাদেশে ইতিহাসে এই প্রথম পরিবেশ আইনে নদী দূষণের জন্য মুনীর চৌধুরী জরিমানা আরোপ শুরু করেন। তার উদ্যোগে ও নেতৃত্বে শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, মেঘনা, ক্ষীরো, সুরমা, বংশী নদ-নদীতে চলে ক্লান্তিহীন অভিযান। বিশেষ করে শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধন যন্ত্র না থাকার অথবা চালু না থাকার অজস্র ঘটনা উদঘাটন করেন তিনি।
২ বছরের ক্লান্তিহীন অভিযানে মুনীর চৌধুরী বড় বড় শিল্প কারখানা গুলোর ৭০ শতাংশ বর্জ্য পরিশোধন যন্ত্র স্থাপনে বাধ্য করেন, যা নদী দূষণ বন্ধে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দিনে-রাতে কারখানাগুলোতে চালানো হতো আকস্মিক অভিযান। হাতে-নাতে ধরা হতো নদী দূষণ। কয়েক ঘণ্টার নোটিশে ভেঙে ফেলা হতো নদীর অবৈধ স্থাপনা। এই অভিযানে বেশির ভাগ দন্ডিত হয় আওয়ামী লীগ সরকারের বহু মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান। এমনকি বসুন্ধরা কাগজ কারখানাকে মুন্সিগঞ্জে ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যুগান্তরের মালিক নুরুল ইসলামের যমুনা ডেনিম কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদ হাসান রিপনের কারখানা কে জরিমানা করা হয় ৫০ লাখ টাকা, ইবনে সিনাকে জরিমানা করা হয় ৫০ লাখ টাকা, মেঘনা নদী দখলের দায়ে মেঘনা গ্রুপের ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, মেঘনা নদীতে ইউনিক গ্রুপের অবৈধ আবাসন উচ্ছেদ করে ৫০ লাখ টাকা, মেঘনা গ্রুপের দখল থেকে মুক্ত করা হয় ৩০০০ একর নদী তীরবর্তী ভূমি।
এসব অভিযান ছিল অবাক করার মতো কাহিনী। জীবন বাজি রেখে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে মুনীর চৌধুরী চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলা ও মন্ত্রীদের। এভাবে ভীত কেঁপে ওঠে নদী দখলদার ও দূষণকারীদের। শেষ পর্যন্ত পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে শুরু হয় মুনীর চৌধুরীর তীব্র দ্বন্দ্ব। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তোলা হয়। মুনীর চৌধুরী মন্ত্রী হাসান মাহমুদের নির্দেশে অভিযান বন্ধ না করে বরং অভিযানের তীব্রতা ও মাত্রা বাড়িয়ে দেন। মুনীর চৌধুরী সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রজন্ম কে নিয়ে গঠন করেন গ্রিন ব্রিগেড নামক সংগঠন, তরুণদের তিনি সরেজমিনে তিনি নদীতে নিয়ে যান, কীভাবে নদী দূষণ ঘটে তা দেখানো হয়। একদিকে চলেছে মুনীর চৌধুরীর অভিযান, অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকতারা ব্যস্ত থাকতো বিদেশ ভ্রমণে। কোনভাবে মুনীর চৌধুরীকে বিদেশ পাঠানো যেত না মর্মে মহাপরিচালক অভিযোগ করতেন।
আজ ২২ সেপ্টেম্বর 'বিশ্ব নদী রক্ষা দিবস' পালিত হচ্ছে, অনেক সভা- সেমিনার হবে, অনেক ব্যানার টাঙানো হবে, অনেক বড় বড় কথা বলা হবে। কিন্তু মুনীর চৌধুরীর মতো নদী রক্ষায় দেশপ্রেমিক ও কর্মবীর মানুষ পাওয়া যাবে না। দূষণকারী ও দখলদারদের সিন্ডিকেট পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করে ২০১২ সালে মুনীর চৌধুরী কে বদলি করে দেন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে। এরপর পরবর্তী কর্মস্থলে দায়িত্বপালন শেষে ২০১৭ সালে দুদকে মহাপরিচালক পদে যোগ দেন মুনীর চৌধুরী । এখানে এসেও তিনি নদ-নদীকে ভুলে যাননি। দুদকে এসে নদী রক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন নতুন উদ্যমে, বিপ্লবী চেতনায়। আবারও গঠন করেন স্পেশাল ব্রিগেড। তাতে ছিল দুদক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ। বিশেষ করে অবৈধ বালু উত্তোলন ও নদী তীর কাটার দায়ে বহু ড্রেজার আটক করা হয়, গ্রেফতার করা হয় নদী দখলদারদের। একদিনে এক শক্তিশালী টিম নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও মেঘনা নদী পয়েন্ট থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ধাওয়া করেন অবৈধ ড্রেজিং ও নদী দখলদারদের । আতঙ্কিত হয়ে পড়ে নদী দখলদাররা।
নদী রক্ষার এ অভিযানে দুদককে সম্পৃক্ত দেখে কেঁপে ওঠে প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও অন্যরা আরও সক্রিয় হয় । দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে তীব্রতা বাড়লে ২০১৯ সালে দুদক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই যবনিকাপাত ঘটে নদী রক্ষার অভিযানে।
নদী রক্ষার শপথ নেওয়া দরকার, নদী দিবসে কথার ফুলঝুড়ি না ছড়িয়ে কাজ বেশি প্রয়োজন। মরহুম নৌ পরিবহন মন্ত্রী কর্নেল অব আকবর হোসেনের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে, 'মুনীর চৌধুরী বাংলাদেশে একজনই। তাকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দেশবাসী খুঁজে নেবে।'
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় দেখা করতে যান তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই সাংবাদিক।
খালেদ জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মুশফিকুল আনসারী বলেন, উনি যে অসুস্থ আপনারা সবাই জানেন। আমি বাংলাদেশে এসেছি, দুই দিন পরে চলে যাব। তাই উনাকে দেখতে এসেছি।
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সঙ্গে কাজ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই সাংবাদিক বলেন, আমি উনার খুব স্নেহধন্য ছিলাম। তাই কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে নয়, ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে এসেছি।
খালেদ জিয়া অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে তিনি খুব শক্ত আছেন বলে উল্লেখ করেন মুশফিকুল।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ পাঠানোর সরকারি নির্দেশনায় প্রভাব পড়েছে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড ইলিশ মোকামে। বিগত দিনে প্রতি দুর্গাপূজায় এই মোকাম থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তা বন্ধ ছিল। যদিও এতে কম দামে ইলিশ খেতে পারেননি বরিশালের মানুষ।
স্থানীয় নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও দাম কমছিলো না তেমন একটা। তবে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমতির খবরে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পোর্ট রোড মোকাম। স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে মাছ বিক্রিতে আগ্রহ হারিয়ে বিক্রেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারতে রপ্তানির।
ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয় পর্যায়ে ইলিশ বিক্রির তুলনায় রপ্তানি অনেকটা সহজ। এক সাথে বেশি বিক্রি করা যায়, তাই ঝামেলাও অনেক কম। সংরক্ষণে খরচও কম। বিগত বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমান কোনো নির্ধারিত ছিল না, এবার তা ৩ হাজার টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানের রপ্তানিকারকদের সাথে যোগাযোগ করছেন। যারা অনুমতি পাবেন রপ্তানি করার তাদের মাধ্যমে এখন তারা মাছ পাঠানোর পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সূত্র মতে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয় শনিবার। রপ্তানিকারকদের আবেদনের বিপরীতে নির্ধারিত শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী ইয়ার হোসেন সিকদার বলেন, শনিবার পোর্ট রোড মোকামে প্রায় হাজার মণ ইলিশ মাছ বেঁচা কেনা হয়েছে। শুক্রবার একটু কম এসেছে। তাও প্রায় ৯০০ মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
তিনি জানান, কয়েকদিন আগে সাগর উত্তাল ছিলো। তাই জেলেরা সাগরে যেতে পারেনি। সাগরে মাছ না আসায় ও চাহিদা বেশি থাকায় দাম কমেনি। জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে গেছে। তারা ফিরে এলে মাছের দাম কমবে বলে আশাবাদ তার।
স্থানীয় বাজারে বিক্রির ব্যয় রপ্তানির তুলনায় বেশি জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, ভারতে রপ্তানির খবর পেয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। কারণ স্থানীয় বাজারে বিক্রির ব্যয় অনেকটাই বেশি। এখন তারা রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মাছ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু তিনিই নন, মোকামের সকল আড়ৎদার ও কমিশন এজেন্টরাই এই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
মোকামের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে মোকামে সিংহভাগ ছোট সাইজের ইলিশ। শনিবার পোর্ট রোড পাইকারি বাজারে দেড় কেজি সাইজের ইলিশ মাছ দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি এক হাজার ৮শ, এক কেজি সাইজের মাছ এক হাজার ৭শ ও এক কেজির নীচে এলসি সাইজ এক হাজার ৬শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতে মাছ রপ্তানির খবরে কিছুটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। পোর্ট রোড বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, চারটি মাছ কিনেছি। সাতশ-আটশ গ্রাম ওজন সাইজের ওই মাছ প্রতি কেজি এক হাজার ৫০০ টাকা দরে ক্রয় করেছি। বর্তমানে ইলিশ মাছের ভরা মৌসুমে মাছের দাম যত কম হওয়ার কথা ছিলো, তা হয়নি। এরমধ্যে ভারতে পাঠানো হলে আর মাছ মিলবেনা স্থানীয় ক্রেতাদের ভাগ্যে। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের বেশি দামে কিনতেও সমস্যা নেই। তবে দাম অব্যাহত থাকলেও মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের কপালে ইলিশ জুটবেনা।
দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ লোক তামাক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছেন ১ লাখ ৬১ হাজার জন মানুষ। প্রাণঘাতী এই নেশাদ্রব্যের হাত থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তরুণ সমাজ। একই সঙ্গে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন তরুণ সমাজ।
শনিবার (২১ সেপ্টেবর) বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বেসরকারী নারী উন্নয়ন সংস্থা ‘নারী মৈত্রী’র আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪০ জন তরুণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে তরুণ সদস্যরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি তুলে ধরেন।
কর্মশালায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষের প্রাণ ঝরছে। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে তরুণেরা তামাক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করবে। পাশাপাশি নিজের পরিবারকে তামাকের প্রভাবমুক্ত রাখবে এবং অন্যদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যাতে মন্ত্রীসভায় সংশোধিত আইনটি দ্রুত উত্থাপন করে সে লক্ষ্যে সহযোগিতা করা এবং অনুমোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো দাবি জানানোর জন্য এই তরুণ সমাজকে কাজ করার আহবান জানান। এছাড়াও তামাকের বিরুদ্ধে সংশোধিত আইন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ভাবে উপস্থাপন করার আশ্বাসও দেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী এ আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান যুগে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই। এসময় তরুণ সমাজকে ধূমপান ও তামাক গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে তামাকের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখারা আহবান জানান। এছাড়াও তামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে নারী মৈত্রীর পাশে থাকার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাকের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান থেকে রুখে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেরে-ই- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তনুশ্রী হালদার বলেন, দেশে ব্যাপকহারে ই-সিগারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভেপিং এর ব্যবহারের প্রবণতা তরুণদের মাঝে বেশি দেখা যায়। যা দেশের জন্য অশনিসংকেত। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এরইমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, সুস্থ প্রজন্ম বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে তামাক এবং তামাকজাত পণ্যের বিস্তার হয়েছে ভয়াবহভাবে। দেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং এর নিচে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুই ধূমপায়ী। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি।
নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সামঞ্জস্য আনতে অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মশালায় বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া, কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা এবং সিটিএফকের এডভোকেসি ম্যানেজার আতাউর রহমান।
কর্মশালায় ১৬টি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করবেন বলে জানান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন এবং তামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে এগিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জাগান তারা।