প্রতিমার উপকরণের বাড়তি দাম, মজুরি নিয়ে কারিগরদের চিন্তা

  • বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রংপুরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে মন্দিরগুলোতে। কারিগরদের সুক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় প্রতিটি প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে প্রথম ধাপে।

দুর্গা,স্বরসতী,গনেশ,কার্তিক,লক্ষী,অসুর ও সিংহের প্রতিমায় রূপ দিতে আগে থেকে অর্ডার না পাওয়ায় প্রথম ধাপের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কেউ খড় ও সুতলি পেঁচিয়ে কাঠামো দাঁড় করছেন, কেউবা মাটি মিশ্রণ করছেন, আবার কেউবা খড়ের উপর মাটির প্রলেপ দিতে ফুসরত পাচ্ছেননা। রংপুর নগরীর বেশ কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

বিজ্ঞাপন

মন্দিরগুলোতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ছে কারিগরদের ব্যস্ততা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছরের মত এবারও বড় প্রতিমার বাজেট ৫০-৫৫ হাজার টাকা এবং ছোট প্রতিমাগুলো ২০-২২ হাজর টাকা। এবার প্রতিমায় বাড়েনি বাজেট, তবে তৈজসপত্রের বাড়তি দামে মজুরি নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে কারিগররা। তাই এই দামে কাজ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ও বাহিরের দক্ষ কারিগরও কাজে লাগাতে পারছেন না তারা। নিজেদের মজুরি ও প্রতিমা তৈরিতে বাৎসারিক লক্ষ্য পূরণে ব্যাহত হচ্ছেন কারিগররা। সবমিলিয়ে যেন কপালে ভাঁজ পরেছে তাদের।

খড় ও সুতলি পেঁচিয়ে কাঠামো দাঁড় করাচ্ছেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

আনন্দময়ী মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কারগিরর ভবেশচন্দ্র পাল বলেন,‘পাকিস্তান আমল থাকি প্রতিমা বানাই। হামার না পোষাইলেও মায়ের ভক্তি আর সন্তুষ্টির আগোত ১৫-১৬ টা প্রতিমা বানায়া দিশা আছলোনা। এ্যালা ৭-৮ টা প্রতিমার কাজ ছাড়া আর নাই। জিনিসপাতির দাম দিয়ে এবার আর পোষপার নয়। ধরা নাগে এবার হামার মজুরি নাই। বগুড়াত আগোত বানাছি ৩ টা এবার ১ টা। প্রতিমার বাজেট বাড়ে নি কিন্তু খরচা মেলা বাইড়ছে। ১ ট্রাক এঁটেল আর কুমার মাটি গতবার কিনছোং ৬ হাজার টাকা,এবার ৮ হাজার। বাঁশ আছিল ২৫০ টাকা এলা হইছে ৫০০-৫৩০ টাকা। ১০০ খড় আছিল ৬০০ টাকা এলা কেনা কায়ছে ১হাজার টাকা। সউগ কিছুর দামে বাড়তি। হামার গুলার মজুরিই না উঠপে। এইজনতে বেশি কারিগর কামোত নিবার পাওছি না।’

কাঠামোতে মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ করছেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

কারিগর রজিত চন্দ্র পাল বলেন, ‘মন্দিরের সামনে ভাঙচুর হইছে, অনেক নেতার বাড়ি লুটপাট ক্ষয়ক্ষতি হইছে তারা দেশে না থাকায় বেশ কিছু মন্দিরে পূজা হবেনা। তাই আমাদের কাজও অনেক কম। গতবারও কাজের চাপে বাহির থাকি ১২-১৪ জন কারিগর আনছি এবার শুধু দক্ষ দুইজনকে আনা হইছে। একটা করি মন্দিরের বড় প্রতিমা বানাইতে ৫০ হাজার টাকা পাইলে খরচ বাদে দুই ভাগের এক ভাগ লাভ হয়। কিন্তু এবার প্রতিমায় টাকা বাড়েনি নাই। জিনিস পত্রের দাম মেলা। না পারি কাজ করাই নাগেছে। মায়ের পূজা হইবে আশীর্বাদে যদি সারাবছর ভাল থাকা যায়।’

সন্তুষ চন্দ্র রায়,মুকুল রায়সহ বেশকয়েকজন কারিগর বলেন, হামরা যদি মায়ের প্রতিমা না বানাই তাইলে তো পূজা হবে না। মা অসন্তুষ্ট হবে,আমাদের আয় -রুজি বন্ধ হবে। এইজন্যে মজুরি দিয়া না পোষাইলেও কাজ করি মা অন্য দিকে গতি করবে৷