‘শহীদ ও আহতদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে’
প্রত্যেক শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে যারা কাতরাচ্ছেন তাদেরকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে, দেশের জন্য যারা রক্ত দিয়েছেন তার পরিবার আবার টাকা দিয়ে চিকিৎসা ওষুধ কিনবে, এটা মেনে নেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষ্যে 'স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ও বর্তমান করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন "লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস" সেখানে এসব কথা বলেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের হাসপাতালে অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আজকে এখানকার পরিবেশ খুবই বেদনা বিধুর। খুবই কঠিন মূহুর্ত যখন পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তারা তাদের জীবন দিয়েছে। এই সামান্য উপঢৌকন তাদের পরিবারের জন্য কিছু না।
হাসাপাতালের চিকিৎসারত চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনসারী। তিনি বলেন, আপনারা হয়তো এখানে বসে অনেক কথা বলছেন, অনেকের মনে সুপ্ত বাসনা পূরণ করতে চেষ্টায় আছেন। আমি গতকাল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখে চোখের পানি ধরা রাখা যায় না। হাত, পা নেই, অঙ্গহানি ও পঙ্গু হয়েছে অনেক ছাত্র জনতা। দু’পা নেই, কেটে ফেলতে হয়েছে, উপর হয়ে শুয়ে আছে। উল্টে উঠে একটি হাসি দিয়ে বললো, " ব্রাদার উই আর মেরিট"। কি ভালবাসা আর দেশ নিয়ে, কি প্রেম তাদের দেশের প্রতি।
নিহত গাজীপুর ভিত্তিক দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার সাংবাদিক শাকিল হোসেনের বাবা বলেন, আমার ছেলের লাশ দিতে চায়নি, পরে দেয় কিন্তু জানাজার জন্য সময় দিতে চায়নি। পরে জনগণের চাপে সময় দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।
নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বাবা তার ছেলের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আপনাদের মত আমার ছেলেও সাংবাদিক ছিল। আমার ছেলে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। আমি যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যার বিচার চেয়ে মামলা আটক করে পুলিশ, সেখান থেকে কোর্টে মামলা করেছি কিন্ত পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেনি।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতিও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এত কম সময়ে, এত জীবন দান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। স্বৈরাচারের সময় প্রতি মাসে ২৫-৩০ জন করে সাংবাদিক নির্যাতন ও নিগৃহের শিকার হয়েছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, একটানা এক মাস ৫ দিনের আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এই আন্দোলনে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের সাথে শতশত শহীদের সাথে আমাদের ৫ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। সাংবাদিকরা আন্দোলন করতে যায় নি গিয়েছিলেন শুধু আন্দোলনের খবর সংগ্রহে জন্য। তারাও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এই শহীদ সাংবাদিকদের পরিবারের জন্য কি আর করত পারবো? তবে সান্ত্বনা দেয়ার মত কিছু নেই আমাদের কাছে। তবে একটি দাবি করছি, প্রত্যেক শহীদদের নামে যারা যে এলাকায় শহীদ হয়েছেন তাদের নামে রাস্তা ও স্মৃতিফলক স্থাপন করতে হবে।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন - প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ,প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া,প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান,ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ডিইউজের সহ সভাপতি মোহাম্মদ বাছির জামাল প্রমুখ।