‘মুরুব্বি, মুরুব্বি উঁহু, উঁহু’ বলায় কিশোরীর মাথায় গরম পানি নিক্ষেপ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বহুল আলোচিত ‘মুরুব্বি, মুরুব্বি, উঁহু, উঁহু’ বলায় মাথায় গরম পানি ঢেলে এক কিশোরীকে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে বৃদ্ধার বিরুদ্ধে। গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ওয়াইজারো বাড়িতে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
গুরুতর আহত হওয়া ১২ বছরের কিশোরী পপি আকতার এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। পপি আকতারের বাবা মফিজুর রহমান ৯ বছর আগে এবং মা বেবী আকতার সাত বছর আগে মারা গেছেন। মা-বাবা হারা ওই কিশোরী নানাবাড়িতে বসবাস করে আসছিল।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকেলে সমবয়সীদের সঙ্গে পপি নানাবাড়ির উঠানে খেলছিল। এ সময় এয়ার মোহাম্মদ নামের পপির চাচাতো নানা সম্পর্কের এক বৃদ্ধ তাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এয়ার মোহাম্মদকে দেখে খেলাধুলা করা শিশু-কিশোররা সবাই ‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু উঁহু’ করে দুষ্টুমি শুরু করে। বিষয়টি এয়ার মোহাম্মদের পছন্দ হয়নি। তবে ক্ষুব্ধ এয়ার কোনো কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর এয়ার মোহাম্মদের ছোট ভাই মৃত আবুল কালামের স্ত্রী ৬০ বছরের সায়েরা খাতুন গরম পানি নিয়ে উঠানে এসে একপর্যায়ে কিশোরী পপি আকতারের মাথায় ঢেলে দেন। এতে পপি চিৎকার দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করে। তার কান্না শুনে এলাকার লোকজন এসে পপিকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে বাড়ির পুকুরের পানিতে ভেজান। এরপর পপিকে আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। কিন্তু পপির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পপির এমন পরিণতিতে ভেঙে পড়েছেন তার নানা আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার নাতিটার মা-বাবা কেউ নেই। মা-বাবাহারা মেয়েটিকে আমরা লালন-পালন করছিলাম। বাড়ির উঠানে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলার সময় চাচাতো ভাই এয়ার মোহাম্মদের সঙ্গে নানা হিসেবে দুষ্টুমি করেছিল সে। সেজন্য এভাবে আমার নাতিটিকে গরম পানিতে ঝলসে দিতে হবে?’
তবে অভিযুক্ত এয়ার মোহাম্মদের পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পপির অবস্থা গুরুতর দেখেই এয়ার মোহাম্মদের পরিবার আত্মগোপনে চলে গেছে।
এই বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর পরই কিশোরীর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।’
বেশ কিছুদিন আগে একটি মাহফিলে ইসলামিক বক্তা মাওলানা মোস্তাক ফয়েজি সামনে বসা এক প্রবীণকে উদ্দেশ করে ‘মুরুব্বি, মুরুব্বি উঁহু, উঁহু’ কথাটি প্রথম বলেন। এরপর ফেসবুকে ভাইরাল হয় সেটি। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্টে নেটিজেনদের মুখে ছড়িয়ে পড়ে কথাটি। এখন দেশে তো বটেই বিদেশের অনেকেও ‘মুরুব্বি মুরুব্বি’ অনুসরণ করে ভিডিও করতে দেখা যাচ্ছে।