সুনামগঞ্জে তীব্র ভাঙন, বিলীন শতাধিক বসতবাড়ি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সুনামগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নদী ভাঙনের কবলে মানব বসতি, ছবি: সংগৃহীত

নদী ভাঙনের কবলে মানব বসতি, ছবি: সংগৃহীত

দফায় দফায় বন্যার পর পানি কমার সাথে সাথে সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, সড়ক। জীবন ঝুঁকি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী মানুষ। স্ত্রী-সন্তানদের রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের পুরুষ সদস্যরা।

জেলার ১১টি স্থানের ৮ কিলোমিটার জায়গা ভাঙন কবলিত হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখনো কাজ শুরু করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বিজ্ঞাপন

সীমান্ত নদী সুরমার একপাড় সুনামগঞ্জ পৌর শহর। উত্তর প্রান্তে প্রান্তে সুরমা ইউনিয়নের সদরগড় গ্রাম। ভাঙনের খবরে সেখানে যেতেই একের অপর এক অসহায়ত্বের গল্প স্থানীদের। নদীর পানিতে পানিতে ঢিল মেরে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া নিজেদের বসতঘরের জায়গা দেখাচ্ছিলেন যুবক মিজানুর রহমান। তার ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমান নদীর কিনার থেকে অন্তত ৫০ মিটার গভীরে ছিল তাদের বসত ঘর। সুরমার গর্ভে বসতভিটা হারিয়ে মিজানের পরিবার চলে গেছে অন্যত্র। তার মতো আরও শতাধিক পরিবার ভাঙনের স্বীকার হয়ে চলে গেছেন গ্রাম ছেড়ে।

গৃহবধূ রিতা জানান, নদীর পাড় থেকে দুশো ফুট দূরে আমার ঘর ছিল। এক বছর আগে আমার ঘর নদীতে বিলীন হয়। পরে এখানের খালি জায়গায় এসে ঘর বানাই। এক মাস হয় এই ঘরও নাই। বাচ্চা কাচ্চা লইয়া যাওয়ার জায়গা নাই এখন অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের দেখার মতো কেউ নেই।

এমন পরিস্থিতিতেও জীবন ঝুঁকি নিয়ে এখনো বসবাস করছে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। ঘুমের মধ্যে নদী গহব্বরে চলে যাওয়ার আতঙ্কে স্ত্রী-সন্তানদের রাতভর পাহারা দেন পুরুষরা। নদীগর্ভে চলে গেছে চার গ্রামের একমাত্র সড়কটিও। অব্যাহত নদী ভাঙনে দিশেহারা তারা।

বয়োজ্যেষ্ঠ আনিস উল্লাহ বলেন, আমাদের পরিস্থিতি এখন খুব খারাপ। অনেকে চলে গেছে গ্রাম ছেড়ে। আমরা যে কজন আছি তারাও আর থাকতে পারবো না। কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের ঘর ভেঙে যাবে।

শাহ আবুরন বলেন, সুরমা নদীতে বালুর কোন অস্তিত্ব নাই। ঢলে কিছু বালু আসে। সেই বালু অবৈধ ভাবে তুলে আমাদের ঘরবাড়ির সাপোর্ট দুর্বল করে দিয়েছে তারা। তাই আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙতেছে। এখন যারা আছি আমরা গ্রামে তারা (পুরুষ) কেউ রাতে ঘুমাই না। রাত জেগে স্ত্রী-সন্তানদের পাহারা দেই।

ভাঙনের দুশ্চিন্তা নিয়ে দিনযাপন করছে নদীপাড়েরর মানুষরা, ছবি: সংগৃহীত

শাহ আবু আবরণের মা বলেন, আমরা খুব অসহায়ের মতো দিন পার করতেছি। আমাদের নাতি-নাতনী নিয়ে আতঙ্কে থাকি। কখন ঘর সহ নদীতে চলে যাই আমরা।

বছরের পর বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসে গিয়ে কোন আশার বাণী না মেলার অভিযোগ জনপ্রতিনিধির। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আফসান পারভেজ বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমাদের গ্রাম ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। যখনই ভাঙন ধরে মানুষ আমার কাছে যায়। আমি জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এমপি সবার কাছে যাই। আমাদের কষ্টের কথা বলি। সবাই শুধু দেখছি বলেই শেষ করে দেয় কেউ কাজ করায় না। এখনো যদি কাজ করা যায় যে কয়টি বাড়ি ঘর আছে সেগুলো রক্ষা পেত। অনেক মানিক গৃহহীন হওয়া থেকে বেঁচে যেত।

নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বন্যার পর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নদী ভাঙন চিহ্নিত করে আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন জায়গায় কাজ শুরু হয়নি। কতৃপক্ষের অনুমতি পেলে কাজ শুরু হবে।